ইয়েমেনে সৌদি জঙ্গিবিমান হামলায় নিহত হয়েছে অসংখ্য ইয়েমেনি। অন্যদিকে দেশটিতে কলেরার মতো সংক্রামক ব্যাধিও ছড়িয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে বহু মানুষ এই ব্যাধিতে মারা গেছে।
ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে সেদেশের অন্তত ১৫টি প্রদেশে কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে এবং এ পর্যন্ত মারা গেছে ৮৯ জন। এই পরিস্থিতির মধ্যে সৌদিআরবসহ তাদের মিত্রবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো সানআ প্রদেশের বনি বহলুল এবং সানহান শহরে গতকালও বোমা হামলা চালিয়েছে। ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সা-দা’র বিভিন্ন এলাকাতেও সৌদি আগ্রাসী বাহিনী সাতাশবার হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় ইয়েমেনের অসংখ্য নিরীহ মানুষ হতাহত হয়েছে।
ইয়েমেনে সৌদি হামলার একুশতম মাস অতিবাহিত হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে সরাসরি মানবিক ক্ষয়ক্ষতি বা ব্যাপক প্রাণহানি তো হয়েছেই,তার পাশাপাশি ইয়েমেনের বহু জনগণও সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। অনেকে চিকিৎসার অভাবেও মারা গেছে কেননা সৌদি আগ্রাসি হামলায় শহরের স্থাপত্য কাঠামোর শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে ধ্বংস হয়েছে হাসপাতালসহ চিকিৎসা সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গেল অক্টোবর মাসে ঘোষণা করেছিল ইয়েমেনের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শতকরা মাত্র ৪৫ ভাগ কাজ করছে। এরমধ্যে মাত্র ৩৭ ভাগ হাসপাতাল কাজ করতে পারছে। সমগ্র ইয়েমেনে তিন হাজার পাঁচ শ সাতটি চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারছে না। ১৬ টি প্রদেশে এক হাজার নয় শ চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি অকেজো কিংবা সীমিত পর্যায়ে কিছু কিছু সেবা দিচ্ছে। উদাহরণত বলা যায় তাজ প্রদেশের শতকরা সত্তুর ভাগ চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানই অকার্যকর কিংবা সীমিত পর্যায়ে নির্দিষ্ট কিছু সেবা দিতে পারছে।
পানি স্বল্পতা এবং খাদ্য সামগ্রীর অভাবও ইয়েমেনে রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আরেকটি কারণ। যুদ্ধের কারণে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এরকম দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে রোগ-ব্যাধিতে মৃত্যুর সংখ্যা যে বাড়তেই থাকবে তা তো আর বলারই অপেক্ষা রাখে না।
ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ বিভাগের পরিচালক আবদুল হাকিম আল-কাহলানি সম্প্রতি জানিয়েছেন: কলেরায় মারা গেছেন ১১ জন, ১৮ জন মারা গেছেন পেটের অন্যান্য ব্যাধিতে। ১১৮ জন কলেরা রোগি আরও ১৫টি প্রদেশে শনাক্ত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কদিন আগে ইয়েমেনে কলেরা রোগ সংক্রমণের ব্যাপারে পূর্বাভাস দিয়েছিল। এখন এই কলেরা রোগ ইয়েমেনের প্রায় অর্ধেক প্রদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এরকম দুর্বিষহ মানবিয় বিপর্যয়ের মধ্যে সৌদি জঙ্গিবিমানগুলো অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সৌদি আগ্রাসী হামলায় এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি ইয়েমেনি নিহত হয়েছেন।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টি আকর্ষনি বিষয়টি হলো পশ্চিমা দেশগুলো সিরিয়ার আলেপ্পোয় যুদ্ধবিরতির জন্য এবং সিরিয় সেনাদের মাধ্যমে অবরুদ্ধ সন্ত্রাসীদের মুক্তির জন্য হেন কোনো পন্থা নেই যা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে না। অথচ ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য কিংবা সেদেশের নাগরিকদের মুক্তির জন্য ন্যূনতম চেষ্টাও তারা চালাচ্ছে না।