পুরান ঢাকার ইফতার, শুধু নামেই নয়,স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা। পুরান ঢাকার ইফতার বাজারের শত প্রকার আইটেমের মধ্যে পছন্দের প্রথম তালিকাতেই রয়েছে বিরিয়ানি। ভোজন রসিকদের ঢাকাইয়া মুখরোচক বিরিয়ানির নাম শুনলে জিভের লাগামটানা দুরূহ হয়ে পরে। আর সেটা যদি পুরান ঢাকার নান্না’র বিরিয়ানি হয় তবে তো কোন কথাই নেই। ইফতারিতে ‘বাপের বড় পোলা’ আইটেমের পাশাপাশি নতুন-পুরান উভয় ঢাকার বাসিন্দাদের কাছেই নান্না’র বিরিয়ানি পছন্দের প্রথম স্থান দখল করে আছে।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা নান্না মিয়া ১৯৬২-৬৩ সালের দিকে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। মানুষের কাছে তার বিরিয়ানি ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তারপর ১৯৭৩-৭৪ সালে মৌলভীবাজারের বেচারাম দেউরিতে এর প্রধান শাখা খুলে ব্যবসাকে একটু বড় রূপ দেন এই ঝানু বাবুর্চি। হাজী নান্না মিয়ার মৃত্যুর পর আজ অব্দি তার পরিবারে সদস্যরা এ ব্যবসার হাল ধরেন।
যা পাবেন নান্নাতে :
নান্না মিয়ার ভাতিজা আনোয়ারে সাথে কথা বলে জানা যায় রোজায় ক্রেতাদের বাড়তি চাপ থাকে। ইফতারি আইটেম আয়োজনের কোন ভিন্নতা থাকে না। বছরের অন্যসব দিনে যে আইটেমগুলো পাওয়া যায় রোজায় সেগুলোই থাকে। তবে সাধারণের চাইতে রোজার সময় বিক্রি হয় তার তিনগুন! এখানে মুলত দুই প্রকারের শাহী মোরগ পোলাও পাওয়া যায়।
(ক) আলাদাভাবে পরিবেশিত পোলাও এবং মোরগের রোস্ট
(খ) মোরগ পোলাও।
খাসির বিরিয়ানির ক্ষেত্রেও একইরকম আইটেম বিদ্যমান। তবে এখানে বলে রাখা ভালো আলাদা পোলাও মোরগের রোস্ট আইটেমটা বিশেষ ঘ্রাণ ও স্বাদ বহন করে। যা রসনা বিলাসীদের বারবার এখানে টেনে নিয়ে আসবে। এ ছাড়াও এখানে পাওয়া যাবে মাটন কাচ্চি, তেহারী, টিকিয়া। খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে পেতে পারেন ফিরনি। আরও পাবেন বোরহানি,ও লাবাং-এর মত অতি সুস্বাদু পানীয়।
দামটা যেমন হবে :
নান্না মিয়ার শুরুর আমলে আস্ত একটি মোরগ রোস্টের সাথে এক প্লেট পোলাও পাওয়া গেছে মাত্র দেড় টাকায়। কিন্তু সময় বদলে গেছে। বসার জায়গায় চাটাইকে ঠেলে দিয়ে এসেছে অভিজাত চেয়ার-টেবিল। খাবারের স্বাদেও এসেছে বেশ পরিবর্তন। এখন সেই শাহী মোড়ক পোলাও এর দাম পরবে ১৩০ টাকা। কাচ্চি ১৫০ টাকা হলেও তেহারী পাওয়া যাবে ১০০-১২০ টাকার মধ্যেই।ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে আর মতিঝিলে একটি করে শাখা এবং পুরান ঢাকার বেচারাম দেউরীতে প্রধান শাখা নিয়ে মানুষের রসনা বিলাসের যোগান দিয়ে যাচ্ছে নান্না’র বিরিয়ানী হাউজ।
পুরান ঢাকার বেগম বাজারে গেলে কমিশনার কার্যালয়ে যাওয়ার পথে তিন রাস্তার মোড়েই পেয়ে যাবেন নান্না’র প্রধান শাখা। আর শাপলা চত্বর থেকে ৩০০ গজ দক্ষিণে হাটলেই বঙ্গভবনের ৪নং গেটের বিপরীতেই পাওয়া যাবে নান্নার মতিঝিল শাখা। তবে নাজিমুদ্দিন রোডের শাখাতে যেতে হলে শেখ বোরহা্ন উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ থেকে সোজা যেতে হবে চানখার পুলের দিকে। পথিমধ্যে হোসনি দালানের প্রবেশ মুখেই পেয়ে যাবেন নাজিমুদ্দিন রোডের নান্না মিয়ার বিরিয়ানি হাউজের এ শাখাটি।