মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সংগৃহীত একটি স্যাটেলাইট ছবিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
গতকাল শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওয়াশিংটন পোস্ট আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটির দেওয়া তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
স্যাটেলাইটের সাহায্যে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ শনাক্ত করেছে, গত তিন সপ্তাহে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের তিনটি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রায় ৪৩০টি ভবন পুড়ে ভস্ম করে দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমারের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাভাষী সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জাতিগত দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়। এরই জেরে গত সোমবার সেনাবাহিনী ৩৪ জনকে হত্যা করে। যদিও বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গত সপ্তাহে সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে অন্তত সাড়ে ৩০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের বক্তব্য, রাখাইনরা প্রথমে সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করেছিল। তবে স্থানীয় সূত্রের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নিহতরা ছিল নিরস্ত্র।
মিয়ানমারে বর্তমানে এক লাখের বেশি মুসলিম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা রয়েছে। যাদের মিয়ানমার নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না।
রাখাইন রাজ্যের এক স্কুলশিক্ষক বার্তাসংস্থা এপিকে জানান, সেনাবাহিনী নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আর ভয়ে আতঙ্কে অনেক রোহিঙ্গা বনের মধ্যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এদিকে গত কয়েকদিনের সহিংসতার পর সেনাবাহিনী নিজেদের বাড়িতে নিজেরা আগুন দিয়েছে বলে রোহিঙ্গাদের অভিযুক্ত করে।
এদিকে সেনাবাহিনীর আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রামের ছবি প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড এডামস বলেন, ‘স্যাটেলাইটের সাহায্যে তোলা ছবিগুলো শুধু রোহিঙ্গাদের বিনাশ করার বিষয়টি প্রমাণ করে না। এটা তার চেয়েও অনেক বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
ব্রাড এডামস আরো বলেন, ‘বিচার এবং ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দ্রুত জাতিসংঘের সহযোগিতায় এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করা প্রয়োজন। এর আগে প্রয়োজন ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’
সূত্র এনটিভি অনলাইন