প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে মানুষ ভালোবাসার চর্চা করে আসছে। বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস পালনের ধারা তৈরি হয় ১৯৯৩ সালে। সে সময়ের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে ভালোবাসার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের পর থেকে। এ দেশে দিবসটি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, ছড়িয়ে পড়েছে সম্পর্কের সীমানার প্রায় সব মানুষের মধ্যে। বর্তমানে বাংলাদেশে বাবা-মা, ভাইবোন, সন্তান, বন্ধু-বান্ধবী, আত্মীয়স্বজন সবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যমে এ দিবসটি উদযাপন করা হয়। ভ্যালেন্টাইনস ডের ইতিহাস নিয়ে নানা কাহিনীর কথা শোনা গেলেও প্রচলিত কাহিনীটি ছিল রোমান ক্রিশ্চিয়ান পাদ্রি সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স কাহিনী অনুসারে। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন চিকিৎসক। সে সময় দেব-দেবীর পূজা নিয়েই মত্ত ছিল রোমানরা। তারা ক্রিশ্চিয়ান ধর্মে বিশ্বাসী ছিল না, এমন একটি সময় ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমে ক্রিশ্চিয়ান ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের আদেশে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদ-ের আদেশ দেওয়া হয়। মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া পর্যন্ত ভ্যালেন্টাইন ছিলেন জেলে বন্দি। জেলখানায় তাকে যে কক্ষে রাখা হয়েছে ওই কক্ষের ছোট একটি জানালা ছিল।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিনের বেলায় ওই জানালার পাশে বসে জেলখানার কর্মচারীদের ছোট ছেলেমেয়ে এবং অন্য কয়েদিদের দেখতেন। কৌতূহলী শিশুরা তাকে নিয়ে মজা করত। ভালোবাসার কথা জানিয়ে ফুল, চিঠি ইত্যাদি ছুড়ে মারত। সেন্টের ডাক্তারি বিদ্যা রপ্ত ছিল বলে জেলখানার অভ্যন্তরে তাকে দিয়ে চিকিৎসাসেবার কাজ করানো হতো। জেলখানায় বন্দি অবস্থায় সেন্ট চিকিৎসা করে জেলারের অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনেন, এ নিয়ে জেলারের মেয়েটির সঙ্গে তার যোগাযোগ বাড়ে। এরই মধ্যে ঘনিয়ে আসে সেন্টের মৃত্যুদ- কার্যকরের দিন। মৃত্যুর আগে সেন্ট মেয়েটিকে উদ্দেশ করে একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে সেন্ট তার প্রতি শুভ কামনা জানিয়ে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন। প্রচলিত ধারণা মতে, সে ঘটনায় পোপ প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। ইতিহাসে আরো একজন ভ্যালেন্টাইনের নাম আলোচনায় আসে। যুদ্ধে তরুণ সেনা সংগ্রহের জন্য রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস যুবকদের বিয়ে করতে নিষেধ করেন। ওই সময় এক তরুণ নিয়ম ভেঙে প্রেম এবং বিয়ে করেন। এর শাস্তিস্বরূপ তাকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। ভ্যালেন্টাইনস ডে প্রতিষ্ঠায় এ কাহিনীও আলোচনায় আসে।
ভ্যালেন্টাইনস নিয়ে রোমেরই আরেকটি গল্প কাহিনীর কথা শোনা যায়। বহু বছর আগে রোমে বিয়ে এবং সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে ২টি উৎসব প্রথা চালু ছিল। এর অন্যতম উৎসব ছিল লুপারকালিয়া। উৎসবটি হত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এ উৎসবের কারণে দেবতা লুপারকাস রোম শহর নেকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেন। উৎসবে তরুণরা প্রায় নগ্ন হয়ে উল্লাস করত এবং নবনিবাহিতাকে চাবুক দিয়ে পেটাত। তরুণরা মনে করত এতে সন্তান উৎপাদন সহজ হবে। এর আগের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি তরুণ-তরুণীরা লটারি করে তাদের নাচের পার্টনার নির্বাচন করত। ৪০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ২ দিনের উৎসবকে কমিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি এক দিনের উৎসব নির্ধারণ করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি রোমানরা বক্সের ভেতর নাম রেখে লটারি করে তাদের প্রিয়তম বা প্রিয়তমাকে বেছে নিত। তাই এ দিনটি তাদের কাছে পার্টনার বেছে নেওয়ার দিন। আবার অনেকের ধারণা, ১৪ ফেব্রুয়ারি পাখিরা তাদের পার্টনার বেছে নেয়। ফলে এ দিনটি ভালোবাসা দিবসের জন্য উপযুক্ত। ১৭০০ সালের দিকে ইংরেজ নারীরা কাগজে তাদের পরিচিত পুরুষের নাম লিখে কাদামাটি মিশিয়ে পানিতে ছুড়ে মারত। যার নাম প্রথমে ভেসে উঠত সে-ই হত প্রকৃত প্রেমিক। মূলত এসব ঘটনাকে সামনে রেখেই বিশ্বে ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস পালিত হয়ে আসছে।