আপনি আছেন » প্রচ্ছদ » খবর

কুমিল্লার রসমালাই এর আসল গোপন রেসিপি

কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু খাবার রসমালাই। নাম শুনলেই জিভে জল আসে। এই মিষ্টান্নের খ্যাতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও। লিখেছেন রায়হান আহমদ আশরাফী রসমালাইয়ের নাম বলতেই সবার আগে মনে হয় কুমিল্লার নাম। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হলেও কুমিল্লার রসমালাইয়ের স্বাদের তুলনা হয় না। কুমিল্লা কান্দিরপাড় মনোহরপুরে অবস্থিত মাতৃভান্ডার, ভগবতী, কান্দিরপাড়ের জলযোগ, জেনিস, পোড়াবাড়ি, পুলিশ লাইনের পিয়াসা, ঝাউতলার অমৃত সুইটস, পিয়াসার মিষ্টির দোকানগুলোতে পাবেন রসমালাই। তবে সবচেয়ে ভালো রসমালাই পাবেন মাতৃভান্ডার ও ভগবতী দোকান। কুমিল্লার মনোহরপুরের আনাচে কানাচে আছে রসমালাইয়ের দোকান। এসব দোকানো নেই কোন চাকচিক্য। বেশির ভাগ দোকানে বসার ব্যবস্থাও নেই।

প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় মনোহরপুরে বিভিন্ন স্তরের মানুষ ভিড় জমায় রসমালাই কেনার জন্য। ক্রেতাদের মধ্যে এক প্রকার প্রতিযোগিতা দেখা যায় গরম রসমালাই কার আগে কে কিনবে। ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় দোকানের কর্মচারীদের। বাংলাদেশে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটকরাও বেড়াতে এসে কিনে নিয়ে যান কুমিল্লার রসমালাই।

মাতৃভান্ডারে ১ কেজি রসমালাইয়ের দাম ২৪০ টাকা। অন্যান্য দোকানেও প্রায় একই দাম। বিক্রেতারা জানায়, শুধু মাতৃভান্ডারেই প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় লাখ টাকার রসমালাই। তবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায়। বিক্রির দিক থেকে মাতৃভান্ডারের পরই ভগবতী মিষ্টি দোকান। এই দোকানেও প্রতিদিন ৭০-৮০ হাজার টাকার রসমালাই বিক্রি হয়।

রসমলাই নাম শুনলেই জিভে জল আসে কুমিল্লার একাধিক সীমান্ত পথে অবৈধভাবে প্রতিদিন ২০/৩০ কেজি রসমালাই ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তারা জানায়, পূজাগুলোতে বর্ডার কিছুটা উন্মুক্ত হয়ে যায়। এই সুযোগে এসময় প্রতিদিন ৫/৬ মণ রসমালাই ভারতে যায়। অবৈধ পথে যাওয়ার ফলে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে, ব্যাঙের ছাতার মতই যত্রতত্র গড়ে উঠছে মাতৃভান্ডারসহ অন্য প্রসিদ্ধ রসমালাই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নকল শো-রুম। এতে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। কুমিল্লা জেলার রেলস্টেশন, গুরুত্বর্পূণ বাস স্ট্যান্ড, আলেখারচর বিশ্বরোড, ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, হাইওয়ে রোডের বড় বড় হোটেলগুলোসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আশেপাশে গড়ে উঠছে এসব নকল শো-রুম। লোকজন যাত্রাপথে রসমালাই কিনে নিয়ে যায়। তারা বঞ্চিত হচ্ছেন আসল রসমালাইয়ের স্বাদ থেকে। দামও রাখা হয় বেশি।

রেসিপি

খোঁজখবর আপনাদের জন্য রইল মনোহরপুরের সুস্বাদু রসমালাই প্রস্তুত প্রণালী। রসমালাই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া রেসিপি অনুযায়ী, প্রতি কেজি রসমালাই তৈরির জন্য ২ কেজি দুধ, চিনি ২ কাপ, কনডেন্স মিল্ক অর্ধেক কৌটা, কর্নফাওয়ার ১ চা চামচ, ২ চা চামচ গোলাপজল, এলাচ গুঁড়া আধা চা চামচ, রসগোল্লা, চমচম বা যে কোন ধরনের মিষ্টি আধা কেজি (বাজার থেকে কেনা)। তবে রসগোল্লা বেছে নেওয়াই ভালো। প্রথমেই মিষ্টিগুলো ছুড়ি দিয়ে কেটে ছোট ছোট পিস করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন ভেঙ্গে গুড়ো না হয়ে যায়। একটা বড় রসগোল্লা বা চমচম ৮/১০ টুকরো করতে হবে। ২ কেজি দুধ ভাল করে জাল দিয়ে প্রায় ১ কেজি পরিমাণ করে নিতে হবে। এবার এলাচ গুঁড়া , কনডেন্স মিল্ক ভাল করে মিলিয়ে নেড়ে দিতে হবে। চিনি মিলিয়ে নিতে হবে। কর্ণফাওয়ার ভিন্ন পাত্রে গুলে নিন। এবার আস্তে আস্তে দুধে ঢেলে নাড়তে থাকুন ঘন না হওয়া পর্যন্ত। খেয়াল রাখুন দলা না পাকিয়ে ভালভাবে যেন মিশে যায়। এবার কেটে রাখা মিষ্টির পিসগুলো ভালভাবে মিশিয়ে কিছুণ পর নামিয়ে বলে ঢেলে দিন। দুধে কর্নফাওয়ার মেলানোর কারণে মিষ্টির টুকরোগুলো ভাঙ্গবে না, রসমালাই ঘন হবে। মনে রাখবেন, দুধের পরিমাণ কম দেওয়া যাবে না। আর পাতলা দুধেও উপকরণ মেশাবেন না। দুধ জাল দিয়ে ঘন করে নিয়ম অনুযায়ী উপকরণগুলো মেলাবেন। এতে রসমালাই সুন্দর, সুস্বাদু এবং সুঘ্রাণযুক্ত হবে।