শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে বাংলার ঘরে ঘরে শীতের পিঠা তৈরীর উৎসব শুরু হয়। বিভিন্ন স্বাদের, বিভিন্ন ধরনের পিঠা ভোজন রসিকদের রসনা তৃপ্তিতে আবহমানকাল ধরেই প্রচলিত হয়ে আসছে। গ্রামে এখনো ঘরে ঘরে শীতের পিঠা তৈরী হলেও শহরের যান্ত্রিকতার ভীড়ে শীতের পিঠা হারিয়ে গেছেই বলা যায়। অনেকে আবার এসব ঐতিহ্যবাহী পিঠার প্রস্তুত প্রণালীর জন্য তৈরী করতে পারেন না। এই শীতে কেউ যেন মজাদার শীতের পিঠা থেকে বাদ না যায় তাই সবার কথা ভেবেই আমাদের এই প্রচেষ্টা।
রেসিপি ০১: শীতের পিঠা – নারকেলের তিল পুলি
উপকরণঃ ভাজা তিলের গুঁড়া আধা কাপ, খেজুরের গুড় ১ কাপ, এক চিমটি এলাচ গুঁড়া, দারচিনি ২-৩টা, আতপ চালের গুঁড়া ২ কাপ, পানি দেড় কাপ, লবণ স্বাদমতো, ভাজার জন্য তেল দুই কাপ।
প্রণালীঃ
কুরানো নারকেলে গুড় দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রান্না করতে হবে। একটু শক্ত হয়ে এলে এলাচ, তিল ও চালের গুঁড়া ছড়িয়ে আরও একটু রান্না করতে হবে। তেল উঠে পুর যখন পাকানোর মতো শক্ত হবে, তখন নামিয়ে ঠান্ডা করে লম্বাভাবে সব পুর বানিয়ে রাখতে হবে। এবার চালের গুঁড়া সেদ্ধ করে ভালোভাবে চুলার আঁচ কমিয়ে নাড়তে হবে, যাতে খামিরে কোনো চাকা না থাকে।
একটু ঠান্ডা হলে পানি ছিটিয়ে ভালো করে ছেনে রুটি বানাতে হবে। রুটির এক কিনারে পুর রেখে বাঁকানো চাঁদের মতো উল্টে পিঠে আটকে দিতে হবে। এবার টিনের পাত অথবা পুলিপিঠা কাটার চাকতি দিয়ে কেটে নিতে হবে। কিনারে মুড়ি ভেঙে ও নকশা করা যায়। গরম তেলে মচমচে করে ভাজতে হবে।
রেসিপি ০২: শীতের পিঠা – চিতই পিঠা
উপকরণঃ চালের গুড়া ২ কাপ, পানি ও লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালীঃ
চালের গুড়ায় পানি মিশিয়ে তরল মিশ্রণ তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন বেশি পাতলা বা বেশি ঘন যেন না হয়। তবে পাতলা গোলা করলে পিঠা সুন্দর নরম হয়। যে পাত্রে পিঠা ভাজবেন সেটাতে সামান্য তেল মাখান। এখন পাত্রটি হালকা গরম করে ২ টেবিল চামচ চালগোলা দিয়ে ঢেকে দিন। ২-৩ মিনিট পর পিঠা তুলে ফেলুন। বিভিন্ন রকম ভর্তা, ভুনা মাংস দিয়ে এই পিঠা খেতে বেশ মজা।
রেসিপি ০৩: শীতের পিঠা – ভাপা পিঠা
উপকরণঃ সিদ্ধ চালের গুঁড়া ২ কাপ, ভেঙে নেওয়া খেজুরের গুড় ১ কাপ, নারিকেল কোরানো ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালীঃ
চালের গুঁড়িতে লবণ মিশিয়ে হালকা করে পানি ছিটিয়ে ঝুরঝুরে করে মেখে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যেন দলা না বাঁধে। এবার বাঁশের চালনিতে চেলে নিন। ভাপা পিঠা বানানোর হাঁড়িতে পানি দিন। এবার মুখ ছিদ্র ঢাকনা বসিয়ে আটা দিয়ে আটকে দিন। যাতে বাষ্প বের হতে না পারে। চুলায় বসিয়ে জ্বাল দিন। পাতলা সুতার দুই টুকরা কাপড় ও ছোট দুটি বাটি নিন। এবার বাটিতে চালা চালের
গুঁড়ি দিয়ে মাঝখানে গর্ত করে গুড় ও নারিকেল দিন। আবার চালের গুঁড়া দিয়ে ঢেকে দিন। এবার এক টুকরা পাতলা সুতির কাপড় ভিজিয়ে পিঠার বাটি ঢেকে উল্টে মুখ ছিদ্র ঢাকনার ওপর পিঠা রেখে সাবধানে বাটি খুলে পিঠা ঢেকে দিন। সিদ্ধ হলে পিঠা উঠিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
বি. দ্র. ভাপা পিঠা তাজা গুঁড়ি অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে গুঁড়ি করে বানালে ভালো হয়। শুকনা গুঁড়ি দিয়ে বানালে অনেকক্ষণ আগে গুঁড়ি পানি ছিটা দিয়ে রেখে পরে বাঁশের চালানিতে চালতে হবে।
রেসিপি ০৪: শীতের পিঠা – দুধচিতই
উপকরণঃ চালের গুড়া ২ কাপ, পানি ও লবণ পরিমাণমতো, ১ লিটার দুধ, গুড় ২ কাপ ।
প্রণালীঃ
চালের গুড়ায় পানি মিশিয়ে তরল মিশ্রণ তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন বেশি পাতলা বা বেশি ঘন যেন না হয়। তবে পাতলা গোলা করলে পিঠা সুন্দর নরম হয়। যে পাত্রে পিঠা ভাজবেন সেটাতে সামান্য তেল মাখান। এখন পাত্রটি হালকা গরম করে ২ টেবিল চামচ চালগোলা দিয়ে ঢেকে দিন। ২-৩ মিনিট পর পিঠা তুলে ফেলুন। ১ লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে সামান্য ঘন করুন।
আলাদা করে দেড়কাপ পানিতে ২ কাপ গুড় জ্বাল দিয়ে গুড়ের সিরা তৈরি করুন। সিরায় পিঠা ছেড়ে চুলায় দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বাল দিন। ঠাণ্ডা হলে দুধ দিয়ে কিছু সময় ভিজিয়ে রাখুন।সকালে এই পিঠা খেতে মজা।
রেসিপি ০৫: শীতের পিঠা – দুধপুলি
উপকরণঃ চালের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম, দুধ ২ লিটার, খেজুরের গুড় ২ কাপ (স্বাদমতো), নারকেল কোরানো ২ কাপ, গুড় ২ কাপ
প্রণালীঃ
দুধ ও গুড় জ্বাল দিয়ে ঘন করতে হবে, নারকেল ও গুড় জ্বাল দিয়ে পুর তৈরি করতে হবে। চালের গুঁড়া সিদ্ধ করে ভালো করে মেখে নিতে হবে, এবার ছোট ছোট লুচি কেটে গোল করে মাঝখানে পুর ভরে ছোট ছোট পুলি পিঠা তৈরি করতে হবে। চুলায় দুধ থাকা অবস্থায় পিঠা দিয়ে অল্প জ্বাল দিয়ে পিঠা হলে নামিয়ে গরম অবস্থায় পরিবেশন করুন। ঠাণ্ডা করেও খাওয়া যায়।
রেসিপি ০৬: শীতের পিঠা – দুধে ভেজানো হাতকুলি
উপকরণঃ ঘন দুধ ২ লিটার, রান্না করা নারকেলের পুর ২ কাপ, খেজুরের গুড় মিষ্টি অনুযায়ী, পানি ১ কাপ, আতপ চালের গুঁড়া দিয়ে বানানো সিদ্ধ খামি ২ কাপ, কাজু কিশমিশ পরিমাণমতো, মাওয়া আধা কাপ, এলাচ গুঁড়া সামান্য
প্রণালীঃ
হাতে ছোট ছোট পুরির আকারে খামির নিয়ে একটু গর্ত করে তাতে পুর ভরে ভালোভাবে আটকে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। পিঠার মুখ ভালো করে না আটকালে দুধে ভেজালে ভেঙে যেতে পারে। এভাবে সব পিঠা বানানো হলে চুলায় গুড়-পানি দিয়ে ১০ মিনিট ফোটাতে হবে।
আস্তে আস্তে ঘন দুধ দিয়ে আরও দু-তিন মিনিট রেখে ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে পিঠা ছড়িয়ে দিতে হবে। পিঠা সিদ্ধ হয়ে গেলে মাওয়া দিয়ে মাখাতে হবে। সুন্দর বাটি বা ডিশে বেড়ে ওপরে বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
রেসিপি ০৭: শীতের পিঠা – নকশি পিঠা
উপকরণঃ চালের গুঁড়া ৪ কাপ, পানি তিন কাপ, লবণ সামান্য, ঘি ১ টেবিল চামচ, ভাজার জন্য তেল ৫০০ গ্রাম
সিরার জন্য: গুড় ১ কাপ, চিনি ১ কাপ, পানি ২ কাপ জ্বাল দিয়ে সিরা বানাতে হবে।
প্রণালীঃ
পানিতে লবণ ও ঘি দিয়ে চুলায় দিন। ফুটে উঠলে চালের গুঁড়া দিয়ে সেদ্ধ করে কাই বানাতে হবে।
আধা ইঞ্চি পুরু করে রুটি বানিয়ে পছন্দমতো আকার দিয়ে কেটে নিন। খেজুর কাঁটা দিয়ে রুটিতে পছন্দমতো নকশা করুন।
এবার প্রথমে ডুবোতেলে ভেজে নিন। কিছুক্ষণ পর আবার তেলে ভেজে সিরায় দিয়ে ১ মিনিট রেখে তুলে নিন। ঠাণ্ডা হলে পরিবেশন করুন।
রেসিপি ০৮: শীতের পিঠা – লাল পুয়াপিঠা
উপকরণঃ আতপ চালের গুঁড়া ৩ কাপ, মিহি করে বাটা নারকেল আধা কাপ, ময়দা ১ টেবিল-চামচ, বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ, খেজুরের গুঁড় বা রস মিষ্টি অনুযায়ী, পানি পরিমাণমতো, ডিম ২টি, এক চিমটি লবণ এবং তেল ১ কাপ।
প্রণালীঃ
তেল ছাড়া সবকিছু মিশিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এবার তেল গরম হলে গোল চামচে গোলা নিয়ে একটা একটা করে ভেজে তুলুন।
রেসিপি ০৯: শীতের পিঠা – মালপোয়া
উপকরণঃ খেজুর রস ১ কেজি, ময়দা ২৫০ গ্রাম, ক্ষীর ১ কাপ, খাবার সোডা ১ চিমটি, মৌরি আধা চামচ, লবণ স্বাদমতো, ঘি ২৫০ গ্রাম।
প্রণালীঃ
রস জাল দিয়ে ঘন করে নিন। ময়দা, ক্ষীর, মৌরি, খাবার সোডা, লবণ ও পানি দিয়ে ঘন গোলা তৈরি করুন। চুলার হাড়িতে দেওয়া ঘি গরম হলে পিঠা ভেজে গরম গরম খেজুর রসে চুবিয়ে নিন।
রেসিপি ১০: শীতের পিঠা – তেল পিঠা
উপকরণঃ চালের গুঁড়ো, খেজুর গুড়, কালি জিরা (পরিমাণ মতো), লবণ (স্বাদ অনুযায়ি), গরম পানি, তেল
প্রণালীঃ
পানি ভালো মতো ফুটিয়ে তাতে সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয় খামি তৈরি করে নিন। আপনি চাইলে ডিমও ভেঙ্গে দিতে পারেন। এতে পিঠার স্বাদে ভিন্নতা আসবে। খামির ভালো করে ফেটে নিয়ে গরম তেলে ভাজুন। এই পিঠা ডুবো তেলে ভাজতে হয়। তেলের ভিতরে পিঠা গাঢ় বাদামী রঙ ধারণ করলে নামিয়া তা গরম গরম পরিবেশন করুন।
অনেকে এই পিঠা দুধের সিরায় ভিজিয়ে খেতেও পছন্দ করেন। এ জন্য অবশ্য আগে দুধ ও গুড় এক সঙ্গে করে জাল দিয়ে নিতে হয়। পিঠা ভাজার পর তা দুধে কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়।
রেসিপি ১১: শীতের পিঠা – দুধ পুলি পিঠা
উপকরণঃ আড়াই কাপ চালের গুঁড়া, আধা কাপ ময়দা, দেড় কাপ পানি, আধা চা-চামচ লবণ, আধা চা-চামচ ঘি, দুধ দেড় কেজি, ১ কাপ চিনি (স্বাদ মতো), ১/৩ কাপ গুঁড়াদুধ (ইচ্ছা), ৪ টেবিল-চামচ কনডেন্সড মিল্ক, দেড় কাপ নারিকেল কুড়ানো, এলাচ ২,৩টি।
প্রণালীঃ
পিঠার ভেতরে পুরের জন্য দেড় কাপ নারিকেল কুড়ানো (সামান্য রেখে দিতে হবে পরে দুধের মধ্যে দেওয়ার জন্য)। এখন বাকি নারিকেলের সঙ্গে পাঁচ থেকে ছয় চামচ চিনি দিয়ে ফ্রাইপ্যানে সাত থেকে আট মিনিট ভেজে নিতে হবে (নারিকেলের পানি শুকাতে যতক্ষণ লাগে) এই পুর পিঠার ভেতরে দিতে হবে।
দুধের সঙ্গে গুঁড়াদুধ, চিনি, কনডেন্সড মিল্ক আর এলাচ মিশিয়ে জ্বাল দিন। পিঠা বানানো হতে হতে দুধ খুব সুন্দর জ্বাল হয়ে হালকা রং হবে। অন্য পাতিলে পানির সঙ্গে লবণ এবং ঘি দিয়ে গরম করুন। ফুটানো পানির সঙ্গে চালের গুঁড়া ও ময়দা দিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে চুলা বন্ধ করে দিয়ে খামির করতে হবে। রুটি বানানোর পিঁড়িতে গরম গরম খামির খুব ভালো করে মথে নিন।
এখন খামিরটা ১০ ভাগ করুন। এক একটি ভাগ দিয়ে ছোট ছোট রুটি বেলে অথবা হাত দিয়ে চেপে পাতলা করে ভিতরে নারিকেলর পুর দিয়ে পুলিপিঠা তৈরি করুন। এভাবে সব পিঠাগুলো তৈরি করে নিন। এখন বানানো পুলিপিঠা, ফুটিয়ে রাখা দুধের মধ্যে দিয়ে চুলার আঁচ কম রেখে ১০ মিনিট রান্না করতে হবে।
হাঁড়ি আস্তে ঝাঁকিয়ে পিঠার সঙ্গে দুধ মিশিয়ে নিন। ১০ মিনিট রান্নার পর কুড়ানো নারিকেল দিয়ে আরও দুই থেকে তিন মিনিট রান্না করে নামিয়ে পাত্রে ঢেলে পরিবেশন করুন মজাদার দুধ পুলি পিঠা।
পুলি পিঠার সব রেসিপি – মজাদার ও ভিন্ন স্বাদের ৭টি পুলি পিঠার রেসিপি
রেসিপি ১২: শীতের পিঠা – ঝাল সবজি ভাপা
উপকরণঃ ভাপা পিঠার চালের গুঁড়া, ধনেপাতা কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, কাঁচামরিচ কুচি ১ টেবিল-চামচ, গাজর ৩/৪ কাপ, লবণ সামান্য।
প্রণালীঃ
ভাপা পিঠার নিয়মে চালের গুঁড়া ও পিঠার তৈরির হাঁড়ি তৈরি করে নিন। ধনেপাতা পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ কুচি সামান্য লবণ দিয়ে মাখুন। ভাপা পিঠার নিয়মে চালের গুঁড়া ভেতরে ধনেপাতার পুর ভরে পিঠা বানিয়ে নিন। ভাপা পিঠার মতোই ভাপে পিঠা তৈরি করুন। এই পিঠা ভুনা মাংসের সঙ্গে গরম গরম খেতে মজা। –
রেসিপি ১৩: শীতের পিঠা – ঝিনুক পিঠা
উপকরণঃ আটা বা ময়দা পরিমাণ মতো, চিনি, নারিকেল কোরানো, সয়াবিনের তেল, এলাচ ও দারুচিনি, একটি তালপাখা।
প্রণালীঃ
প্রথমে একটি পাত্রে পরিমাণ মতো আটা বা ময়দার মধ্যে চিনি ও খুব অল্প পরিমাণ কোরানো নারিকেল দিয়ে পানি গরম করে সিদ্ধ করে নিন। তারপর সিদ্ধ করা ময়দা ঠাণ্ডা করে হাত দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে ছোট ছোট লম্বা টুকরো করে রাখুন।
এবার তালপাখা ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। শুকানো হয়ে গেলে সিদ্ধ ময়দার লম্বা করা টুকরাগুলো তালপাখার গোড়ার চিকন দিকে দিয়ে হাত দিয়ে চাপ দিন। দেখবেন পিঠাগুলো দেখতে একদম ঝিনুকের মতো দেখাবে।
অন্য একটি পাত্র পানি, চিনি, এলাচ ও পরিমাণ মতো দারুচিনি নিয়ে হালকা গাঢ় করে চিনির সিরা তৈরি করুন। এবার আর একটি পাত্রে পরিমাণ মতো সয়াবিন তেল দিয়ে চুলায় আঁচ দিতে থাকুন। এবার তালপাখা দিয়ে তৈরি করা পিঠাগুলো ভাজুন।
হালকা বাদামি রং হলে নামিয়ে চিনির সিরার মধ্যে চুবিয়ে অন্য পাত্রে রাখুন।
রেসিপি ১৪: শীতের পিঠা – নকশি পিঠা
উপকরণঃ চালের গুঁড়া ৪ কাপ, পানি তিন কাপ, লবণ সামান্য, ঘি ১ টেবিল চামচ, ভাজার জন্য তেল ৫০০ গ্রাম। সিরার জন্য: গুড় ১ কাপ, চিনি ১ কাপ, পানি ২ কাপ জ্বাল দিয়ে সিরা বানাতে হবে।
প্রণালীঃ
পানিতে লবণ ও ঘি দিয়ে চুলায় দিন। ফুটে উঠলে চালের গুঁড়া দিয়ে সেদ্ধ করে কাই বানাতে হবে।
আধা ইঞ্চি পুরু করে রুটি বানিয়ে পছন্দমতো আকার দিয়ে কেটে নিন। খেজুর কাঁটা দিয়ে রুটিতে পছন্দমতো নকশা করুন। এবার প্রথমে ডুবোতেলে ভেজে নিন। কিছুক্ষণ পর আবার তেলে ভেজে সিরায় দিয়ে ১ মিনিট রেখে তুলে নিন। ঠাণ্ডা হলে পরিবেশন করুন।
রেসিপি ১৫: শীতের পিঠা – সবজির পাটিসাপটা
উপকরণঃ ময়দা – ১ কাপ, সুজি – ১/২ কাপ, ডিম – ২ টি , গাজর মিহি কুঁচি – ১ টি, বাঁধাকপি মিহি কুঁচি – ১/২ কাপ, পেঁয়াজ কুঁচি – ১ টি, কাঁচা মরিচ কুঁচি – ৪/৫ টি , সয়া সস – ২ টেবিল চামচ, লবন – স্বাদ মত, তেল – পরিমান মত, ধনে পাতা কুঁচি – ১ গোছা ।
প্রণালীঃ
প্রথমে ময়দা আর সুজি একটি বাটিতে নিয়ে তাতে সামান্য লবন ও একটি ফেটানো ডিম দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে গোলা তৈরি করুন। প্রয়োজনে একটু পানি মেশান। মোটামুটি ঘন একটি গোলা তৈরি করতে হবে যেটা আপনি প্যানের ওপর পাটিসাপটার মত ছড়িয়ে দিতে পারবেন। গোলাটি মূল রান্নার ৩০ মিনিট আগেই তৈরি করে রাখতে হবে।
এবার কড়াইতে তেল দিয়ে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ কুঁচি বাদামি করে ভেজে নিন। এবার সবজিগুলো দিয়ে দিন। পরিমান মত লবন দিন। মিনিট পাঁচেক রান্না করুন। একটু নরম হলেই একটি ডিম ফেটিয়ে নিয়ে তাতে ছেড়ে দিন। ভালো করে মিশিয়ে নিন। সয়াসস দিয়ে নেড়েচেড়ে বেশ মাখামাখা হয়ে আসলে ধনেপাতা কুঁচি ছিটিয়ে নামিয়ে নিন। এবার ননস্টিক প্যান বা তাওয়া গরম করে তেল দিয়ে ব্রাশ করে নিন।
ব্রাশ না থাকলে একটা ছোট কাপড় চামচে বেঁধে টেলে দুবিয়ে সেটা দিয়ে তাওয়াটা ভালো করে মুছে দিতে পারেন। এবার ২ টেবিল চামচ গোলা প্যানে ঢেলে সমান ভাবে গোল করে ছড়িয়ে দিন। এসময় আঁচ কম রাখতে হবে।
গোলাটা একটু শুকিয়ে আসতে শুরু করলে খুন্তি দিয়ে নিচের দিক টা তুলে নিন। উলটে দেবেন না। এবারে ২ চামচ ডিম-সব্জির পুর পাটিসাপটার এক পাশে লম্বা করে বিছিয়ে দিন। তারপরে সাবধানে চামচের সাহায্যে পাটিসাপটার মত রোল করুন। মুড়িয়ে নেয়ার পর আরও ২/৩ মিনিট তাওয়ায় রাখুন, উল্টে-পাল্টে ভালোভাবে সেঁকে নিন।সস দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
রেসিপি ১৬: শীতের পিঠা – সাগুদানা পিঠা
উপকরণঃ সাগুদানা ১/২ কাপ, ময়দা ১ কাপ, চিনি ১/২কাপ, লবণ পরিমানমত, পানি ১ কাপ, তেল ভাজার জন্য।
প্রণালীঃ
কড়াইতে পানি নিয়ে তাতে লবণ ও চিনি দিয়ে মাঝারি আঁচে চূলায় দিন। পানি ফুটে উঠলে তাতে সাগুদানা ও ময়দা একসাথে মেখে খামির তৈরী করুন।
এবার পিঁড়িতে ১/২ ইঞ্চি পুরু রুটি বেলে তা বরফি আকারে বা অন্য যে কোন নকশায় কেটে কড়াইতে ডুবো তেলে ভেজে নিন। ব্যস্ হয়ে গেল মজাদার সাগুদানা পিঠা।
রেসিপি ১৭: শীতের পিঠা – দুধের রাবড়িতে ভেজা সুজির পিঠা
উপকরণঃ সুজি দুই কাপ (টালা নয়), ডিম দুইটি বেকিং পাউডার ১/২ চা চামচ, চিনি এক কাপ, দুধ এক লিটার, পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম ব্লেন্ড করা: ২ টেবিল চামচ, তেল: ভাজার জন্য
প্রণালীঃ
সুজির পিঠার জন্য:
একটি পাত্রে সুজি, ডিম, দুই টেবিল চামচ চিনি, বেকিং পাউডার নিয়ে মিশিয়ে ডো তৈরি করে নিন। চুলায় তেল গরম করে নিন। গরম তেলে গোল চামচ দিয়ে ডো গুলো অল্প অল্প করে দিন। একদম হালকা করে ভেঁজে তুলে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন, যেন পিঠা বেশি ভাঁজা না হয়। নতুবা ভেতরে দুধ ঢুকবে না।
দুধের রাবড়ির জন্য:
একটি পাত্রে এক লিটার দুধ গরম দিন। এর সাথে এক কাপ চিনি মিশিয়ে নিন। দুধ ঘন করে পৌনে এক লিটার করুন। এবার ব্লেন্ড করে রাখা বাদাম মিশিয়ে নিন। আরো কিছুক্ষন নাড়ুন।
দুধে ভেজানো:
তেলে ভেঁজে রাখা পিঠাগুলো ধীরে ধীরে দুধে দিয়ে দিন। ২০ মিনিট ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন দেখবেন পিঠাগুলো ফুলে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এবার ফ্রেজে রেখে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন সুস্বাদু দুধের রাবড়িতে ভেজানো সুজির পিঠা।
রেসিপি ১৮: শীতের পিঠা – লবঙ্গ লতিকা পিঠা
উপকরণঃ ময়দা, চালের গুড়া, লবণ, দুধ, নারকেল, চিনি বা গুড়, লবঙ্গ ও তেল।
প্রণালীঃ
প্রথমে ময়দা, চালের গুড়া ও লবণ একসাথে নিয়ে পানি দিয়ে মাখিয়ে ময়ান করে নিন। তারপর দুধ জ্বাল দিয়ে নারকেল কোড়া চিনি বা গুড় দিয়ে জ্বালিয়ে পুর বানিয়ে নিন। এরপর রুটির মত গড়ে গোল করে কেটে ওর মধ্যে নারকেলের পুর দিয়ে চারদিক দিয়ে ভাঁজ করে মাঝখানে লবঙ্গ গেঁথে মুখ আটকে দিন। এবার গরম তেলে একটি একটি করে ডুবো তেলে ভেঁজে গরম গরম পরিবেশন করুন।
রেসিপি ১৯: শীতের পিঠা – মুরগী পিঠা
উপকরণঃ চালের গুড়া, লবণ, মুরগীর কিমা, আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরার গুড়া, ধনে গুড়া, মরিচের গুড়া, পেঁয়াজ কুচি, ধনে পাতা কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি এবং ভাজার জন্য সয়াবিনের তেল।
প্রণালীঃ
প্রথমে পাত্রে পরিমান মত তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি ভেঁজে নিন। তারপর উপকরনের ধনেপাতা ও কাঁচামরিচ কুচি বাদে সব মসলা দিয়ে মুরগীর কিমা কষিয়ে পুর তৈরি করুন। চুলা থেকে নামানোর আগে ধনে পাতা ও কাঁচামরিচ কুচি দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।
এরপর অন্য পাত্রে গরম পানিতে লবণ দিয়ে চালের গুড়া দিয়ে সেদ্ধ করে মেখে ময়ান তৈরি করে নিন। এবার ময়ান থেকে নিয়ে নরমাল রুটির মত বেলে ডিজাইন অনুযায়ী কেটে মুরগীর পুর ঠেসে দিয়ে ভাঁজ করে রাখুন।
তারপর একটি পাত্রে তেল গরম করে ডুবো তেলে হালকা আচে ব্রাউন করে ভেঁজে পরিবেশন করুন।
রেসিপি ২০: শীতের পিঠা – ক্ষীর ও ডিমের পিঠা
উপকরণঃ দুধ, চিনি, ক্ষোয়াক্ষীর, ডিমের সাদা অংশ, ময়দা, এলাচ গুড়া, ঘি সব কিছুই দিতে হবে পরিমান মত।
প্রণালীঃ
প্রথমে একটি পাত্রে সামান্য দুধ নিয়ে চিনি, ক্ষোয়াক্ষীর, ডিমের সাদা অংশ, ময়দা, এলাচ গুড়া ও সামান্য পানি দিয়ে ভাল করে গুলিয়ে নিন। এবার তাওয়ায় ঘি মাখিয়ে বেশ গরম করে গুলানো ময়দা হাত দিয়ে তাওয়ায় ছড়িয়ে দিন। এপিঠ ওপিঠ ভাল করে ভেজে তাওয়া থেকে উঠিয়ে অন্য পাত্রে রেখে চিনি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
রেসিপি ২১: শীতের পিঠা – পাকা কলার পিঠা
উপকরণঃ ময়দা – পরিমান মত, ডিম – পরিমান মত, দুধ – পরিমান মত, পাকা কলা – পরিমান মত, চিনি ও ঘি – পরিমান মত।
প্রণালীঃ
প্রথমে পরিমান মত পাকা কলা নিয়ে লম্বা লম্বা করে কেটে রাখুন। যেমন ১ টি কলা চার ভাগ হবে। এবার অন্য একটি পাত্রে দুধের সাথে ময়দা ও ডিম দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।
তারপর কড়াইয়ে ঘি দিয়ে একটি একটি করে কলার পিচ নিয়ে ময়দার গোলায় চুবিয়ে ভেজে নিন। এরপর চিনির রসে ডুবিয়ে তুলে মজাদার এই পিঠা টি পরিবারে সবার জন্য পরিবেশন করুন।
রেসিপি ২২: শীতের পিঠা – ম্যারা পিঠা
উপকরণঃ চাউলের গুড়া, লবণ ও পানি।
প্রণালীঃ
প্রথমে চাউলের গুড়া সামান্য ভেজে নিন। এবার ভাজা চাউলের গুড়ার মধ্যে গরম পানি ও লবণ দিয়ে আটা সিদ্ধর মত হাতে কাই করে নিন। তারপর হাতের তালুতে গোল গোল বা লম্বা করে বিভিন্ন আকৃতি করে ভাপে সিদ্ধ দিন।
এভাবে তৈরি হয়ে গেল মজাদার ও সুস্বাদু ম্যারা পিঠা। এই পিঠা শুটকি ভর্তা, গুড়, বা মাংস দিয়ে পরিবেশন করুন।
রেসিপি ২৩: শীতের পিঠা – ছিটা পিঠা
উপকরণঃ চাউলের গুড়া, আদা বাটা, পেয়াজ বাটা, ডিম ও সামান্য তেল।
প্রণালীঃ
চাউলের গুড়ার মধ্যে আদা বাটা, পেয়াজ বাটা দিয়ে হালকা ঘন করে মাখিয়ে নিন। এবার ফ্রাই প্যান হালকা তেল দিয়ে মুছে দিন। তারপর আটার মধ্যে হাত দিয়ে কয়েক বার গুলানো চাউলের গুড়া ফ্রাই প্যানে ছিটিয়ে দিয়ে রুটির মত করে আঁচ দিন। রুটি গুলো ৩ কোনা ভাজ করে নামিয়ে ফেলুন। তারপর মুরগীর মাংস দিয়ে পরিবেশন করুন।
রেসিপি ২৪: শীতের পিঠা – পাকান পিঠা
উপকরণঃ চালের গুড়া, ডিম, মসুরের ডাল, চিনি ও তেল।
প্রণালীঃ
প্রথমে মসুরের ডাল ধুয়ে সিদ্ধ করে নিন। একটি পাত্রে পরিমান মত চিনি দিয়ে শিরা করে নিন। গরম পানিতে চাউলের আটা দিয়ে সিদ্ধ করুন এবং হাত দিয়ে কাই করে নিন। কাই করা আটার মধ্যে সিদ্ধ ডাল ও কাঁচা ডিম ফাটিয়ে একসাথে পেস্ট করে নিন।
তারপর ঐ আটা দিয়ে মোটা করে রুটি বানিয়ে নিন। এবার খেজুর কাটা দিয়ে রুটির উপরে বিভিন্ন নকশা করুন। কড়াইয়ে পরিমান মত তেলে বাদামী রঙ করে ভেজে শিরার মধ্যে চুবিয়ে উঠিয়ে নিন।
রেসিপি ২৫: শীতের পিঠা – বকুল পিঠা
উপকরণঃ কোড়ানো নারিকেল, গরুর দুধ, চিনি, তেজপাতা, দারুচিনি, এলাচ, কিচমিচ, লং ফড়িং ও ময়দা।
প্রণালীঃ
প্রথমে একটা পাত্রে পরিমান মত গরুর দুধ নিন। দুধের মধ্যে দারুচিনি, তেজপাতা, এলাচ, কিচমিচ ও পরিমান মত চিনি দিয়ে সামান্য ঘন করে আঁচ দিন। দুধ ঘন হয়ে আসলে চুলার আঁচ কমিয়ে মৃদু মৃদু তাপে দুধের পাত্রটি চুলার ওপর রেখে দিন বা চুলা থেকে নামিয়েও রাখতে পারেন।
অন্য পাত্রে সামান্য তেল দিয়ে তেলের ওপর দুইটা তেজপাতা, দারুচিনি এলাচ ও লং ফড়িং ছেড়ে দিন। তারপর কোড়ানো নারিকেল ও পরিমান মত চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন। নারিকেল নাড়তে নাড়তে আঠা আঠা হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। আরেকটি পাত্রে পরিমান মত ময়দা ঘন করে গুলিয়ে রাখুন।
তারপর পাত্রে পরিমান মত তেল দিয়ে চুলার আঁচ দিতে থাকুন। এখন জালানো নারিকেল হাত দিয়ে গোল গোল চ্যাপ্টা করে চপ এর মত করে গুলানো ময়দার প্রতিটি নারিকেলের চপ গুলো ময়দার মধ্যে চুবিয়ে তেলে ছেড়ে দিন বাদামী রঙ এ পিট অপিট ভেজে ঘন করা দুধের মধ্যে ছেড়ে দিন। এক ঘন্টা পর দুধের পাত্রের ঢাকনা খুলে দেখবেন পিঠাগুলো দুধে ভিজানোর জন্য ফুলে ফুলে উঠেছে। তৈরী হয়ে গেলো হয়ে গেলো দারুন স্বাদের বকুল পিঠা।
শীতের পিঠার রেসিপি তো শিখে গেলেন এবার চটপট তৈরী করে ফেলুন। কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলে মন্তব্য করুন। ভালো লাগলে লেখাটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।