বল হাতে সাবলীল ভঙ্গিতে দৌড়ে যাচ্ছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দারুণ এক ইনসুইংয়ে বিরেন্দর সেবাগের স্টাম্পটা একটা পাক খেয়ে উইকেটরক্ষকের পায়ের কাছে গিয়ে পড়লো। বোল্ড! ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের এইমুহুর্তে এর চাইতে ভালো কোন উদাহরণ মনে আসছে না। তবে জুনে শুরু হতে যাওয়া একটিমাত্র টেস্ট আর তিনটি ওয়ানদের একটিতেও নেই সেদিনের বিধ্বংসী ওপেনার ব্যাটসম্যান সেবাগ। কিন্তু এরপরেও ভারতকে ভুগিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ঘটনা বিশ্বকাপ। কোয়ার্টার ফাইনালে কয়েকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে না গেলে হয়তো ফলাফলটা অন্যকিছুও হতে পারতো। হয়নি। তবে সুযোগটা আবারো এসেছে মাশরাফি-রুবেল-তাসকিনদের সামনে। এই যখন অবস্থা স্বাগতিক দল বাংলাদেশের, তখন মোকাবেলার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে ‘জায়ান্ট’ দল ভারত? প্রথমত, এখনও কোচহীন ধোনিবাহীনি। তাই বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে মিলিয়ে কলকাতাতে অনুশীলন করছে ভারত দল। বিশেষ করে ব্যাটিংটা একটু বেশীই করছে। কারণ সফরকারী দলের শঙ্কার জায়গা বাংলাদেশ দলের ‘নির্দিষ্ট’ কিছু বোলার। তারা কারা? এতক্ষণে হয়তো বুঝে গেছেন? ১। এই তালিকার প্রথমে রয়েছেন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বরাবরই ভারতের বিপক্ষে বল হাতে রান দেওয়ায় কৃপণতা আর উইকেট নেওয়ায় এগিয়ে থাকার কারণে ভারতকে একরকম প্রিয় প্রতিপক্ষতে পরিণত করে ফেলেছেন মাশরাফি। এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ১৩টি ওয়ানডে খেলে তুলে নিয়েছেন ১৬টি উইকেট। ফলে ধোনিদের মূল তালিকাতে যে ‘মাশরাফি-মোকাবেলা’ থাকবেই তাতে সন্দেহ নেই। ২। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন আরেক পেসার রুবেল হোসেন। বিশ্বকাপে নিজেকে দারুণভাবে প্রমাণ করেছেন রুবেল হোসেন। একাধিক বিতর্কের মধ্যেও নিয়মিত পারফরম্যান্স করাটা সহজ ছিলো না তার জন্য। ভারতের বিপক্ষে বিরাট কোহলির গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন তিনি। বিশ্বকাপে সবমিলিয়ে আট উইকেট নেওয়া রুবেল হোসেন যে ভারতের মাথা ব্যথার কারণ হবেই সেটা সহজেই অনুমেয়। ৩। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ(আইপিএল) এ নিয়মিত খেলার কারণে ভারত দলের ক্রিকেটারদেরকে খুব ভালো করেই জানেন বাংলাদেশ দলের শীর্ষ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আর এই জানাকেই ভারত দলের বিপক্ষে দলের হয়ে কাজে লাগাবেন সাকিব। সেটাই হতে পারে ধোনিদের জন্য সবচেয়ে খারাপ খবর। বলা হয়, সাকিবের অন্যতম প্রিয় প্রতিপক্ষ দল ভারত। মাত্র ১২টি ম্যাচ খেলে ধোনিদের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশী উইকেট দখলে রেখেছেন এই অলরাউন্ডার। শুধু বোলার হিসেবেই নয়, ব্যাট হাতেও ভারতকে যথেষ্ট ভোগান সাকিব। ৪। বাংলাদেশ দলের কনিষ্ঠ সদস্য তাসকিন আহমেদের অভিষেক ম্যাচই ছিলো ভারত। সেই ম্যাচে একাই ভারতের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন। সেই থেকে শুরু। প্রতিপক্ষ ভারত হলেই যেন জ্বলে ওঠেন তাসকিন। ভারতের বিপক্ষে মাত্র তিন ম্যাচে ১০টি উইকেট তুলে নিয়ে নিজেকে ধোনিদের পরিকল্পনার খাতাতে বেশ পোক্তভাবেই জায়গা করে নেওয়ার কথা তার। ৫। স্পিনার তাইজুল ইসলামের কথা ভারতের খুব একটা জানার কথা নয়। আর সে কারণেই ভয়টা বেশী। এখনো ভারতের কোন ব্যাটসম্যান তাইজুলের মুখোমুখি না হওয়াটা তাদের জন্যেই দুর্ভাগ্যের। তাহলে? হ্যাঁ, টেস্টে ভারত অবশ্যই তাইজুলের কথা ভাববে। যে স্পিনার মাত্র সাত টেস্টে ৩৫টি উইকেট তুলে নিয়েছে, তার জন্য আলাদা করে ভাবতেই হয়! এতো গেলো ভারতের কথা, অন্যদিকে সবকিছু মিলিয়েই কঠোর পরিশ্রম করছে স্বাগতিক বাংলাদেশ দল। টেস্টে পেসারের ঘাটতি থাকলেও, বাংলাদেশের ওয়ানডে দল যে বেশ পরিপক্ব হতে যাচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। দলের প্রায় সব নিয়মিত ক্রিকেটারই রয়েছেন ফর্মের চূড়ান্তে। তাছাড়া মাত্র শেষ হওয়া পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে আর টেস্ট সিরিজে ঐতিহাসিক ফলাফল দলের আত্মবিশ্বাসটা বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ। জুনের আট তারিখে বাংলাদেশে পা রাখবে ভারত দল। অন্যদিকে, ‘অন্য’ এক বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের জন্য। লড়াইটা যে জমবে সেটা খুব সত্যি।