অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট জয়ের জন্য তৃতীয় দিন শেষে স্বাগতিক বাংলাদেশের প্রয়োজন ৮ উইকেট, অস্ট্রেলিয়ার দরকার ১৫৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২২১ রানে অলআউট হয়ে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ২৬৫ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে তৃতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ১০৯ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় দিন শেষে ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৮৮ রানে এগিয়ে ছিলো বাংলাদেশ। তাই তৃতীয় দিনটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। গুরুত্বপূর্ণ দিনের শুরুটা চমৎকারই করেছিলেন তামিম। দিনের প্রথম বলেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্সকে বাউন্ডারি মারেন তিনি। একই ওভারের চতুর্থ বলেও আরও একটি বাউন্ডারি আদায় করেন তামিম। ২টি বাউন্ডারিতে দিনের শুরুতেই চাঙ্গা ভাব তামিমের। তাই দিনের তৃতীয় বাউন্ডারি আদায় করতে খুব বেশি সময় নেননি তিনি। নিজের মুখোমুখি হওয়া ১১তম বলে আরও একটি চার হাঁকান তামিম। এবারও বোলার কামিন্স। এই বাউন্ডারিতেই বাংলাদেশের লিড তিন অংকে পৌঁছায়। তামিমের ব্যাটিং-এ সাহসী হয়ে উঠেন অন্য প্রান্তে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে গতকাল শেষ বিকেলে খেলতে নামা তাইজুল। শূন্য রানে দিন শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার অফ-স্পিনার নাথান লিঁওকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে খাতা খুলেন তাইজুল। তবে ঐ লিঁও’র শিকারের তালিকাতেই নিজের নাম তুলেন তাইজুল। ইনিংসের ২৮তম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতেই তাইজুলকে লেগ বিফোরের জালে আটকে ফেলেন লিঁও। তাই নামের পাশে ৪ রান রেখে বিদায় নেন লিঁও। তাইজুলের বিদায়ের পর উইকেটে যোগ দেন ইমরুল কায়েস। প্রথম ইনিংসে ৬ বল মোকাবেলা করে শূন্য রানে বিদায় নেয়া ইমরুল এবার রানের খাতা খুলতে সক্ষম হন। তবে ব্যর্থতার বেড়াজাল থেকে নিজেকে বের করে আনতে পারেননি। সর্তকতার সাথে খেলতে থাকা ইমরুল শেষ পর্যন্ত থেমে যান ব্যক্তিগত ২ রানে। লিঁও’র করা ৩৪তম ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিটি হঠাৎ লাফিয়ে উঠায় আর সামলাতে পারেননি ইমরুল। দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার তা সহজেই লুফে নিয়ে ইমরুলের বিদায় নিশ্চিত করেন। দলীয় ৬৭ রানে ও ইমরুলকে হারানোর পরের ওভারেই বাউন্ডারি দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। প্রথম ইনিংসেও ৭১ রান করেছিলেন তিনি। তাই এই নিয়ে ৫০ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মত একই টেস্টের দুই ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি করলেন তামিম। ফলে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারকে স্পর্শ করলেন তামিম। হাবিবুলও তার ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ছয়বার একই টেস্টের দুই ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন। ইমরুলকে হারিয়ে ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। এমন অবস্থায় উইকেটে টিকে থাকার পণ করেন তামিম ও মুশফিকুর। তাই দলের স্কোর ৩ উইকেটে ১৩৩ রান রেখে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যান তামিম ও মুশফিকুর। তামিম ৭৬ ও মুশির স্কোর ছিলো ২৫। চা-বিরতি থেকে ফিরেই প্যাভিলিয়নে যেতে হয় তামিমকে। কামিন্সের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থামেন তামিম। অবশ্য ডিআরএস নিয়ে তামিমকে ফিরিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ৮টি চারে ১৫৫ বলে ৭৮ রান করেন তামিম। বন্ধু তামিমের বিদায়ে ক্রিজে যাবার সুযোগ হয় সাকিব আল হাসানের। প্রথম ইনিংসে ৮৪ রান করলেও, এবার ব্যর্থ সাকিব। ৫ রান করে লিঁও’র শিকার হন তিনি।
১৪৩ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিবকে হারানোর পর দলের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন মুশফিকুর ও সাব্বির রহমান। দ্রুত উইকেটে আচরণ ও অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের পরিকল্পনা বুঝে নেন তারা। ফলে বেড়ে চলছিলো বাংলাদেশের লিড। কিন্তু দলীয় ১৮৬ রানে দুভার্গ্যজনকভাবে রান আউটের ফাঁদে পড়েন মুশফিকুর। স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যান সাব্বির উইকেট ছেড়ে লিও’র ডেলিভারি সপাটে চালিয়েছিলেন। সেই বলে আলতো ছোয়া দিয়ে মুশিকে রান আউটের ফাঁদে ফেলেন বোলার লিও। এসময় নন-স্ট্রাইকে ক্রিজের বাইরেই ছিলেন মুশফিকুর। এসময় তার রান ছিলো ৪১। ১১৪ বলের ইনিংসে ১টি করে চার ও ছক্কা মারেন মুশফিকুর। বাংলাদেশ দলপতির বিদায়ের পর ৮ বলের ব্যবধানে ফিরে যান সাব্বির ও নাসির হোসেন। সাব্বিরকে ২২ রানে লিও ও নাসিরকে শূন্য হাতে আউট করেন আগার। তাই ৮ উইকেটে ১৮৬ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ। সেখান থেকে বাংলাদেশের দলীয় স্কোর ২শ’ ও লিড আড়াইশ নিয়ে যান দুই টেল-এন্ডার ব্যাটসম্যান মেহেদি হাসান মিরাজ ও শফিউল ইসলাম। নবম উইকেটে ২৮ রান যোগ করেন মিরাজ ও শফিউল। দলীয় ২১৪ রানে শফিউলকে তুলে নিয়ে নবম উইকেট জুটি ভাঙ্গেন লিঁও। সেই সাথে দশমবারের মত ৫ বা ততোধিক উইকেট নেন লিঁও। এরপর বাংলাদেশের দশম উইকেটও তুলে নিয়েছেন লিঁও।
ফলে ২২১ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। তাই ম্যাচ জয়ের জন্য ২৬৫ রানের টার্গেট পায় অস্ট্রেলিয়া। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ ২৬ রানে ফিরলেও, শূন্য রানে অপরাজিত থেকে যান মুস্তাফিজুর রহমান। অস্ট্রেলিয়ার লিঁও ৮২ রানে ৬টি, আগার ২টি ও কামিন্স ১টি উইকেট নেন। জয়ের জন্য ২৬৫ রানের দেখে-শোনেই শুরু অস্ট্রেলিয়ার। অপরদিকে পরিকল্পনামাফিক শুরু বাংলাদেশও। উইকেটের দু’প্রান্ত দিয়েই স্পিনারদের দিয়ে শুরু করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর। অসিদের দুই ওপেনার সর্তক থাকায় সাফল্য পেতে সময় লাগে বাংলাদেশের। স্বাগতিকদের প্রথম সাফল্য এনে দেন মিরাজ। সফরকারী ওপেনার ম্যাট রেনশকে ব্যক্তিগত ৫ রানে লেগ বিফোরে ফেলেন মিরাজ। পরের ওভারেই বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়া সাকিব। সাকিবের করা ইনিংসের দশম ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে সুইপ করেছিলেন অসি ব্যাটসম্যান উসমান খাজা। সেই শট উঠে যায় আকাশে। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ থেকে দৌঁড়ে এসে তা দক্ষতার সাথে তালুবন্দি করেন তাইজুল ইসলাম। ফলে ২ উইকেটে ২৮ রানে পরিণত হয় অস্ট্রেলিয়া। ১ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারানোর চাপটা পরবর্তীতে ভালোভাবেই সামাল দেন ওয়ার্নার ও অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। দিন শেষে অবিচ্ছিন্ন থেকে যান তারা। তৃতীয় উইকেটে ১২৪ বল মোকাবেলা করে ৮১ রানের জুটি গড়েন ওয়ার্নার ও স্মিথ। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৫তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৭৫ রানে অপরাজিত আছেন ওয়ার্নার। ৯৬ বল মোকাবেলা করে ১১টি চার ও ১টি ছক্কা মেরেছেন এই বাঁ-হাতি। অন্যপ্রান্তে স্মিথের সংগ্রহে আছে ২৫ রান। বাংলাদেশের মিরাজ ও সাকিব ১টি করে উইকেট নেন।