বর্তমানে অনেকেই নারীর ‘জিরো ফিগার’ নিয়ে মাতামাতি করছেন। যদিও জিরো ফিগার তথা রোগাপটকা হাড় জিরজিরে কিংবা একেবারে ছিপছিপে গড়নের মেয়েরা নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। এ লেখায় তুলে ধরা হলো জিরো ফিগার নারীদের নানা ধরনের সমস্যা।
জিরো ফিগার কী?
‘জিরো ফিগার’ শব্দটি সর্ব প্রথম ব্যবহার করে আমেরিকার দর্জিরা। তারা একটি ব্যবহার করেছিল ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য তৈরি পোশাক বিক্রির জন্য। দর্জিদের হিসাব অনুযায়ী জিরো ফিগারের সাইজ ছিল বুক ৩৩ ইঞ্চি, কোমর ২৫ ইঞ্চি ও নিতম্ব ৩৫ ইঞ্চি। অধিকাংশ জিরো ফিগার নারীদের বিএমআই হলো ১৬.৫ থেকে ১৮, যা স্বাভাবিকের তুলনায় কম।
পরবর্তীতে এই জিরো ফিগার বিষয়টি মিডিয়াতে জনপ্রিয় হয়। জিরো ফিগারের মেয়েদের নানা মডেলিংয়ে ও ক্যাটওয়ার্কে পারফর্মের পর এর প্রতি অনেকেই দারুণভাবে ঝুঁকে পড়ে।
জিরো ফিগারের ক্ষতি
১. বন্ধাত্ব
জিরো ফিগারের মেয়েদের ওজন কম থাকে,ফলে তদের শরীরে লেপ্টিন হরমনের লেভেল কমে যায়। লেপ্টিন হরমনের লেভেল কম থাকলে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। ফলে সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা কমে যায়।
২. সন্তান জন্মদানে জটিলতা
জিরো ফিগারের মেয়েদের দুই হিপবোনের মধ্যবর্তী দূরত্ব কম থাকে ফলে তাদের বার্থ ক্যানালের প্রস্ততা কমে যায়। এতে করে সন্তান জন্মদানে জটিলতা দেখা যায়।
৩. গর্ভাবস্থায় জটিলতা, শিশুর ক্ষতি
অনেক মেয়েই গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের ভেতর মর্নিং সিকনেসে (ঘন ঘন বমি ও কিছু না খেতে পারা) ভুগে থাকেন। এসময় তাদের পেট ও হিপে জমে থাকা চর্বি থেকে শরীরে শক্তির সরবরাহ হয়। কিন্তু জিরো ফিগারের মেয়েদের পেট ও হিপে তেমন কোন সঞ্চিত চর্বি থাকে না ফলে ঐ দিন গুলোতে শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা যায়, এতে করে গর্ভের বাচ্চার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
৪. অনিয়মিত পিরিয়ড
প্রজেস্টেরন হরমোন মেয়েদের পিরিয়ড সাইকেল নিয়ন্ত্রন করে থাকে এবং এটি একটি স্টেরয়েড হরমোন। শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ কমে গেলে এই হরমোনের লেভেলও কমে যায়। ফলে দেখা গেছে যারা জিরো ফিগারের মেয়ে, তাদের অনেকেই অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যায় ভোগেন।
৫. যৌন চাহিদা কমে যাওয়া
শরীরের ফ্যাটের ঘাটতি থাকায় স্টেরয়েড হরমোন যেমন ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন কমে যায়। ফলে জিরো ফিগারের মেয়েদের যৌন চাহিদা কমে যায়।
৬. অস্টিওপোরোসিস
জিরো ফিগারের মেয়েরা অনেকেই প্রকট অপুষ্টিতে ভুগে থাকে। ফলে তাদের শরীরে ভিটামিন, মিনারেল ও ফ্যাটের অভাব দেখা যায়। ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
৭. দন্তক্ষয়
জিরো ফিগারের অধিকাংশ মেয়েরা নানা ভিটামিনের অভাবে ভুগে থাকে। ফলে তাদের দন্তক্ষয় দেখা যায়।
৮. পেটের সমস্যা
জিরো ফিগারের মেয়েরা পেটের নানাবিধ সমস্যায় ভুগে থাকেন। কারণ বাউয়েল মুভমেন্ট কমে যায় ফলে তারা কোস্টকাঠিন্য ও তলপেটের ব্যাথায় ভুগে থাকেন। এছাড়া ঘন ঘন অ্যাসিডইক রিফ্লাক্স,গাস্ট্রিক ইরসন ইত্যাদি সমস্যাতেও ভুগে থাকেন।
৯. রক্তশূন্যতা
জিরো ফিগারের মেয়েরা প্রোটিন ও আয়রনের অভাবে ভুগেন। ফলে তাদের অধিকাংশের মাঝে রক্তশূন্যতা দেখা যায়।
১০. হতাশা ও মানসিক সমস্যা
জিরো ফিগারের অধিকাংশ মেয়েরা হতাশায় ভুগে। এর পেছনে রয়েছে তাদের অ্যানোরেক্সিয়া। এতে তারা অনেকটা খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়।
১১. চুল ও ত্বকের সমস্যা
জিরো ফিগারের মেয়েদের চুল ডাল ও পাতলা হয়ে যায় স্কেলেরো প্রোটিনের অভাবে। তাছাড়া ত্বক রুক্ষ, খসখসে ও শুস্ক হয়ে যায় ভিটামিন-এ এর অভাবে।
১২. ইলেকট্রলাইটের ভারসাম্যহীনতা
জিরো ফিগারের মেয়েদের শরীরে ফ্লুয়িড ও ইলেকট্রলাইটের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। ফলে শরীরের ভাইটাল অরগান যেমন ব্রেন, কিডনি, হার্ট ইত্যাদির কাজ বিঘ্নিত হয়।
১৩. অবাঞ্চিত লোম
জিরো ফিগারের মেয়েদের পিঠে, বাহুতে ও মুখে অবাঞ্চিত লোমের আধিক্য দেখা যায়। এর কারণ হলো শরীরে হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা এবং শরীরের ফ্যাটের পরিমাণ কমে যাওয়া।
১৪. দুর্বলতা
জিরো ফিগারের মেয়েরা অনেকেই দুর্বলতায় ভোগে। এ কারণে তাদের অনেকেই বিভিন্ন পর্যায়ে হাতে ও পায়ে বল পায় না। অনেকে পরিশ্রম করতে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়।