ইদের ছুটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে দাদুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলো ছোট্ট তাজরিনা। সকালে দাদুর বাড়ির বারান্দায় খেলতে খেলতে পুকুরে পড়ে যায় সে। অবশেষে বাড়ির পিছনে পুকুরে নেমে খোঁজাখুঁজি করতেই সন্ধান মেলে ছোট্ট তাজরিনার। কিন্তু ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে সে। কিন্তু তাকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে বাড়ির লোক শুরু করে দিল তুকতাক! জলরাক্ষস শিশুটিকে পুকুরে টেনে নিয়ে গেছে, এই দাবিতে চলল অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা। স্বাভাবিক ভাবেই, বাঁচানো যায়নি ছোট্ট শিশুটিকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী থানার ভাঙনখালি গ্রামের এই ঘটনায় আরও একবার সামনে এলো একবিংশ শতাব্দীতেও অন্ধ বিশ্বাসের প্রবহমানতার নজির । নাতনিকে খুঁজতে পুকুরে নেমে তাজরিনার দেহ খুঁজে পান দাদু কাজিমুদ্দিন শেখ। পুকুর থেকে তুললে দেখা যায় একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে সে। কিন্তু স্থানীয় হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না নিয়ে গিয়ে পাশের মসজিদ থেকে ইমাম সাহেব মিজানুর রহমান লস্করকে ডেকে এনে চলে ঝাড়ফুঁক। ইমাম সাহেব বলেন, জলরাক্ষস শিশুটিকে এই পুকুরে টেনে নিয়ে গিয়েছে। অতএব সেই রাক্ষসকে মারলেই শিশুটির দেহে প্রাণের সঞ্চার ঘটবে!
তাই প্রয়োজন তুকতাকের। ইমামের কথামতো শুরু হয় শিশুটিকে মাথায় নিয়ে জলের উপর ঘোরানো। পাশাপাশি, বাড়ির লোকেরা লাঠি দিয়ে পুকুরের জলে আঘাত করতে শুরু করেন। এমনকি বড় বড় গামলায় করে আগুন লাগিয়ে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এমন অদ্ভুত ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় মানুষজন ঘটনাস্থলে হাজির হন। দু’একজন শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও কেউ সে কথা শোনেনি। চলতে থাকে ঝাড়ফুঁক, তুকতাক। তাজরিনার দাদু কাজিমুদ্দিন শেখ বলেন, “বাচ্চারা জলে ডুবে গেলে এইভাবে জল পেটালে বা তুকতাক করলে ওরা বেঁচে যায়। কিন্তু আমার নাতনিকে ইমাম সাহেব বাঁচাতে পারেননি।” যদিও ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক তাপস রায় বলেন, “শিশুটিকে যখন পাওয়া গেলো, তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে এলে আমরা চিকিৎসা করার সুযোগ পেতাম। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিকিৎসাই শিশুর প্রাণ ফেরাতে পারতো। কোনও তুকতাকে জলে ডোবা শিশুদের বাঁচানো সম্ভব নয়।”