নিয়মের বাইরে গবেষকরা গবেষণা করে নানাভাবে চমক দেখিয়ে আসছেন। এমনই এক অদ্ভুত গাছের আবিষ্কার করেছেন আমেরিকার এক গবেষক। ওই অদ্ভুত এক গাছেই ধরেছে ৪০ ধরনের ফল! আম গাছে আম ধরবে, নারকেল গাছে নারকেল ধরবে এমনটাই নিয়ম। কিন্তু মাঝে-মধ্যেই সেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে থাকে। এবারও তাই ঘটেছে। একটি গাছে ধরেছে ৪০ ধরনের ফল। আর এটি সম্ভব করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিরাসিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যাম ভ্যান অ্যাকেন। তার উদ্ভাবিত এই গাছটির নাম ৪০ ফলের গাছ।
এই গাছে কাগজী বাদাম, বরই, এপ্রিকট, চেরী, পীচ জাতীয় ফলের সন্ধান পাওয়া যায়। অদ্ভুত ধরনের এই গাছটি নিয়ে অধ্যাপক স্যাম ভ্যান অ্যাকেনকে বহু পরিশ্রম করতে হয়েছে। ৯ বছর ধরে তাকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। এই গাছটি সৃষ্টি করার জন্য তিনি নানা জাতের গাছের বীজ ব্যবহার করেন। তিনি গাছটি তৈরি করতে গ্রাফটিং পদ্ধতিও প্রয়োগ করেন। নারী-পুরুষের মিলনের মাধ্যমে যেমন একটি শিশুর জন্ম হয়, ঠিক তেমনি এক গাছের সঙ্গে অন্য গাছের মিলন ঘটিয়েছেন অধ্যাপক স্যাম ভ্যান অ্যাকেন। এই পদ্ধতিতে দুটি গাছের ডালকে এমনভাবে জুড়ে দিয়েছেন যাতে উভয় গাছের শিরা-উপশিরা পরস্পরের মধ্যে প্রবাহিত হয়। যেমন কলম দেওয়া হয়ে থাকে।
ঠিক তেমনি দুটি রক্তনালিকে মিলিয়ে দেওয়ার মতোই। এই নালি দুটিকে বলা হয় লোয়েম ও জাইলেম। এই পদ্ধতিতে দুটি গাছ তাদের পানি, চিনি ও খনিজ পদার্থ বিনিময় করে থাকে। গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে দুর্বল একটি গাছ শক্তিশালী গাছের বিভিন্ন উপাদান গ্রহণ করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যদিও গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে একাধিক গাছ জুড়ে দেওয়া যায়, তবে ৪০টি গাছকে এক করা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। কিন্তু তারপরও অধ্যাপক স্যাম ভ্যান অ্যাকেন সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে অধ্যাপক স্যাম ভ্যান অ্যাকেন ৩-৪ বছর গাছটির পরিচর্যা করেছেন।
কিছু ডালপালা পরিপুষ্ট হলেই ৪-৫টি ডাল কেটে নিয়ে নতুন প্রজাতির আরও গাছের ডাল গ্রাফট করেন। এভাবেই ২৫ প্রজাতির ভিন্ন ভিন্ন গাছের অংশ জোড়া লাগিয়ে পরিচর্যা করে গেছেন তিনি। বছর দুয়েকের পরিচর্যায় নতুন ডালগুলো একে-অন্যের সঙ্গে খনিজ পদার্থ আদান-প্রদানে সমর্থ হয়। ভিন্ন ভিন্ন জাতের গাছের ডালগুলোর মধ্যে এক সময় গড়ে ওঠে দারুন সখ্যতা। ভ্যান অ্যাকেন এভাবে ধীরে ধীরে ৪০টি ফলের গাছ জোড়া লাগাতে সক্ষম হন। আর এভাবেই তিনি এক গাছে ৪০টি ফল পাওয়ার যোগ্য করে তোলেন। অধ্যাপক স্যাম ভ্যান অ্যাকেন জানান, গাছটির কলমের জন্য যেসব মূল উৎস ছিল সেটি নিউইয়র্ক স্টেট এগ্রিকালচারাল এক্সপেরিমেন্ট স্টেশনের একটি বাগান।
এই বাগানটি বন্ধ করে দেওয়া হবে এমন খবর পেয়ে ভ্যান অ্যাকেন বাগানটির ইজারা নেন। ওই বাগানে প্রায় ২৫০ প্রজাতির গাছ ছিল। তিনি এই গাছগুলির কখন ফুল ফোটে এ তথ্য বের করে ফেলেন। এর ভিত্তিতে তিনি একটি গাছের মূল গঠনে আরও কয়েকটি গাছের কলম স্থাপন শুরু করেন। এসব গাছের বয়স দুই বছর হলে তিনি গাছের শাখাতে আরও কিছু গাছের কলম স্থাপন করতে থাকেন। এভাবেই তিনি বর্তমানে এ ধরণের ১৬টি গাছ উৎপন্ন করেছেন। তবে একেকটি গাছ উৎপন্ন করতে প্রায় পাঁচ বছরের মতো সময়ের প্রয়োজন পড়ে।
গাছটির একটি বৈশিষ্ট্য হলো, সারা বছর জুড়েই এই গাছ দেখতে অন্য যেকোনো গাছের মতই মনে হবে। তবে বসন্তকালে এ গাছের এক ভিন্নরূপ খুঁজে পাওয়া যাবে। ফুলের প্রস্ফুটনে গাছটি গোলাপি, লালচে ও সাদা রঙের সংমিশ্রণে এক অপূর্ব রূপ ধারণ করবে। আর এর ফল পাওয়া যায় জুলাই মাস হতে অক্টোবর মাসের মধ্যে।