হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি ব্লক হয়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়।বিভিন্ন কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। বার বার হার্ট অ্যাটাক মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক নূর আলম।
প্রশ্ন : হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?
উত্তর : হৃদপিণ্ড আমাদের সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে পাম্পিংয়ের মাধ্যমে। হৃদপিণ্ডের নিজেরও রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তগুলো হৃদপিণ্ড নিজে গ্রহণ করে রক্তনালির মাধ্যমে। সেগুলোকে বলা হয় হার্টের করনারি রক্তনালি। এই করনারিন রক্তনালিগুলোর মধ্যে যদি কখনো ব্লক হয় বা চর্বি জমে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে হৃদপিণ্ডে স্বভাবতই নিজের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়।
প্রশ্ন : এই করনারি আর্টারিগুলো ব্লক হওয়ার কারণ কী?
উত্তর : বেশ কিছু কারণ রয়েছে। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান এসব কিছু কারণ রয়েছে যার জন্য হার্ট অ্যাটাক হয়। আবার অনেক সময় রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে করনারি রক্তনালিতে ব্লক জমে সে জায়গাটা বন্ধ হয়ে যায়।
উত্তর : বেশিরভাগ সময়ই লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন : তীব্র বুকে ব্যথা, বুকে ব্যথার পাশাপাশি বমি বমি ভাব হয়, শরীর ঘেমে যাওয়া। এ সময় বেশ কিছুক্ষণ ধরে বুকে ব্যথা থাকে এবং তা বুকের ওপর চেপে থাকে। এগুলোই হলো হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।
প্রশ্ন : যখন এই জাতীয় লক্ষণ প্রকাশ পায় তখন তাৎক্ষণিকভাবে কী করা উচিত?
উত্তর : এ রকম পরিস্থিতি যদি কারো হয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়া উচিত। ইসিজি করা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে যখন এ ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসেন তখন আপনারা কী করেন?
উত্তর : প্রথমে যেই ঝুঁকিগুলোর কথা বললাম সেগুলো যদি থাকে এবং সেই ব্যথা যদি হার্ট অ্যাটাকের মতো মনে হয় এবং ইসিজিতে যদি আমরা হার্ট অ্যাটাকের মতো পরিবর্তন দেখতে পাই তখন তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ওষুধ রোগীকে খেতে বলি বা রোগীকে খাওয়ানো শুরু করি। পুরো বিশ্বেই হার্ট অ্যাটাকের যে চিকিৎসা প্রাইমারি এনজিওপ্লাস্টি সেটা করতে হয়। রোগী আসার সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে ক্যাথল্যাবে নিয়ে এনজিওগ্রামের মাধ্যমে রোগীর করনারি আর্টারির ব্লক শনাক্ত করে সেটাকে অপসারণ করে ওখানে রিং পরানো হয়। এই চিকিৎসা ঢাকা শহর এবং এর বাইরে বিভিন্ন জায়গায় সরকারিভাবে করা হয়। হার্ট অ্যাটাকের আধুনিক চিকিৎসা এখন আমাদের দেশে সফলভাবে করা হচ্ছে এবং এটি সহজলভ্য।
প্রশ্ন : রিং পরানোর পর রোগীদের প্রতি কী পরামর্শ থাকে যাতে আর সমস্যাটা না হয়?
উত্তর : যে ঝুঁকিগুলোর কারণে হার্ট অ্যাটাক হলো সেগুলো অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যেমন : উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি বেশি থাকে তবে সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এগুলো নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কিছু ওষুধ আছে সেগুলো তাকে খেতে হবে। রোগীর জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন করতে হবে। হাঁটাচলা করা, দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এ বিষয়গুলোও মেনে চলতে হবে।
প্রশ্ন : বার বার হার্ট অ্যাটাক হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি প্রতিরোধের উপায় কী?
উত্তর : যার হার্ট অ্যাটাক হলো তার সবকিছুই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। অতিরিক্ত চিন্তাও একটি ঝুঁকির কারণ হয়। চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। ওষুধ ঠিকমতো খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।
প্রশ্ন : রোগ নির্ণয়ের একটি বিষয় বলছিলেন এনজিওগ্রাম। এর প্রতি মানুষের একটি ভয় কাজ করে। আপনারা তাদের কীভাবে আশ্বস্ত করেন?
উত্তর : এটা তেমন ঝুঁকিপূর্ণ না। রোগীকে অজ্ঞান করে করা হয় না। শুধু একটি লোকাল এনেসথেসিয়া দিয়ে রোগীর জ্ঞান রেখেই করা হয় এবং খুবই অল্প সময় লাগে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এই বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া দরকার। যদি তারা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে তখন রোগীর হার্টের আরো বেশি ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে। আর চিকিৎসকরা যখন কাউকে এনজিওগ্রামের পরামর্শ দেন তখন ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করেই দেন। সুতরাং এনজিওগ্রামের ব্যাপারে এত ভীতি বা দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
উত্তর : হার্ট অ্যাটাকের জন্য প্রথমে যে ঝুঁকিগুলো থাকে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের ভেতর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হওয়া, ধূমপান এগুলো অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বেশি হাঁটতে হবে, ওজন বাড়তে দেওয়া যাবে না। অনেক সময় লিফ্ট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহারের পরামর্শ দেই। শিশুদের জন্য খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে চাপ। এটি একটি বড় ঝুঁকির কারণ। সবসময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে। কোনো কিছুতেই বেশি প্রতিক্রিয়া না দেখানো উচিত। চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।