সূর্যসুখী ফুল আমরা সবাই চিনি। নাম থেকেই যা স্পষ্ট - এবং আমরা সবাই জানি যে দিনের বেলা এ ফুল সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে।
কিন্তু কিভাবে তারা বুঝতে পারে যে কোন দিকে সূর্য আছে? গাছের দেহে তো প্রাণীর মতো কোন পেশী নেই, তাহলে এই দিক পরিবর্তন কিভাবে হয়?
এ নিয়ে গবেষণা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট বায়োলজির অধ্যাপক স্টেসি হারমার। তার গবেষণা নিবন্ধ গত সপ্তাহে সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
অধ্যাপক হারমার বলছেন, "কেন সূর্যমুখী এটা করে এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, তবে আমার ধারণা - সূর্যের দিকে মুখ করে থাকলে গাছটার পক্ষে অনেক বেশি ফোটন কণিকা শুষে নেয়া সম্ভব হয় এবং গাছের জন্য আলো হচ্ছে খাদ্যের মতোই একটা জিনিস। তা ছাড়া গাছের মধ্যে একটা বায়োলজিকাল ঘড়ির মতো প্রক্রিয়া আছে - যার ফলে সে দিন-রাতের পার্থক্য, কখন সূর্য উঠবে - এটা বুঝতে পারে। এর নাম সার্কেডিয়ান ছন্দ। এটা আমরা টাইম-ল্যাপস ভিডিও দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছি। গাছের ভেতরেই একটা দেহঘড়ির মতো কিছু প্রক্রিয়া আছে - যার ফলে এটা সম্ভব হচ্ছে।"
কি ভাবে একটা ফুলের ডাটা এভাবে দিক পরিবর্তন করতে পারে?
"এটা বুঝতে আমরা ফুলের ডাঁটাটাকে পরীক্ষা করেছি। দেখেছি সেখানে কিভাবে কোষের বিভাজন হচ্ছে। দিনের বেলা সূর্যমুখীর ডাঁটার পূর্বদিকের কোষের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে , পশ্চিমদিকের কোষ ততটা বাড়ে না । তাই ভারসাম্যের কারণেই ফুলটা তখন ক্রমাগত পশ্চিম দিকে ঘুরতে থাকে। রাতের বেলা ঘটে এর ঠিক উল্টোটা।"
"প্রশ্ন হচ্ছে, সূর্যমুখী ফুলের গাছ এটা করে কেন? এটা জানার জন্য আমরা টবে লাগানো সূর্যমুখী মাঠের মধ্যে রেখেছি। তার পর সন্ধ্যেবেলা যখন গাছটা পশ্চিমদিকে ফিরে আছে, তখন পুরো টবটাকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে আবার পূর্ব মুখী করে দিয়েছি। ফলে পরদিন যখন সূর্য উঠছে, তখন ফুলটা যথেষ্ট সূর্যের আলো পাচ্ছে না - কারণ সে আসলে উল্টো দিকে ঘুরে আছে। এর পর আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি যে মাটিতে লাগানো গাছগুলোর তুলনায় এই টবের গাছগুলোর ওজন কমে গেছে এবং তার পাতার আকৃতি ছোট হয়ে গেছে।"
জিকার টিকা: পাওয়া যাবে কবে?
রিও ডি জেনিরোতে অলিম্পিক চলছে। অলিম্পিকের আগে থেকে ব্রাজিল এবং গোটা দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে জিকা ভাইরাসের প্রকোপ নিয়ে কথা হচ্ছিল।
মশাবাহিত রোগ জিকা সংক্রমণের কারণে ছোট মাথা নিয়ে জন্মানো ব্রাজিলিয়ান শিশুদের ছবি সারা দুনিয়ার টিভিতে দেখানো হয়েছে। বেশ কিছু এ্যাথলেট জিকার ভয়ে গেমসে আসেন নি।
এখন উত্তর আমেরিকাতেও জিকার সংক্রমণের খবর বেরিয়েছে, এমনকিটি কয়েকদিন আগে ব্রিটেনের স্কটল্যান্ডেও জিকা ভাইরাস আক্রান্ত কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পৃথিবীর ৬০টি দেশে এই জিকা র প্রকোপ দেখা গেছে। ফলে এখন বিভিন্ন দেশেই জোর গবেষণা চলছে জিকা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের জন্য।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিজ্ঞানীরা বলছেন তারা তিন ধরণের পরীক্ষামূলক টিকার পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন এই টিকা বানরকে জিকা সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারে।
কোনটিতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি। কানাডার টরন্টো জেনারেল হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধি সংক্রান্ত কনসালট্যান্ট ড আইসাক বোগোশ বলছেন, প্রাথমিক ফলাফল দেখে তারা খুবই আশান্বিত।
কিন্তু এই টিকা কত তাড়াতাড়ি বাজারে আসবে ত নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান।
লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ড. এড রাইট বলছেন, এই সব টিকাগুলো এখনও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে এবং এগুলো লাইসেন্স পাওয়া এবং সবার ব্যবহারের জন্য বাজারে আসতে এখনো অরেক বছর লাগবে।
অস্বাভাবিক আবহাওয়া সারা বিশ্ব জুড়ে: কেন?
এ বছরের প্রথম ছ মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচন্ড গরম পড়েছে আবার প্রবল বৃষ্টিপাতও হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া অস্বাভাবিক সব ঘটনা ঘটবে এটা আমাদের আগেই সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা । সেই দিন কি এসে গেল?
নিউইয়র্কের গডার্ড ইন্স্টিটিউটের অব স্পেস স্টাডিজের পরিচালক ড গেভিন স্মিডট বলছেন, "সত্যি কথা বলতে - জলবায়ুর ক্ষেত্রে রেকর্ড ভাঙার খবরগুলোই এখন ভাঙা রেকর্ডের মতো একটা ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। আমাদের এই গ্রহটির উষ্ণতা বাড়ছে, গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এমনটা হচ্ছে। তার সাথে যোগ হয়েছে এল নিনোর প্রভাব - যা প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ঘটে থাকে। এর ফলে আবহাওয়ায় এই চরম-ভাবাপন্নতা দেখা দেখা যাচ্ছে। ২০১৬ সালের প্রথম ৬ মাস ছিল বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে গরম।"
"আমাদের মনে রাখতে হবে যে জলবায়ু একটা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। আমরা এখনো মাত্র আগামি কয়েক দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে তার পূর্বাভাস দিতে পারি। তার চেয়ে বেশি পারি না। আমরা জানি যে সার্বিকভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হতে থাকার ফলে এখন প্রতিনিয়তই অস্বাভাবিক আবহাওয়ার নতুন নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। কিন্তু একটা ব্যাপার খুব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যেমন গরম দেশগুলোয় বছরে কয় দিন ৩৫ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা থাকছে? বা যুক্তরাষ্ট্রে বছরে কয় দিন তাপমাত্র ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে থাকছে?"
"স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে এই সংখ্যাগুলো বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি বছরই বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। আমরা ইতিমধ্যেই ৪০০ পার্টস পার মিলিয়ন বা পিপিএম-এর সীমা পার হয়ে গেছি। প্রতি বছরই এ সংখ্যাটা তিন-চার করে বাড়ছে। এবং আবহাওয়ায় যে পরিবর্তন হচ্ছে - এটা হচ্ছে তার এক নম্বর কারণ।"