বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতীয় সংসদে বলেছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা রিফিউজি যারা এসেছে তাদের যথাসাধ্য সহযোগিতা দিচ্ছি। আমাদের যতটুকু করার করছি। কিন্তু স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা দুয়ার খুলে স্রোতের মতো তাদের আসতে দিতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশে যারা মিয়ানমারের ৯ বর্ডার গার্ড পুলিশকে হত্যা করেছে, সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেছে, তাদের কারণেই এটা হচ্ছে। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাল তাদের জন্যই হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু কষ্ট পাচ্ছে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা মিয়ানমারের দূতাবাসকে তাদের দেশের সরকারের কাছে ম্যাসেজটা দিতে বলেছি যে, এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি করবেন না, যেন ওখান থেকে রিফিউজি বাংলাদেশে আসে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ব্যবস্থা নিয়েছে। একদিকে মানবতার দিকটা দেখতে হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশে যেন কোনো অঘটন না হয় সেদিকটা দেখতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সূত্র ধরে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশ গুপ্ত রেডিও তেহরানকে বলেন, মিয়ানমারে যে নৃশংসতা চলছে তা কোন বিবেকমবান মানুষ মেনে নিতে পারে না। তিনি আশ্রয়প্রার্থী অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার পক্ষে মত দিয়ে বলেন, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বক্ষমতার দিকটিও বিবেচনা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ রেডিও তেরানকে বলেন, মিয়ামারের গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের শুধু আশ্রয় দেয়া নয়, প্রতিবেশী মুসলিম দেশ হিসেবে মিয়ানমারের মুষলমানদের রক্ষায় প্রয়োজনে জেহাদের ডাক দেয়া উচিত।
মিয়ানমারের মুমলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে হত্যা করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে, মুফতি ফয়জুল্লাহ মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানান।
এদিকে, গত দু’দিনে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর ৪টি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই ৯টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। এছাড়া উখিয়া সীমান্ত দিয়ে ৫ রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো হয়।
মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা, শিশুদের নির্যাতন এবং নারীদের ধর্ষণের প্রতিবাদে আজ রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জে এস ডি। সমাবেশে দলের প্রধান আসম আবদুর রব প্রশ্ন করেন-আর কত মুসলমান হত্যা হলে গণহত্যা বলা হবে? তিনি এ ঘটনায় জাতিসংঘ ও ওআইসি’র ভূমিকার ও সমালোচনা করেন।
মিয়ানমারে গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন।
বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় তাওহীদি জনতার ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। উপজেলার পুরাতন বাস স্টেশনের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন পেশার লোকজন স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।
ওদিকে গত মঙ্গলবার সুদূর নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির উদ্যাগে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে শত শত মানুষের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আবাস এবং বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারীদের জন্যে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহাতার পাশাপাশি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।
ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে বলা হয়েছে, মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেক বিদেশি নাগরিকও ছিলেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান বর্বরতায় ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও প্লাকার্ড বহন করে।
গত দুই সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনেসহ মোট ১০ টি স্থানে প্রবাসীদের বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে। তবে মঙ্গলবারের কর্মসূচি ছিল সবচেয়ে বড়।