পদ্মা সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ার (খুঁটি) উঠে গেছে। এখন বাকী শুধু পিয়ার ক্যাপ। এই পিয়ার ক্যাপ ঢালাইয়েও কর্মসূচী চূড়ান্ত হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে জাজিরা প্রান্তের ৩৭ নম্বর পিয়ারের খুঁটির দ্বিতীয় ধাপের কাজ অর্থ্যাৎ ঢালাই ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ হয়। এখন এ পিলার দু’টি চূড়ান্ত ধাপ অর্থ্যাৎ পিয়ার ক্যাপের করার প্রস্তুতি চলছে। ক্যাপের জন্য রডের বিশাল খাচা করা হচ্ছে কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের পাশে ভাসমান জেডিতে। মধ্য সেপ্টম্বরে ৩৮ নম্বর পিলারের ক্যাপ ঢালাই হবে। এর দু’দিন আগে ৩৭ নম্বর পিলারের ক্যাপ ঢালাই হবে। পিলারের শেষ ধাপের দু’টি ক্যাপ ঢালাইয়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে এখন সংশ্লিষ্টরা ব্যস্ত। এই ক্যাপ ঢালাইয়ের ১৪ দিনের মাথায়ই সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান) স্থাপন উপযোগী হবে। তাই এখন পদ্মা সেতুর দৃশ্যমানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। সংশ্লিষ্টরা চাচ্ছেন সেপ্টেম্বরের মধ্যেই স্প্যান স্থাপন করতে। সেই লক্ষ্যে সব প্রচেষ্টাই চলছে এখন। এদিকে ৩৯ নম্বর পিয়ারে পাইল কেপিং শেষ। এখন পিলারের রড বাধাই হচ্ছে শীঘ্রই প্রথমধাপে ঢালাই হবে। ৪০ নম্বর পিলারে পাইল ক্যাপিয়ের বটম সেকশনের কাজও চলছে। তবে গত ১৩ দিন ধরে পাইল ড্রাইভ বন্ধ রয়েছে হ্যামারের কারণে। তাই ৪১ নম্বর পিলারসহ অন্যান্য চলমান পিয়ারে পাইল ড্রাইভ হয়নি। এদিকে ১৯ কিলোজুল ক্ষমতার হাইড্রোলিক হ্যামারটি এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। এটি ১৩ আগস্ট মাওয়ায় পৌঁছে। এরপর ব্যবহার উপযোগী করার কাজ শুরু হয়। ২০ আগস্ট থেকে ১৪ নম্বর পিলারে পাইলিং ড্রাইভ শুরু করার কথা ছিল।
তবে এখনও তা শুরু করতে পানি। দায়িত্বশীলরা জানান, ২/৪ দিনের মধ্যেই এই নতুন হ্যামারটি কাজ শুরু করতে পারবে। এই হ্যামার ১৪ নম্বর পিলারের পাশাপাশি ১৩ ও ১৫ নম্বর পিলারেও পাইল বসাবে। এদিকে নিয়মিত মবিলবদলসহ সংস্কার কাজের কারণে ২৪ শ’ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যমারটিও কাজে নেই। তবে এটিও সচল হতে যাচ্ছে। দু’ হ্যামার এক যোগে পাইল ড্রাইভ শুরু করবে। এরপর আবার নভেম্বরে যোগ দিবে সাড়ে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার নতুন আরও এক হ্যামার। মাওয়া প্রান্তে সেতুর সংযোগ সেতুর কাজ চলছে। তবে প্রথম পাইল স্থাপানের কাজ এখন চলছে। তবে শুরুর পাইল, তাই বিভিন্ন কারণেই কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। ১ম পাইলটি বসে যাওয়ার পরই পরবর্তী পাইলগুলো দ্রুত স্থাপন হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীগণ। এই প্রান্তে ১৭২টি পাইল বসবে। মাওয়া প্রান্তের সংযোগসেতুর কাজ শুরু হয় গত শুক্রবার থেকে। অপর প্রান্ত জাজিরায় এই সংযোগ সেতুর ১৯৩ টি পাইলের মধ্যে ১৬০টি পাইল বসেগেছে। এছাড়া জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বার পিলারে ১৬টি পাইলের কংক্রিটিংও এগিয়ে চলছে। এদিকে পদ্মায় এখন প্রবল স্রোত। এই স্রোতের মধ্যেই সেতু নির্মাণ চলছে। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, এই স্রোত এর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই সর্তকতার সাথে কাজ করা হচ্ছে। এদিকে জাজিরা প্রান্তে নদী শাশনের পরীক্ষামূলক ব্লক ফেলা বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। অন্যান্য স্থানে স্লপিংয়ের কাজ চলছে। নদী শাশনের ড্রেজিং হচ্ছে জাজিরা প্রান্তের ব্লক ১২ এবং পদ্মা মাঝামাঝি স্থান ব্লক ৬। তবে নদী শাসনে মাওয়া প্রান্তে ভরা বর্ষার কারণে কাজ চলমান নেই। তবে বর্ষা বিদায় নেয়ার পরই কাজ শুরু হবে।
এদিকে মাওয়া এলাকায় বিপুলসংখ্যক ব্লক তৈরি করে রাখা হয়েছে। এই ব্লকে আশপাশের এলাকায় স্তূপ করা। শিমুলিয়া ফেরি ঘাট এলাকায়ও ব্লকের স্থুপ থাকার সমস্যা হচ্ছে। এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার শিমুলিয়া ঘাটে অনুষ্ঠিত মুন্সীগঞ্জ জেলার বিশেষ আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়। এদিকে পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলারের চূড়ান্ত ডিজাইন অনুমোদনের কাজ চলছে। বৃটিশ ‘কাউই’ নামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এই কাজটি করছে। আগামী সেপ্টম্বরে এই ডিজাইনটি অনুমোদনের সম্ভবনার কথা নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বশীলরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজ প্রায় ৩০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। আসন্ন ঈদে পদ্মা সেতুতে কর্মরত শ্রমিকদের ছুটি দেয়া হলেও বিগত ঈদের মতই সেতুর কাজ চলমান থাকবে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জনান, পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাসহ স্থানীয় প্রশাসন যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পদ্মা সেতু বাঙালি জাতির একটি গর্বের প্রকল্প। তাই এ দিকে বিশেষ নজর রয়েছে। আর নানা চ্যালেঞ্জ সফলতার সাথে মোকাবেলা করেই এগিয়ে চলেছে এর বাস্তবায়ন।