অনুশীলন ছিল সকালে। প্রচণ্ড রোদে অনুশীলন করেছেন মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মর্তুজারা। দুপুরের সূর্য যখন মাথার উপরে, তখন শেষ হয় অনুশীলন। কেউ কেউ ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফিরে যান বাসায়। কিন্তু মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে রয়ে যান মুশফিক, মাশরাফি, সাকিব আল হাসান, মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ ও রুবেল হোসেন। এই পাঁচ ক্রিকেটার রয়ে যান টাইগারদের নতুন টাইটেল স্পন্সর 'রবি'র নতুন জার্সি পরার জন্য। রোদের প্রচণ্ড তাপের মধ্যেই ভারত সিরিজকে সামনে রেখে নতুন জার্সি পরেন পাঁচ ক্রিকেটার। এরপর ফিরে যান সবাই। সবাই ফেরার পরই চমকে দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সরাসরি না বললেও বিসিবি সভাপতি পরোক্ষভাবে জানিয়ে দেন, ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে উইকেটের পেছনে দাঁড়াচ্ছেন না মুশফিক। নতুন কাউকে দেখা যাবে উইকেটরক্ষক হিসেবে।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগে থেকেই আলোচনায় উঠে এসেছিল বিষয়টি। ওয়ানডে ক্রিকেটে উইকেটরক্ষক হিসেবে থাকুন মুশফিক। কিন্তু টেস্টে খেলুন শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে। এমন প্রস্তাব দেওয়া হয় টাইগার টেস্ট অধিনায়ক মুশফিককে। বিসিবির প্রস্তাব মানেননি মুশফিক। মানেননি বলেই মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে আঙুলের ব্যথা নিয়েই উইকেট কিপিং করেন। এতে বিরক্ত হয় বিসিবি। আঙুলে ব্যথা পাওয়ার পর হঠাৎ করেই মুশফিক ছন্দ হারিয়ে ফেলেন টেস্টে। ওয়ানডে ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করলেও ২ টেস্টের চার ইনিংসে রান করেন ০, ১২, ০ ও ৩২। ব্যাটিংয়ের এই পারফরম্যান্সই বিসিবি সভাপতিসহ টিম ম্যানেজমেন্টকে উদ্বুদ্ধ করেছে কিপিং থেকে মুশফিককে বিশ্রাম দিতে। কাল জাতীয় দলের জার্সি উন্মোচনের পর বিসিবি সভাপতি বলেন, 'একটা কথা উঠেছিল মুশফিককে অধিনায়কত্ব থেকে সরানো নিয়ে। কিন্তু বিসিবি এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করেনি। হ্যাঁ একটি কথা আছে, যদি এমন হয় যে মুশফিক চাপ অনুভব করছেন, তখন তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাকেই ঠিক করতে হবে কোনটা রাখবে। আমি মনে করি প্রথমেই উঠে আসবে, উইকেটরক্ষক হিসেবে তিনি থাকতে চান কি না? তবে আমার কাছে খবর আছে, মুশফিক উইকেট কিপিং করতে চায়। এটুকু বলতে পারি, তার আঙুলের ইনজুরি যেহেতু পুরোপুরি সারেনি, তাই একটু সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। হয়তো এই সিরিজে সে কিপিং করতে নাও পারেন।'
২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের পর জাতীয় দলের পক্ষে খেলছেন এক দশক হয়ে গেল। শুরুতে স্থান নড়বড়ে থাকলেও এখন দলের মূল ব্যাটিং স্তম্ভ। গত এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ব্যাটিং করছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরিও করেন। ২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০ রানের ইনিংস খেলেন। এছাড়া গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন 'মিস্টার ধারাবাহিক' মুশফিক। কিন্তু খুলনা টেস্টে ক্যাচ ধরার সময় আঙুলে ব্যথা পান। এরপর হঠাৎ করে ফর্ম হারিয়ে ফেলেন। যদিও মিরপুর টেস্টে খেলেছেন ব্যথা নিয়েই। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট চাচ্ছে না মুশফিক কিপিং করুক। অবশ্য দেশের অন্যতম সফল এই ক্রিকেটার এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন ৪৫টি। ৩২.৩৪ গড়ে রান করেছেন ২৫৫৫। সেঞ্চুরি ৩টি। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ক্যাচ নিয়েছেন ৭৬টি এবং স্ট্যাম্পিং করেছেন ১১টি।
কাল বিসিবি সভাপতি শুধু মুশফিকের উইকেট কিপিং নিয়েই কথা বলেননি। কথা বলেছেন মহিলা ক্রিকেটারদের পাকিস্তান সফর এবং খালেদ মাহমুদ সুজনের ম্যানেজারশিপ নিয়েও। খালেদ মাহমুদ চাচ্ছেন না ম্যানেজারশিপ করতে। কিন্তু বোর্ড চাচ্ছে তাকে। তাই বিসিবি পরিচালক নাইমুর রহমান দুর্জয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাহমুদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য। যদি রাজি না হন, তাহলে আসন্ন ভারত সিরিজে ম্যানেজার হিসেবে নাইমুর রহমান কিংবা জালাল ইউনুসকে দেখা যেতে পারে।
মহিলা ক্রিকেট দলের এ মাসে পাকিস্তান খেলতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানকার টুর্নামেন্ট পিছিয়ে যাওয়ায় সেটা হচ্ছে না আপাতত। বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, সফর তখনই হবে, যদি মহিলা দল খেলতে রাজি হয়। তারা রাজি না হলে হবে না।