আপনি আছেন » প্রচ্ছদ » খবর

জেনে নিন 'রাশি' ওরফে গীতশ্রী সম্পর্কে কিছু তথ্য

পিতৃদত্ত নাম নাকি সিরিয়ালের চরিত্রের নাম, কোনটা বেশি পছন্দ ‘রাশি’ ওরফে গীতশ্রী রায়ের? অভিনয়ের বাইরে কেমন তাঁর জীবন? তাঁর অবসর, ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়রদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে খোলাখোলি মনের কথা শেয়ার করলেন ঊর্মি নাথের সঙ্গে।

আগে একটি সাক্ষাত্‌কারে বলেছিলেন, মাধুরী দীক্ষিতের নাচের এক্সপ্রেশন নকল করতেন বলে আপনাকে নাচের স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল।
ঠিকই (হাসি)। ছোট থেকেই মাধুরী দীক্ষিতের ফ্যান ছিলাম, খুব ইচ্ছে করত ওঁর মতো নাচতে। আমার এই ইচ্ছেটাকে আমার অভিভাবকেরা গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কত্থক, ভরতনাট্যম ও ওয়েস্টার্ন ডান্সে তালিম নিয়েছি।

 নাচের সূত্র ধরেই কি অভিনয়ে ডেবিউ?

উত্তর দু’টোই! হ্যাঁ এবং না। ছোটপর্দার অনেক অভিনেত্রীই আছেন, যাঁরা কোনও ডান্স রিয়্যালিটি শোর সূত্র ধরে অভিনয়ে এসেছেন। আমার ঠিক তেমন ভাবে অভিনয়ে আসা নয়। নাচের স্কুলের বন্ধু ও টিচারদের অনুপ্রেরণায় বলতে পারেন অভিনয়ে এসে পড়েছি। ওঁরা আমাকে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে বলতেন। নাচের স্কুলের এক বন্ধুর জোড়াজুরিতে ‘রাশি’-এর অডিশনে গিয়েছিলাম। পরের দিন আমাকে আবার ডাকা হল, ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়োতে। লুক টেস্টের পর জানতে পারলাম আমি সিলেক্ট হয়ে গিয়েছি। নাচের পাশাপাশি অভিনয়ের প্রতি একটা ভালবাসা ছিল। সেটা অবশ্য তৈরি হয়েছিল আমার মাসি অসীমা রায়ের উত্‌সাহে। মাসি একটি নাট্য দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছোটবেলায় আমাকে ওঁর দলের নাটক দেখাতে মাঝে মধ্যেই নিয়ে যেতেন। কখনও টুকটাক শিশু চরিত্রেও অভিনয় করেছি। কিন্তু আমি কোনও দিন ভাবিনি, অভিনেত্রী হব (হাসি)। আসলে যখন অডিশন দিই, তখনও আমার পড়া শেষ হয়নি, বাবারও অভিনয়ে প্রবল আপত্তি ছিল। যাইহোক, এখন সব ম্যানেজ হয়ে গিয়েছে (হাসি)।

‘গীতশ্রী’ না ‘রাশি’ কোনও নামে সাড়া দেন?
দু’টোতেই। যাঁরা আমাকে ছোট থেকে গীতশ্রী বলে ডাকতেন তাঁদের কাছে আজও আমি গীতশ্রী বা গীত। নতুনরা অবশ্য রাশি বলে ডাকেন। কখনও কোনও আত্মীয় বারবার ফোন করে আমাকে না পেলে, এসএসএম করে, ‘রাশি ম্যাডাম এবার ফোনটা তুলুন’ (হাসি)।

টানা তিন বছর একই মেগায় অভিনয় করতে একঘেয়ে লাগছে না?
মনোটোনাস লাগেনি বললে মিথ্যে বলা হবে। কিন্তু এই সিরিয়ালে ‘রাশি’-র চরিত্রে এতগুলো শেডস আছে যে, সে একঘেয়েমি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

এর পরে কী আবার মেগা করবেন, না সিনেমার জন্য চেষ্টা করবেন? সিনেমায় অভিনয়ের জন্য অফার আসেনি?
অফার এসেছিল। আমাকে টানা ১০-১২ দিন সময় দিতে হত। কিন্তু মেগা করতে-করতে ১০-১২ দিন টানা সময় দেওয়া সম্ভব নয়। তাই করতেও পারিনি। ‘রাশি’ শেষ না হলে সিনেমা করার কথা এখন ভাবতেই পারব না, সময়ই নেই। তা ছাড়া, সিনেমার অফার এলেই যে করব এমন নয়। চরিত্র নিয়ে আমার একটু বাছবিচার আছে। এখন বাংলা ছবিতে অনেক বিষয় নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে। অনেক নতুন বিষয় সিনেমার মাধ্যমে সামনে আসছে। সেই ধরনের ছবিতে অভিনয় করার ইচ্ছে আছে। এমন কোনও চরিত্রে অভিনয় করব, সেটা যেন কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ হয়। ভাল চিত্রনাট্য, গল্প , সংলাপ থাকলে না করার কোনও প্রশ্নই নেই। সিনেমায় ভাল অফার না পেলে মেগাই করব।

অভিনয়ের জন্য মুম্বই যাওয়ার ইচ্ছে নেই?
আমাকে কেউ নেবে না (হাসি)।

কেন?
আরে, আমার চেয়ে কত সুন্দর-সুন্দর নায়িকা আছেন। তাঁদের বাদ দিয়ে আমায় নিতে যাবে কেন? (হাসি)।

হিন্দি সিরিয়ালে তো ট্রাই করতে পারেন? মুম্বইতো মেগার স্বর্গরাজ্য।
তা অবশ্য ঠিক। মুম্বইয়ে আমার অনেক আত্মীয় আছেন। থাকতে চাইলে কোনও অসুবিধাই নেই। চেষ্টা করাই যায়। কিন্তু জানেন, আমি না একটু ঘরকুনো। কলকাতা ছেড়ে নড়তে আমারই মন চায় না (হাসি)।

‘বাহা’, ‘টুসু’, ‘ঝিলিক’, ‘কাজ’ু প্রমুখর সঙ্গে ‘রাশি’র প্রতিযোগিতাটা কেমন?

চরিত্রের দিক দিয়ে দেখলে, হ্যাঁ একটা প্রতিযোগিতা আছে। আমারা প্রত্যেকেই চাই সেরা হতে। অভিনয়ের দিক থেকে একে অপরকে টেক্কা দিতে চাই। প্রতিযোগিতা যে আছে এটা ষোলো আনা সত্যি। কিন্তু আসল প্রতিযোগিতা কিন্তু নিজের সঙ্গে! নিজের সঙ্গে নিজের প্রতিযোগিতা না থাকলে কাজ ভাল করা যায় না। চরিত্রের বাইরে যখন আমরা বেরিয়ে আসি তখন কিন্তু কোনও প্রতিযোগিতা নেই। কোনও ফাংশনে বা পার্টিতে দিব্যি গল্প করতে দেখতে পাবেন সকলকেই। তবে হ্যাঁ, কখনও মঞ্চে যদি চরিত্র হিসেবে একে অপরের সঙ্গে পারফর্ম করতে হয়, তখন কিন্তু প্রত্যেকে তাঁদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে একটা প্রতিযোগিতা চলেই আসে।

অভিনেত্রী হওয়ার পর কতটা পরিবর্তন এসেছে লাইফস্টাইলে?
কিছুটা তো বদল হয়েছে। যেমন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারি না, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে পারি না, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে শপিং করতে পারি না। এছাড়া বাকি সব আগের মতোই আছে।

শোনা যায়, অভিনেত্রী হয়েও নাকি, আপনার অভিধানে জিম শব্দটি নেই?

ঠিকই শুনেছেন (হাসি)। জিম শব্দটি আমার কাছে যমের মতো। যখন রেগুলার নাচ করতাম, তখন তো আলাদা করে শরীর চর্চা করতে হয়নি, কিন্তু মেগা শুরু হওয়ার পর, নাচ রেগুলার করতে পারি না, ফলে মোটা হয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এক মাস হল, আমি পাওয়ার যোগা শুরু করেছি। বাড়িতেই যোগা টিচার আসেন।

 

মাচা শোগুলো করার অফার পান?
প্রচুর। এই শোগুলো করতে গিয়ে ভক্তদের কাছাকাছি আসা যায়। স্টেজে একটা করে গান শেষ হয় আর হাততালি পড়ে। খুব ভাল লাগে, দর্শকদের সরাসরি রিঅ্যাকশন পেয়ে, যেটা শুটিংয়ে সম্ভব নয়।

 

গান! আপনি গানও করেন?
হ্যাঁ (হাসি)। প্রধানত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছি। একটু ক্ল্যাসিক্যালেও তামিল নিয়েছি। অবশ্য এই সব অনুষ্ঠানে এখনকার ফিল্মের গান গাইতে হয়। কোনও অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে মিউজ়িশিয়ানদের সঙ্গে একটু ঝালিয়ে নিই। এর বেশি সময় অবশ্য গানের জন্য দিতে পারি না।

 

এখন যে সব নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মূখ্য চরিত্র দিয়ে অভিনয়ে ডেবিউ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ শোনা যায়, বিশেষ করে সিনিয়র অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছ থেকে। এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলবেন?
অভিযোগ (বিস্ময়)! কী রকম অভিযোগ?

 

নতুনরা অনেক সময় সিনিয়রদের সম্মান করেন না, তাঁদের শেখারও কোনও ইচ্ছে নেই, কাউকে ভুল ধরিয়ে দিলে, সে নাকি কেঁদে-কেটে একসা করে…
(একটু ভেবে) অভিযোগটাকে একেবারে উড়িয়ে দিতে পারি না। এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা স্টুডিয়োতে পা দিয়েই অস্বাভাবিক আচরণ করেন। যা সত্যি শোভনীয় নয়। কিন্তু আমাকে নিয়ে এমন অভিযোগ কেউ করেছে বলে শুনিনি।

 

উল্টোটা কখনও হয়েছে, মানে সিনিয়রদের র্যাগিং সহ্য করতে হয়েছে?

না…না। আমি অন্তত এই সমস্যা ফেস করিনি। ‘রাশি’র সেটে প্রথম দিন থেকে সিনিয়রদের সঙ্গে মিশে যেতে পেরেছি। এটা হয়তো সিনিয়ররা আমাকে স্পেস দিয়েছেন বলে সম্ভব হয়েছে। তিন বছর পর, এখন তো পুরো ঘরোয়া পরিবেশ। গোটা ইউনিট একটা ফ্যামিলি হয়ে গিয়েছে।

 

অবসরে কী করেন?

আমার জীবনে অবসর খুবই কম কিন্তু তা পেলেই হয় আমি বই পড়ি না হলে ঘুরতে চলে যাই। বছরে আমি সাত থেকে দশ দিন ছুটি নিই। তখন বেড়াতে যাবই। সিকিম আমার প্রিয়। তাই বারে-বারে সিকিমেই যাই। আর বইয়ের ব্যাপারে আমি চেতন ভগতের বড় ফ্যান। শুনলে হয়তো অবাক হবেন, প্রায় তিন মাস অন্তর-অন্তর ‘চাঁদের পাহাড়’ বইটি পড়ি। তসলিমা নাসরিনও আমার অন্যতম প্রিয় নায়িকা।


 

বইমেলা গিয়েছিলেন।
গিয়েছিলাম, কিন্তু চ্যানেলের অনুষ্ঠানে। ঘুরে দেখা হয়নি।

 

নিজের রোজগারের অর্থ কীভাবে খরচ কর?
আমার আয়ের সিংহভাগ বেরিয়ে যায় শপিং করতে আর ঘুরতে যেতে। এই তো কিছুদিন আগে মুম্বই গিয়ে বিস্তর জামা কাপড় কিনে পুরো ফতুর হয়ে ফিরলাম। মাসের শেষে বাবা আমাকে হাত খরচ দিয়ে সাহায্য করে (হাসি)। তবে পুজো বা বড়দিনে কোনও অনাথ আশ্রম বা বৃদ্ধাশ্রমে কিছু অর্থ দান করি।

 

কী ধরণের পোশাক পরতে ভালবাস?
শাড়ি আমার প্রিয় পোশাক। তবে জিন্স ও টিশার্টে আমি স্বচ্ছন্দবোধ করি। আমার কাঁধ চওড়া বলে অফ শোলডার পোশাক পরি না, কিন্তু পা সুন্দর বলে হট প্যান্টে আমাকে বেশ মানিয়ে যায়।

 

ইংলিশে এমএ-টা করবেন না?
ধুস! সময়ই পাই না। অনেকে অভিনয়ের পাশাপাশি পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারেন, আমার দ্বারা দুটো সিরিয়াস কাজ একসঙ্গে হবে না। তাই এমএ না করার দুঃখ ভুলে অভিনয়ে মন দিয়েছি।

 

বিয়ে করছেন কবে? নাকি সেটা করারও সময় নেই?
ও সব এখন নয়। বাড়ি থেকেও কোন চাপও নেই। মা সকলকে বলেছেন, বিশেষ করে আত্মীয়স্বজনদের যে, আমার ২৫-এর আগে যেনো ওসব নিয়ে প্রশ্নই কেউ না তোলে। মা বলেন, আগে কেরিয়ার পরে বিয়ে। সে দেরি হলে হবেক্ষণ! সুতরাং আমার নো চাপ (হাসি)।

 

মার চাপ নেই বলে কি বয়ফ্রেন্ডের চাপ নেই?

না ওই চাপটাও নেই। কারণ বয়ফ্রেন্ড নামক মানুষটিই আমার জীবনে এখনও আসেননি (হাসি)! কী করব বলুন, কেউ বিশ্বাস করে না। কিন্তু ওই প্রেম ব্যাপারটা আমার দ্বারা হয় না। তবে একটু-আধটু ভাল লাগে একজনকে। ইন্ডাস্ট্রির কেউ নন। (সলজ্জ হয়ে)। নাম জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ়।

- আনন্দলোক