হেয়ার লস বা চুলপড়া সমস্যা নিয়ে রোগীরা কার কাছে যাবেন, কি ধরণের চিকিৎসা নিতে হবে এসব নিয়ে নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। এছাড়া প্রচারনির্ভর অপচিকিৎসাও কম নয়। বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক চিকিৎসা কতজন নিতে পারছেন চুলপড়া সমস্যার ক্ষেত্রে এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। অন্তত: বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা বলা যায়। চুলপড়া সমস্যার চিকিৎসায় শুধু মার্কিনিরা ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ান ডলার বছরে ব্যয় করে। তবে আমেরিকান হেয়ার লস এসোসিয়েশন একটি উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে। তা হচ্ছে চুলপড়ার সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শতকরা ৯৯ ভাগ প্রডাক্টের কোন অনুমোদন নেই। যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ (ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন) হচ্ছে এধরণের প্রডাক্ট অনুমোদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ সংস্থা এবং এফডিএ এ পর্যন্ত চুলপড়া সমস্যার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাত্র দু’ ধরণের ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এ দু’ধরণের ওষুধ হচ্ছে মাথার ত্বকে ব্যবহারের জন্য মিনক্সিডিল এবং মুখে খাবার ওষুধ ফিনাস্ট্রাইড। এছাড়া অন্যকোন ধরণের ওষুধ চুলপড়া সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহারের অনুমোদন নেই এফডিএ-এর। আমেরিকান হেয়ার লস এসোসিয়েশন চুলপড়া সমস্যায় আক্রান্তদের কোনভাবেই অননুমোদিত ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয় বলে সতর্ক করে দিয়েছে এবং বেশির ভাগ অননুমোদিত প্রডাক্টের মারাত্মক পার্শ প্রতিক্রিয়া রয়েছে বলেও সংস্থাটি-এর অভিমত। চুলপড়া সমস্যার কোন চিকিৎসা নেই এবং এটা কোন রোগ নয়। শরীরের অন্যকোন সমস্যার কারণে চুল পড়ে যেমন: হরমোনের সমস্যা, পুষ্টির সমস্যা, মানসিক সমস্যা, কিছু কিছু ইন্টারনাল অর্গানিক ডিজিজ, হেরিডিটরী, মাথার ত্বকের কোন ডিজিজ, খুশকি ইত্যাদি। আমি নিজেও কোন রোগীকে বলিনা চুলপড়ার সমস্যার কোন স্থায়ী চিকিৎসা আছে। মূলত: নানা ধরণের চুলপড়া সমস্যা রয়েছে যেমন; এন্ড্রোজেনেটিক এলোপোসিয়া, এলোপেসিয়া এরিয়েটা, ইত্যাদি।
সাধারণত: দিনে কোন পুরুষ বা মহিলার ১০০টি পর্যন্ত চুলপড়া সাভাবিক। তবে চুল যত কম পড়বে তত ভালো। শুধু চিকিৎসার ওপর চুলপড়া সমস্যার সমাধান নির্ভর করেনা। চুলের সঠিক পরিচর্যা ও সুষম খাদ্যাভ্যাস ও চুলপড়া সমস্যার সমাধানে সহায়ক। তবুও আমেরিকান হেয়ার লস এসোসিয়েশনের গাইড লাইন অনুসারে প্রধানত: চুলের চিকিৎসায় কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি।
যেমন- এক: খাবার ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা।
দুই: মাথার ত্বকে মিনক্সিডিল জাতীয় ওষুধের ব্যবহার।
তিন: লেজারের মাধ্যমে চিকিৎসা।
চার: মেজোথেরাপিরসহ প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা থেরাপি।
পাঁচ: সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট বা হেয়ার ট্রানপ্লান্ট ইত্যাদি।
আমরা সাধারণত: দু’ ভাবে চুলপড়া সমস্যার চিকিৎসা করে থাকি। যেমন: মুখে খাবার ওষুধ ও মিনক্সিডিল জাতীয় ওষুধের ব্যবহার। মূলত: যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন এ দু’টো ওষুধ অনুমোদন করেছে এবং সবচেয়ে আশার কথা হলো বাংলাদেশের কয়েকটি শীর্ষ স্থানীয় কোম্পানী এফডিএ অনুমোদিত দু’ধরণের ওষুধই তৈরি করছে। তাই দেশের লক্ষ লক্ষ চুলপড়া সমস্যার রোগীদের জন্য এটা নিঃসন্দেহে আশার কথা।
চুলপড়া সমস্যার ক্ষেত্রে বিশে¡র সর্বাধিক ব্যবহৃত ওষুধ প্রপেসিয়া (ফিনাসট্রেইড) এবং রোগেইন (মিনক্সিডিল)। এন্ড্রোজেনেটিক এলোপেসিয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য ফিনাসট্রেইড কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এফডিএ অনুমোদিত ফিনাসট্রেইড মহিলাদের ব্যবহারের জন্য নয়। মহিলা ও পুরুষের উভয়ের জন্য একমাত্র মিনক্সিডিল কার্যকর। মিনক্সিডিল তৈরি লোশন পুরুষদের জন্য ৫% এবং মহিলাদের জন্য ২% ব্যবহার করার নিয়ম। মিনিক্সিডিল চুল পড়া রোধ, সরু হয়ে যাওয়া চুল স¡াভাবিক অবস্থায় আনতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে চুলপড়া সমস্যায় বিশ¡ব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহৃত মিনিক্সিডিল ও ফিনাস্ট্রাইড কোন অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ব্যবহার করা বাঞ্চনীয় নয়। এছাড়া চুলপড়া সমস্যা চিকিৎসায় ওষুধের পাশাপাশি যথাযথ পরিচর্যাও জরুরি। শুধু ওষুধ ব্যবহার করে চুলপড়া সমস্যা রোধ করা যায় না।
প্রাকৃতিক উপায়ে খুশকি দূর করার টিপস :
----------------------------- খুশকি আপনার মাথার চুলের তো ক্ষতি করছেই, তার ওপরে এটা আবার মুখে ব্র“ণও সৃষ্টি করতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুশকি দূর করাই বাঞ্ছনীয়। অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকি দূর হতে পারে। তবে আমরা দেখবো প্রাকৃতিক কিছু টিপস। প্রাকৃতিকভাবে কিভাবে নির্মূল করা যায় খুশকি।
৩-৪ টুকরা লেবু নিন এবং ৪-৫ কাপ পানির মধ্যে দিয়ে ১৫-২০ মিনিট ধরে সিদ্ধ করুন। এরপর এটি ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এবার আপনার মাথার চুল ধোয়ার সময় এটি ব্যবহার করুন। কমপক্ষে ১ সপ্তাহ এটি ব্যবহার করবেন।
২ টেবিল চামচ মেথি সারারাত ধরে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সকালে তা দিয়ে সুন্দর করে পেস্টের মত বানিয়ে ফেলুন। এই পেস্ট আপনার চুলে এবং মাথার তালুতে ব্যবহার করুন কমপক্ষে ৩০ মিনিট। এরপর ধুয়ে ফেলুন। ভাল ফলাফলের জন্য অন্তত ৪ সপ্তাহ ব্যবহার করুন।
গোসলে যাওয়ার আগে লেবুর রস দিয়ে আপনার মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। ১৫-২০ মিনিট পর মাথা ধুয়ে ফেলুন।
সমপরিমান পানি এবং ভিনেগার দিয়ে মিক্সার তৈরি করুন। রাতে মিক্সারটি মাথার তালুতে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে ওঠে বেবি শ্যাম্পু দিয়ে হালকাভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কিছু পরিমাণ দধি চুলে এবং মাথার তালুতে লাগিয়ে রাখুন। এটা ১ ঘন্টা রেখে দিন। এরপর হালকাভাবে বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুইবার এই পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
দু’টো ডিম ভাঙুন এবং এটি পেস্ট আকারে মাথার তালুতে লাগান। এক ঘন্টা পর ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতি খুশকি দূর করতে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
হালকা উষ্ণ বাদাম তেল, নারিকেল তেল অথবা অলিভ ওয়েল মাথার তালুতে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে খুশকি দূর হয়।
১ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং ৫ টেবিল চামচ নারিকেল তেল একসাথে মেশান। এবার এই মিক্সার মাথার তালুতে ব্যবহার করুন। ২০-৩০ মিনিট পর ভাল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
নিমপাতা পিষে পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এবার মাথার শুষ্ক খুলিতে এই পেস্ট সরাসরি প্রয়োগ করুন। আধাঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
চুল সবসময় পরিস্কার রাখুন। অপরিস্কার চুলে খুশকি হবে এবং বৃদ্ধি পাবে এর কোনো বিকল্প নেই। কাজেই প্রতিদিনই আপনার চুল পরিস্কার করে ধুয়ে ফেলবেন। ধীরে ধীরে আপনার চুল থেকে হারিয়ে যাবে খুশকি।