এক সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। সোনিকা নেই। গত ২৯ এপ্রিল। ভোররাত। লেকমলের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনা। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কাচের গাড়িতে শুয়ে তাঁদের আদরের সোনুর চিরবিদায় হয়ে গেল তা এখনও মানতে পারছেন না সোনিকার বন্ধুরা। তাঁর বাবা-মা, আদরের ভাইঝি সকলেই এখনও ঘোরের মধ্যে রয়েছেন। পারতপক্ষে কারও সঙ্গে কথা বলতেই চাইছেন না।
সে দিনের দুর্ঘটনায় আহত বিক্রম (তিনিই ছিলেন গাড়ির চালক) হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে আগাম জামিনও পেয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠকে সোনিকার জন্য তাঁর চোখের জল দেখেছেন সকলে। এর পরই ঘটনা যেন অন্য দিকে মোড় নিয়েছে।
আরও পড়ুন, খুব কষ্ট! সাংবাদিক বৈঠকে চোখে জল বিক্রমের
সোনিকার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর মা-বাবা সোনিকার মৃত্যুর জন্য অভিযোগের আঙুল তুলছেন বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের দিকেই। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং ট্রাফিক আইন না মেনে চলার জেরেই প্রাণ গেল সোনিকার, এমনই মনে করছেন তাঁর বন্ধুরাও। ফেসবুকে তাঁরা ‘জাস্টিস ফর সোনিকা’ নামে একটি পেজ খুলেছেন। তাতে একাধিক লেখা এবং ছবি আপলোড করা হচ্ছে। তাঁরা বারবারই অভিযোগ করছেন বিক্রমের বিরুদ্ধে। দাবি জানাচ্ছেন, সে রাতে একাধিক ক্লাবে গিয়ে বিক্রম ও তাঁর বন্ধুরা মদ্যপান করেছিলেন।
‘জাস্টিস ফর সোনিকা’ এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু মানুষ বিক্রমকে টার্গেট করে বিভিন্ন কথা বলছেন। এঁদের অনেকেই সোনিকার ঘনিষ্ঠ বলে নিজেদের দাবি করছেন। অনেকেই টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত।
মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুকাণ্ডে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, গত ২৮ এপ্রিলের রাতভর চলা পার্টিতে সত্যিই কি বিক্রম নেশাগ্রস্থ ছিলেন? সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বিক্রম নিজে সে অভিযোগ অস্বীকার করলেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় অঙ্কিতা বি বন্দ্যোপাধ্যায় নামে জনৈক ব্যক্তির দাবি, দুটি আলাদা জায়গায় বিক্রমকে মদ্যপান করতে দেখেছেন তিনি ও তাঁর বন্ধুরা। তাঁর দাবি, ‘…মনে রেখো তুমি মদ্যপান করেছিল না করোনি, তা কিন্তু অনেকেই দেখেছেন। ফলে তোমার বয়ান মিথ্যে প্রমাণিত হতে পারে। তোমার জন্য লজ্জা হচ্ছে। অন্তত সত্ থাকতে পারতে। এত মিথ্যে কথা বলাটা নিজের বিবেকের কাছে বোঝা মনে হচ্ছে না?’
গত শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিক্রম কেঁদে জানিয়েছিলেন, সোনিকার জন্য তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে। সেই কান্নাকেও ‘কুম্ভীরাশ্রু’ বলে ফেসবুকে ব্যখ্যা করেছেন জনৈক ব্যক্তি। তিনি আরও জানান, সোনিকার পরিবারের সঙ্গে তিনি দেখা করবেন। ফেসবুকে নভোলীন দাশ নামে জনৈক ব্যক্তির প্রশ্ন, ‘এমন একটা ঘটনার এক সপ্তাহ পর সোনিকার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার কথা মনে হল বিক্রমের?’
এই ‘জাস্টিস ফর সোনিকা’ পেজে আপলোড হওয়া ছবি এবং পোস্টগুলো সোনিকার বিশেষ বন্ধু সাহেব ভট্টাচার্য শেয়ার করছেন নিজের ফেসবুক ওয়ালে। সে বিষয়ে যদিও তিনি একেবারেই মুখ খুলতে চাননি। এই প্রোফাইলটি কি তিনিই মেনটেন করেন? এ নিয়েও কোনও কথা বলতে চাননি সাহেব। সাহেবের আর একটি প্রোফাইলে সোনিকার সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। তবে সেখানে বিক্রম সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা ‘জাস্টিস ফর সোনিকা’ হ্যাশট্যাগ দেওয়া পোস্টগুলির কোনও শেয়ার হয়নি। রবিবার সাহেব আনন্দবাজারকে শুধু বলেন, ‘‘তদন্তেই সব উঠে আসবে। তার আগে কিছু বলতে চাই না। তবে সোনিকার মৃত্যুর পরেও ওর বন্ধুরা ওর পাশে আছে। এই বিষয়ে আর কিছু বলার মতো অবস্থায় আমি নেই।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনিকা-বিক্রমের সঙ্গে ২৮ এপ্রিলের পার্টিতে তাঁদের যে বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের সবাইকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা। এরপরে বিক্রমের বয়ান রেকর্ড করার পরে তাঁদেরও বয়ান রেকর্ড করা হবে।
- আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে