বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) এখন ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কালো থাবা ভালভাবেই তার প্রভাব বিস্তার করেছে । যদিও এটা নতুন কোন ঘটনা নয় । কোটি কোটি টাকার লেনদেনের এই একমাত্র দেশীয় ফ্রেঞ্চাইজি ক্রিকেট আসরে ম্যাচ ফিক্সিং জড়িয়ে আছে প্রথম থেকেই । প্রথম আসরেই ম্যাচ পাতানোর কেলেংকারিতে জড়িয়ে নিজেকে কলুষিত করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা মোহাম্মদ আশরাফুল । ঢাকা ডাইনামাইটসের অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে তিনি এখনও আছেন শাস্তির আওতায় । যা তার নিজের ক্যারিয়ার শুধু নয় , বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যেও ছিল বড় ধাক্কা ।
এবার আবার এই চতুর্থ আসরে এসে বিপিএল এখন গরম ম্যাচ ফিক্সিংয়ের নোংরামিতে । একাধিক দলের খেলোয়াড়দের দিকে উঠছে সন্দেহের আঙ্গুল । বিশেষ করে রংপুর রাইডার্সকে নিয়ে সন্দেহ এখন সবচেয়ে বেশি । এরমাঝেই আবার বরিশালের বুলসের এম্বাসেডর দেশের প্রতিষ্ঠিত কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর তার দলের খেলোয়াড়দের ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার সন্দেহের কথা বলে সে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন । এছাড়া চিটাগাং ভাইকিংসের ইমরান খান জুনিয়রকে নিয়েও হয়েছে লঙ্কাকাণ্ড ।
এই যখন অবস্থা , তখন আবার এলো আরেক চমকে দেয়া খবর । চিটাগং ভাইকিংসের পাকিস্তানি পেসার ইমরান খানের পর এবার আলোচনায় এসেছেন রংপুর রাইডার্সের জুপিটার ঘোষ। জুপিটারকে নাকি তাঁর দলের ম্যানেজার সানোয়ার হোসেন ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে এই অভিযোগ করেছেন তিনি।
তাই বিষয়টি নিয়ে নড়ে চড়ে বসেছে বিসিবি। শুরু হয়েছে তদন্ত। শুধু তাই নয়, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এবং যিনি অভিযোগ করেন, দুজনকেই আসরটি চলাকালীন মাঠে ঢোকা নিষিদ্ধ করেছে বিসিবি।
এ ব্যাপারে বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, ‘একটা ইস্যু তৈরি হয়েছে। একজন খেলোয়াড় অভিযোগ করেছেন। তাই যে অভিযোগ করেছে এবং যার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুজনেই আপতত মাঠের বাইরে থাকতে বলেছি আমরা। অভিযোগটি সত্য না মিথ্যা, তা প্রমান না হওয়া পর্যন্ত তাদের মাঠের বাইরে থাকাটই শ্রেয়।’
গত শনিবার বিসিবির কাছে জুপিটার অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর দলের ম্যানেজার নাকি তাঁকে স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য প্রস্তাব দেন। ফিক্সিংয়ে রাজি হননি বলেই দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
অবশ্য রংপুর রাইডার্স এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে, গত ৫ নভেম্বর অনৈতিক কাজে ধরা পড়ায় জুপিটারকে দল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আর এই কারণেই সে দলকে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করছে। তা ছাড়া একটি মহল দলের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বাগেরহাট থেকে উঠে আসা খেলোয়াড় জুপিটার ঘোষ এবারই প্রথম বিপিএলে নাম লিখিয়েছেন। রংপুর তাঁকে দলভুক্ত করলেও একটি ম্যাচও খেলতে পারেননি। বিপিএল শুরুর পরের দিনই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ঘটনা এখানেই থেমে থাকে নি । দলের ম্যানেজার জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় সানোয়ার হোসেনকে নিজ দলের ড্রেসিংরুম ও খেলোয়াড়দের ডাগ-আউটে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিপিএল কর্তৃপক্ষ।
এ অবস্থায় দলের ম্যানেজার সানোয়ারের পাশে দাঁড়িয়েছে রংপুর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে দলটি একটি বিবৃতিও দিয়েছে। লিখিত বিবৃতিতে দলটি উল্লেখ করে, দলের শৃঙ্খলা রংপুরের মূল ভিত্তি। যার জন্যই রংপুর রাইডার্স এতো ভালো করছে। জুপিটার ঘোষের মধ্যে শৃঙ্খলার যথেষ্ট অভাব ছিল। দলের শৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য জুপিটারকে দল থেকে ছাঁটাই করেছে রংপুর রাইডার্স ম্যানেজমেন্ট। আর তাই সে এবার ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের সঙ্গে রংপুরকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রংপুর রাইডার্স কর্তৃপক্ষ।
এদিকে রংপুর কর্তৃপক্ষ দলের ম্যানেজার সানোয়ারকে সমর্থন জানানোর পরও বিসিবি কেন তাকে নিষিদ্ধ করলো এমন প্রশ্নের জবাবে, বিসিবির মিডিয়া কমিটি ও বিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানান, ‘অভিযোগ সত্য, মিথ্যা কিংবা ভিত্তিহীন যাই হোক না কেন, যেহেতু তার নাম উঠে এসেছে, তা আমরা (বিপিএল কর্তৃপক্ষ) বিষয়টি আমলে নিয়েছি। এবং বিপিএলকে কলঙ্কমুক্ত রাখতেই বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। আমরা তা করবোও। আর তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে ড্রেসিংরুম ও ডাগ-আউটে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’ তবে কবে তদন্ত শুরু হবে, তা তিনি জানাতে পারেননি।
উল্লেখ্য, রংপুরের ম্যানেজার সানোয়ার হোসেনকে ড্রেসিংরুম ও ডাগ-আউটে নিষিদ্ধ করা হলেও দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে তিনি মাঠে আসতে পারবেন এবং স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখতে পারবেন।
এইসব নিয়ে দারুণ বিপর্যস্ত জুপিটার ঘোষের দাবি ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন সানোয়ার হোসেন ।
এই নিয়ে তিনি জানিয়েছেন , আমি যদি তাকে এমন প্রস্তাব দিয়ে থাকি, তাহলে তা তখনই আকসুকে জানানোর কথা। এতদিন সে জানায়নি কেন। তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ছিল। তাই তাকে ছাঁটাই করা হয় গত ৫ নভেম্বর।