আপনি আছেন » প্রচ্ছদ » খবর

ডায়াবেটিস নিয়ে যত ভুল ধারণা

সরাসরি মিষ্টি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার কোনো যোগসূত্র নেই। মিষ্টি বেশি না খেলেও ডায়াবেটিস হতে পারে। আসলে পারিবারিক ইতিহাস, ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ইত্যাদি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। মিষ্টি বেশি খেলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে (কেননা মিষ্টি দ্রব্যে ক্যালরি বেশি) আর এ কারণে পরোক্ষভাবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে বৈকি।

❏ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন সর্বশেষ চিকিৎসা: ইনসুলিন একজন ডায়াবেটিস রোগীর জীবনে যেকোনো সময়ই লাগতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়, যেকোনো বড় অস্ত্রোপচারের আগে-পরে, কোনো গুরুতর রোগে হাসপাতালে থাকাকালীন যেমন: হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা মারাত্মক কোনো সংক্রমণের সময়, কিডনি বা যকৃতের জটিলতায় ইনসুলিনই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ চিকিৎসা। এ ছাড়া কোনো কারণে রক্তে শর্করা অনেক বেড়ে গেলেও ইনসুলিন দরকার হবে। ব্যাপারটা এমন নয় যে ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে মানে আপনার অবস্থা খুব জটিল বা আপনি মরণাপন্ন।

❏ একবার ইনসুলিন ব্যবহার করলে সারা জীবনই তা দিতে হবে: বিষয়টা আসলে তা নয়। নানা কারণে ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। আবার পরে তা পরিবর্তন করে ওষুধ খাওয়াও যেতে পারে। যেমন গর্ভাবস্থা কেটে যাওয়ার পর বা অস্ত্রোপচারের ঘা শুকিয়ে যাওয়ার পর একসময় ইনসুলিন বন্ধ করে আবার ওষুধ খাওয়া যায়। তবে টাইপ ১ ডায়াবেটিস, কিডনি ও যকৃতের গুরুতর সমস্যা এবং সর্বোচ্চ মাত্রায় ওষুধ ব্যবহার করেও যদি শর্করা নিয়ন্ত্রিত না হয়, এসব ক্ষেত্রে সব সময়ের জন্য ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে।

❏ ডায়াবেটিস হলে কোন ফলমূল খাওয়া যাবে না: ডায়াবেটিস হলে কী খাওয়া যাবে বা যাবে না, তা নির্ভর করে ওই খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের ওপর। কোনো একটি খাবার রক্তে কত দ্রুত শর্করা বাড়িয়ে দিতে পারে। তার পরিমাপই হলো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। বেশির ভাগ ফলমূলে প্রচুর আঁশ থাকায় রক্তে ধীরে ধীরে শোষিত হয় এবং এদের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অত বেশি নয়। কোনো কোনো ফলে শর্করার মাত্রা একটু বেশি, সেগুলোও নির্দিষ্ট মাত্রায় খাওয়া যাবে।

❏ গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে শিশুরও ডায়াবেটিস হয়: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে সেই মায়ের অনাগত শিশু নানা রকম ঝুঁকিতে ভোগে। যেমন: গর্ভপাত, সময়ের আগে জন্ম নেয়া, গর্ভে হঠাৎ মৃত্যু, অতিরিক্ত ওজন নিয়ে জন্ম হওয়া, জন্মগত নানা জটিলতা ইত্যাদি। জন্মের পরপর হঠাৎ শিশুর রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে, খিঁচুনি বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তবে সেই শিশু ডায়াবেটিস নিয়ে জন্ম নেবে, তা ঠিক নয়। তবে পরবর্তী সময়ে বড় হওয়ার পর অন্যদের তুলনায় তার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি একটু বেশি।

❏ ডায়াবেটিস হলে স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব নয়: শর্করা সুনিয়ন্ত্রিত থাকলে এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে একজন ডায়াবেটিস রোগী আর দশজনের মতোই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। টম হ্যাংকস, হ্যালি বেরি, ল্যারি কিং বা ওয়াসিম আকরামের মতো বিশ্বের অনেক তারকা ব্যক্তিত্ব ডায়াবেটিস নিয়ে চমৎকার জীবন যাপন করছেন। ডায়াবেটিস একটুও ম্লান করতে পারেনি মিস আমেরিকা নিকোল জনসন বা বিশ্বখ্যাত সুন্দরী সালমা হায়েকের সৌন্দর্যকে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম- এই তিন হচ্ছে ডায়াবেটিস নিয়ে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র।