সরকারি চাকরিজীবীদের প্রবেশ পদে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার (প্রথম শ্রেণি) সকলকেই অষ্টম গ্রেডের বেতন সুবিধাদি নিশ্চিত করে ঘোষিত বেতনক্রম নিয়ে সৃষ্ট অসন্তোষ দূর করা হচ্ছে। এ ছাড়া ২৬ ক্যাডারে পদোন্নতির সোপান তৈরির প্রক্রিয়াও নির্ণয় করা হয়েছে। ২৬ ক্যাডারে গ্রেড-১ ও ২সহ একাধিক গ্রেডের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদোন্নতির বিধিমালা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামোতে সংশোধনী আনা হবে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বেতন বৈষম্য ও পদমর্যাদায় সমতা আনার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং বেতন বৈষম্য দূরীকরণে গঠিত সচিব কমিটির প্রধান আবুল কালাম আজাদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বৈষম্য বা বেতন ক্রম নিয়ে পদমর্যাদার বিষয়গুলো নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এমন সমাধান আশা করছেন তিনি নিজেও। তিনি বলেন, সকল পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। সেটিকে ভিত্তি ধরে কাজ চলছে।
জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব আহমেদ জানান, অর্থমন্ত্রী দেশে ফিরলে তার সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য যেসব ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং যেসব প্রস্তাবের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
প্রসঙ্গত, দাবি মানতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে সরকারকে। অন্যান্য সংগঠন তাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রেখেছে। তবে আগামী মাসের মাঝামাঝি নাগাদ তারা আবারও মাঠে নামবেন এমন আভাস দিয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের কতজনকে সিনিয়র সচিবের মর্যাদায় বেতনক্রম ঘোষণা করা যায় সেটি নির্ধারিত হয়েছে। অন্তত পাঁচ বছর অধ্যাপকের পদে সন্তোষজনক চাকরি হলে তার মধ্য থেকে ৮ জনকে সিনিয়র সচিবের সমান বেতনক্রম দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকদের পর্যায়ক্রমিক পদোন্নতির স্বার্থে ঊর্ধ্বতন গ্রেডের পদ সৃষ্টি করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২৬ ক্যাডারের মধ্যে আটটি ক্যাডার থেকে তারা প্রস্তাবনা পেয়েছেন। বাকিগুলো বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে কোনো প্রস্তাব তারা এখনো পাননি। ফলে তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। শেষ পর্যন্ত এ দুটি ক্যাডারের জন্য পুরো বিষয়টি প্রলম্বিত হতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও শুনিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
সরকারি কলেজ অধ্যাপকদের বিদ্যমান পদ চতুর্থ গ্রেডের। এ পদে নিয়োজিত শিক্ষকের সংখ্যা ৮৫৮ জন। এর মধ্যে থেকে চাকরিকাল দুই বছরের ভিত্তিতে তৃতীয় গ্রেডে ৪০০টি পদ উন্নীত করা হচ্ছে। একইভাবে ২য় গ্রেডে ১০টি পদ সংরক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজি ছাড়াও আরও দুটি গ্রেড-১ পদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে একটি গ্রেড-২ পদ, সকল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদকে গ্রেড-২ করা হতে পারে। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষা ক্যাডারে বিদ্যমান অষ্টম গ্রেড থেকে ২য় গ্রেড পর্যন্ত সকল গ্রেডে পদের সংখ্যা বাড়িয়ে পদোন্নতির সোপান তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আনসার ক্যাডারের ৩য় থেকে ৯ম গ্রেড পর্যন্ত নতুন করে অর্ধশতাধিক পদ তৈরি করা হবে। এ ক্যাডারে অতিরিক্ত মহাপরিচালক, উপমহাপরিচালক, উপপরিচালকের পদ বাড়ানো হবে। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম গ্রেডের পদ বিলুপ্ত করে সহকারী পরিচালকের (প্রবেশ পদে) ৫০টি পদ বাড়ানো হতে পারে। এতে ওপরের দিকে পদোন্নতির সুযোগ তৈরি হবে। এ ছাড়া পরিচালকের বিদ্যমান ২২টি পদ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ২৫টি করা হবে। কৃষি ক্যাডার ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ক্যাডারেও পর্যায়ক্রমিক গ্রেড বৃদ্ধি করা হবে যাতে নিচের দিক থেকে ওপরের দিকে পদোন্নতি দেয়া যায়।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব: যেসব গ্রেডে ১০০ সদস্য আছেন সেসব ক্যাডারে কমপক্ষে ১টি প্রথম ও ১টি দ্বিতীয় গ্রেডের পদ সৃজন করা হবে। কারিগরি, সমবায়, ইকোনমিক, পরিসংখ্যান ও টেলিকমে মোট ৬টি পদ সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ প্রশাসন বহির্ভূত আলোচ্য ক্যাডারে প্রথম শ্রেণির পদ হবে ৩৮টি। একইভাবে আনসার, সড়ক ও জনপথ, সাধারণ শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, প্রাণিসম্পদ, মত্স্য, ডাক, গণপূর্ত, খাদ্য ও বন ক্যাডারে একটি করে ২য় গ্রেডের মোট ১০টি পদ সৃষ্টি হবে। ফলে এ গ্রেডে মোট পদ সংখ্যা ১০১টি। তবে বাণিজ্য ক্যাডারে কোনো ২য় গ্রেডের পদ থাকবে না।
এ ছাড়া সমবায় এবং পরিসংখ্যান ক্যাডারে ১টি করে তৃতীয় গ্রেডের মোট ২টি পদ সৃজন হবে। এর ফলে ৩ শতাংশ কর্মচারী ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ পাবেন। এতে প্রশাসন ক্যাডারে ৫ম গ্রেড থেকে ৪৫টি পদ ৪র্থ গ্রেডে আসবে। কৃষিতে ৩৬টি ৪র্থ গ্রেডের ক্যাডার পদ বহাল রয়েছে। কারিগরি শিক্ষায় ৪র্থ গ্রেডের পদ হবে ৩০টি। প্রাণিসম্পদ বিভাগে থাকছে ৪০টি ৪র্থ গ্রেডের পদ। মৎস্য ক্যাডারে ২৫টি ৪র্থ গ্রেডের পদ থাকবে। ৪র্থ গ্রেডে বর্তমান পদ সংখ্যা ২ হাজার ২৫১টি। এখন হবে ২ হাজার ৪২৭টি।
এ ছাড়াও ৮ম গ্রেডে ৩ বছর, ৭ম গ্রেডে ৪ বছর, ৬ষ্ঠ গ্রেডে ৫ বছর, ৫ম গ্রেডে ১০ বছর, ৪র্থ গ্রেডে ১২ বছর, ৩য় গ্রেডে ১৪ বছর, ২য় গ্রেডে ১৭ বছর এবং ১ম গ্রেডে ২০ বছর সন্তোষজনক চাকরিকাল পূর্ণ করলে এবং পদশূন্য থাকলে পরবর্তী উচ্চতর স্কেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপনীত হবেন।
Loading...
advertisement