স্বাগতিক শ্রীলংকার বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ২৫৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে সফরকারী বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য ৪৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনের দ্বিতীয় সেশন ১৯৭ রানেই গুটিয়ে যায় টাইগাররা। এতে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিক শ্রীলংকা। ম্যাচ বাঁচাতে শেষ দিনের তিনটি সেশন কাটিয়ে দিতে হবে নির্বিঘ্নে— এমন সমীকরণ সামনে রেখে ১০ উইকেট হাতে নিয়েই শনিবার সকালে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। তবে শুরুতেই চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান দলের প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটসম্যান।
এই বিপর্যয় আর কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। মাঝে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন দাস প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। লাঞ্চের পর এ দু’জন আউট হওয়ার পরই কার্যত শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত দিনের দ্বিতীয় সেশনেই ১৯৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
আগের দিন কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৭ রান তোলা বাংলাদেশের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার শনিবার সকালে ফের ব্যাট করতে নামেন। তবে দিনের প্রথম সেশনেই টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ম্যাচ বাঁচানোর স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে সফরকারীদের।
দিনের শুরুতেই বাংলাদেশের ইনিংসে আঘাত হানেন গুনারতেœ। আগের দিন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে অর্ধশতক (৫৩) তুলে নেওয়া সৌম্য এদিন আর কোনো রান করার আগেই গুনারতেœর করা দিনের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান।
এরপর ব্যাট করতে নামা মুমিনুলও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দিলরুয়ান পেরেরার করা দিনের চতুর্থ ওভারেই এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যাওয়অর আগে তিনি করেন ৫ রান।
নিজের পরের ওভারে বল করতে এসে আবারও আঘাত হানেন পেরেরা। এবার তার শিকার বাংলাদেশের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। আগের দিন ১৩ রানে অপরাজিত থাকা তামিম এদিন আর মাত্র ৬ রান করার পর গুনারতেœর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৮৩ রান।
এরপর দলীয় ১০৪ রানে বাংলাদেশের ইনিংসে জোড়া আঘাত হানেন লংকান অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ। তার ঘূর্ণি জাদুতে এক বলের ব্যবধানে বিদায় নেন সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ। হেরাথের ব্যক্তিগত সপ্তম ওভারের চতুর্থ বলে প্রথমে আউট হন সাকিব। লেগ স্লিপে দিমুথ করুনারতেœর হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগে তিনি করেন ৮ রান।
একই ওভারের শেষ বলে মাহমুদুল্লাহকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরত পাঠান হেরাথ। মাহমুদুল্লাহ কোনো রানই করতে পারেননি।
এই অবস্থায় অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান লিটন দাস প্রতিরোধ গড়ে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে মধ্যাহ্ন বিরতির পরপরই মুশফিককে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে প্রতিরোধ ভাঙেন লংকান চায়নাম্যান স্পিনার লাকশান সান্দাকান।
দুই ওভার পর বোলিংয়ে এসে লিটন দাসকে সাজঘরে ফেরত পাঠান লংকান অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ। উপুল থারাঙ্গার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে লিটন করেন ৩৫ রান।
লংকান অধিনায়ক এরপর তাসকিন, মুস্তাফিজ ও মিরাজকেও একে একে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস একাই গুটিয়ে দেন। এদের মধ্যে মিরাজ ২৮ ও তাসকিন ৫ রান করেন।
শ্রীলংকার গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৪৯৪ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় শ্রীলংকা। দলের পক্ষে কুশল মেন্ডিস সর্বোচ্চ ১৯৪ রান করেন। এছাড়া গুনারতেœ ৮৫, ডিকওয়েলা ৭৫ ও দিলরুয়ান পেরেরা ৫১ রান করেন।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদি হাসান মিরাজ ১১৩ রানে ৪টি উইকেট নেন। এছাড়া ৬৮ রানের বিনিময়ে দুই উইকেট নেন মোস্তাফিজ।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩১২ রানেই অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। দলের পক্ষে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন। এছাড়া সৌম্য সরকার ৭১ ও তামিম ইকবাল করেন ৫৭ রান।
প্রথম ইনিংসে শ্রীলংকার দিলরুয়ান পেরেরা ৫৩ রানে তিনটি এবং রঙ্গনা হেরাথ ৭২ রানে তিনটি উইকেট নেন।
প্রথম ইনিংসে ১৮২ রানের লিড পাওয়া শ্রীলংকা ম্যাচের চতুর্থ দিনে চা বিরতির পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭৪ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। এতে তাদের লিড বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫৬ রানে। ফলে জয়ের জন্য ৪৫৭ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলংকার পক্ষে উপুল থারাঙ্গা সর্বোচ্চ ১১৫ রান করেন। এছাড়া দিনেশ চান্ডিমাল করেন ৫০ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদি হাসান মিরাজ ৭৭ রান ২টি এবং সাকিব ১০৪ রানে ২টি উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে ১৯৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে ম্যা সেরা হয়েছেন লংকান ব্যাটসম্যান কুশল মেন্ডিস।