রংপুর রাইডার্সকে ৭২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)-এর ফাইনালে ওঠেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে কোয়ালিফায়ারে শনিবার টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রংপুরের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এই ম্যাচে জাইদির অল রাউন্ড নৈপুন্যে সাকিবদের উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালের সপথে এগিয়ে যায় মাশরাফির কুমিল্লা। ব্যাট হাতে ১৫ বলে ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পাশাপাশি বল হাতে ৪ উইকেট শিকার করেন কুমিল্লার জাইদি।
মিরপুরের ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপর্যয়ের মুখেই পড়েছিল কুমিল্লা। সেই বিপর্যয় সামলে ইমরুল কায়েসের ৬৭ ও জাইদির ৪০ রানে ভর করে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান করে তারা। জয়ের জন্য ১৬৪ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে বিপদে পড়া রংপুর কখনোই ম্যাচে ফিরতে পারেনি। সিজেদের কোটার পুরো ২০ ওভার ব্যাটিংই করতে পারেনি রংপুর। ১৭ ওভারে ৯১ রানে অল আউট হয়েছে তারা। ফাইনালে উঠতে হলে এলিমিনেটর ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে জিততে হবে রংপুরকে।
ব্যাট করতে নেমে পঞ্চম ওভার পর্যন্ত নিরাপদ ছিল রংপুর। ৩৬ রান আসে লেন্ডল সিমন্স ও সৌম্য সরকারের ওপেনিং জুটিতে। এরপর সৌম্যর তুলে দেয়া বল লং অফে ধরতে পারেননি আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু আবু হায়দারের পরের বলেই বাউন্ডারি লাইনে শুভাগত হোম চমৎকার এক ক্যাচ নিয়েছেন। ৯ রানে বিদায় সৌম্যের। পরের বলেই লেন্ডল সিমন্সকে (২৫) বোল্ড করে দেন আবু হায়দার। হ্যাটট্রিকের সুযোগটা মিস হয়েছে।
অষ্টম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন জাইদি। বলের লাইন মিস করে সামনে চলে যাওয়া মোহাম্মদ মিথুন (৫) স্টাম্পিংয়ের শিকার হন। পরের বলেই রংপুর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (০) মাহমুদুল হাসানকে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন।
এরপর মাশরাফি শিকার করেছেন মোহাম্মদ নবিকে (১২)। পরের ওভারে জাইদি তার তৃতীয় উইকেট পেলেন। জহুরুল ইসলামের (৯) ক্যাচ অনেকটা দৌড়ে নিয়েছেন আবু হায়দার। দ্বাদশ ওভারে ৬২ রানে ৬ উইকেট হারানো রংপুর পথ হারিয়ে বসে। আর পথে ফিরতে পারেনি তারা।
আল আমিনকে বোল্ড করেছেন রাসেল। আবু হায়দারের বলে থিসারা পেরেরার ক্যাচ ছাড়েন শেহজাদ। এক বল পরই পেরেরাকে (১১) বোল্ড করে দেন আবু হায়দার। শেষ ব্যাটসম্যান আরাফাত সানিকেও বোল্ড করেছেন তিনি। ১১ ম্যাচে ২১ উইকেট নেয়া আবু হায়দার এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী।
এর আগে ওপেন করতে নেমে ইমরুল কায়েস ও লিটন দাশ খেলে ফেলেন ইনিংসের অর্ধেকটা। শুরুটা তেমন ঝড়ো হয়নি। কিন্তু রানের চাকা ঘুরছিল। পঞ্চম ওভারে সাকিবকে একটি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন ইমরুল। ওই ওভার থেকে এসেছে ১৩ রান। লিটনের চেয়ে আগ্রাসী ব্যাট করে যাচ্ছিলেন ইমরুল।
১০.৫ ওভারে ৭৯ রান ছিল কুমিল্লার। কোনো উইকেট হারায়নি। কিন্তু এরপর মড়ক লাগে তাদের ইনিংসে। লিটন ২৮ রান করে সাকলাইন সজীবের বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়েছেন। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ৩ নম্বরে এসেছিলেন। আন্দ্রে রাসেল ৪ নম্বরে। কাজে লাগেনি। ১ রান করেই থিসারা পেরেরার বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মাশরাফি।
৩৩ বলে এবারের আসরে প্রথম ফিফটি করলেন ইমরুল। সাকিবকে আরেকটি ছক্কাও মারলেন। কিন্তু ১৬তম ওভারটি কুমিল্লাকে উপহার দিল দুঃস্বপ্ন। এই ওভারে তিনটি উইকেট নিলেন পেসার থিসারা পেরেরা। তার স্লোয়ার ঠিক মতো বুঝে না ওঠায় ফিরতি ক্যাচ দিলেন ইমরুল। ফলো থ্রুতে চমৎকারভাবে ক্যাচটা নিয়েছেন পেরেরা। ৪৮ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬৭ রান করেছেন ইমরুল। ওভারের শেষ দুই বলে রাসেল (৩) ও আহমেদ শেহজাদকে (০) তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান পেরেরা। ১১২ রানে ৫ উইকেট হারায় কুমিল্লা।
পরের ওভারে পেরেরা হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। তবে অলক কাপালির (২) উইকেট তুলে নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার পেয়েছেন। ৪ ওভারে ২৬ রানে ৫ উইকেট শিকার তার। এবারের বিপিএলে দ্বিতীয় সেরা বোলিং এটি।
এই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে এক প্রান্ত ধরে রেখে ঝড়ো আক্রমণ চালিয়ে গেছেন আশার জাইদি। সাকিবকে তার মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মেরেছেন। শেষ ওভারে মোহাম্মদ নবির কাছ থেকে ১৮ রান নিয়ে আরেকটু এগিয়েছে কুমিল্লা। এই ওভারে একটি চার ও ছক্কা মেরেছেন জাইদি। জাইদি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ১৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রান করে।
এই ম্যাচে জেতা দল সরাসরি চলে যাবে ফাইনালে। হারা দলের আরেকটি সুযোগ থাকবে। এলিমিনেটর ম্যাচে জেতা দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবে তারা। ওই ম্যাচে যে জিতবে সে যাবে ফাইনালে।