বাংলাদেশের প্রোটিনের একটি বিশাল চাহিদা পূরণ করছে দেশের ফার্মের মুরগি সমূহ। একই সাথে ফার্মে মুরগি পালন এবং তার থেকে লাভবান হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে ফার্মের মুরগির খাদ্যে প্রোটিন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে চামড়ার উচ্ছিষ্ট আবর্জনা! এ সবের মাঝে রয়েছে ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে দেয়া ক্রোমিয়াম! যা মানব শরীরের জন্য ভয়ংকর বিষ। এছাড়াও মুরগিকে দেয়া হচ্ছে উচ্চ এন্টিবায়োটিক! ফলে এসব মুরগি মানুষের শরীরের জন্য ভয়াবহ বিষ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ঢাকার চামড়ার ট্যানারি সমূহে চামড়া প্রক্রিয়া জাত করার পর চামড়ার উচ্ছিষ্ট সমূহ প্যাকেট হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের মুরগির খাবার প্রস্তুতকারী কোম্পানি সমূহের কাছে। এসব কোম্পানি মুরগির খাবার তৈরিতে চামড়ার উচ্ছিষ্ট ব্যবহার করছে। যাতে পাওয়া গেছে ভয়াবহ ক্রোমিয়াম! ক্রোমিয়াম মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর বিষ। মানুষের শরীরে যদি একবার ক্রোমিয়াম প্রবেশ করে তবে তা মানুষের শরীরের কোষ সমূহে বিনষ্ট করে দেয়। এতে ঐ কষের পাশে থাকা অন্যান্য কোষও নষ্ট হতে থাকে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ক্যান্সার বলা হয়ে থাকে! অর্থাৎ আমরা আমাদের অজান্তেই প্রতিনিয়ত খেয়ে যাচ্ছি ক্যান্সারের বিষ!
মুরগির শরীরে ছড়িয়ে পড়া ক্রোমিয়াম বিষয়ে ভয়ংকর তথ্য পাওয়া যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আবুল হোসেনের এক গবেষণা থেকে। ডঃ আবুল হোসেন তার গবেষণায় দেরখতে পান দেশী বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এমন ফার্মের মুরগি সমূহে ক্রমিয়ামের পরিমাণ উচ্চ পর্যায়ে। যা মানুষের শরীরে ধীরে ধীরে ক্যান্সার এর কোষ গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ডঃ আবুল হোসেন তার পরীক্ষা থেকে জানানঃ
মুরগির রক্তে পাওয়া গেছে ৭৯০ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম।
মুরগির মাংসে পাওয়া গেছে ৩৫০ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম।
মুরগির হাড়ে পাওয়া গেছে ২০০০ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম।
মুরগির কলিজায় পাওয়া গেছে ৬১২ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম।
মুরগির মগজে পাওয়া গেছে ৪,৫২০ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম।
ডঃ আবুল হোসেন বলেন, “একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ দৈনিক খাবারের সাথে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম খেতে পারে, অথচ সেখানে আমরা গড়ে ৯০ থেকে ৯৭ মাইক্রোগ্রাম খাচ্ছি। যা আমাদের শরীরের জন্য ভয়ংকর হুমকি স্বরূপ।”
তিনি আরও বলেন, “সাধারণত ক্রোমিয়াম এর বয়েলিং পাওয়ার ২৯০০ডিগ্রী সেঃ সেখানে আমাদের চুলায় মুরগি রান্না হয় ১০০ ডিগ্রী তে। এতে করে ঐ সব ক্রোমিয়াম নষ্ট হওয়ার কোনও প্রশ্নই আসেনা। ফলে খাবারের সাথেই আমাদের শরীরে নিজেদের অজান্তে ঢুকে পড়ছে ক্রোমিয়াম বিষ।”
এদিকে আরেক গবেষণায় দেখা গেছে মুরগিকে দেয়া হচ্ছে সিফ্রোফ্রক্সাসিন নামের এন্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। যার ফলে এই উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক মুরগির ডিম এবং মাংসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণায় দেখা গেছে মুরগির শরীরে এবং ডিমে পাওয়া যাচ্ছে মানুষের শরীরে সহনীয় মাত্রা থেকে প্রায় ৫ গুণ বেশি সিফ্রোফ্রক্সসিন এন্টিবায়োটিক। আর এটিও সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে মুরগির ডিম, হাড়, কলিজা এবং মগজে।
অতএব, এখনই মুরগিকে বিষে রূপান্তরের বিরুদ্ধে সরকারী ব্যবস্থা নেয়া না হলে খুব দ্রুত দেশের মানুষের শরীরেও এসব মুরগি খাওয়ার ফলে ছড়িয়ে পড়বে ভয়ংকর বিষ।
সূত্রঃ এনটিভি প্রতিবেদন