আসুন প্রথমে জেনে নেই “জিরো ফিগার” কিভাবে আসল?
জিরো ফিগার শব্দটি সর্ব প্রথম ব্যবহার করে আমেরিকার দর্জিরা। তারা একটি ব্যবহার করেছিল ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য তৈরি পোশাক বিক্রির জন্য। দর্জিদের হিসাব অনুযায়ী জিরো ফিগারের সাইজ ছিল বক্ষ= ৩৩ ইন্চি কোমর = ২৫ ইন্চি ও নিতম্ব= ৩৫ ইন্চি। অধিকাংশ জিরো ফিগার মেইণ্টেইনকারীদের B.M.I হল ১৬.৫ থেকে ১৮, যা আন্ডারওয়েট ক্যাটাগরিতে পড়ে।
পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের একটি পোষাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এই জিরো সাইজের ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী মডেলদের দিয়ে ক্যাটওয়াক করায়, ঐ সময় থেকে এটি আবেদনময়ী, আকর্ষনীয় ও সেক্সী ফিগার হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে এই জিরো ফিগার ইলেকট্রিক মিডিয়াতে চলে আসে এবং সবার মাঝে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়। আর এই সব মডেলদের দেখা দেখি সাধারন মেয়েরাও এই জিরো ফিগারের প্রতি দারুনভাবে ঝুকে পড়ে। তবে এই জিরো ফিগার শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
জিরো ফিগারের মারাত্নক ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হলো-
১। বন্ধাত্ত ও সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা কমে যাওয়াঃ জিরো ফিগারের মেয়েদের ওজন অনেক কম থাকে,ফলে তদের শরীরে লেপ্টিন হরমনের লেভেল কমে যায়। লেপ্টিন হরমনের লেভেল কম থাকলে cascade of hormonal events বিঘ্নিত হয় ফলে ovulation and implantation বিঘ্নিত হয়, এতে করে সন্তান জন্ম দানের হার কমে যায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ১৯৪৪ সালের ডাচ দুর্ভিক্ষ ও ১৯৫৯-১৯৬১ সাল পর্যন্ত চীনা দুর্ভিক্ষ, যা ঐ সময় নিজ নিজ দেশগুলতে সন্তান জন্ম দানের হার কমিয়ে দিয়েছিল।
২। সন্তান জন্মদানে জটিলতাঃ জিরো ফিগারের মেয়েদের দুই হিপবোনের মধ্যবর্তী দূরত্ব কম থাকে ফলে তাদের বার্থ ক্যানালের প্রস্ততা কমে যায়। এতে করে সন্তান জন্মদানে জটিলতা দেখা যায়।
৩। গর্ভাবস্থায় জটিলতাঃ অনেক মেয়েই গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের ভিতরে মর্নিং সিকনেসে (ঘন ঘন বমি ও কিছু না খেতে পারা) ভুগে থাকেন। এসময় তাদের পেট ও হিপে জমে থাকা চর্বি থেকে শরীরে শক্তির সরবরাহ হয়। কিন্তু জিরো ফিগারের মেয়েদের পেট ও হিপে তেমন কোন সঞ্চিত চর্বি থাকে না ফলে ঐ দিন গুলোতে শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা যায়, এতে করে গর্ভের বাচ্চার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
৫। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মেয়েদের হিপের কার্ভ বেশী তারা তুলানামূলক বেশী মেধাবী সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন।
৬। যৌন চাহিদা কমে যাওয়াঃ যেহেতু শরীরের ফ্যাটের ঘাটতি থাকায় Steroid hormone (including estrogen & progesterone) সিনথেসিস কমে যায় ফলে জিরো ফিগারের মেয়েদের যৌন চাহিদা কমে যায়।
৭। অস্টিওফরোসিসঃ জিরো ফিগারের মেয়েরা প্রকট অপুষ্টিতে ভুগে থাকেন ফলে তাদের শরীরে ভিটামিন, মিনারেল ও ফ্যাটের অভাব দেখা যায়। ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। যদি শরীরে ১১% ফ্যাট বাড়ে তবে সেই সাথে হাড়ের প্রসস্থতা বাড়ে ৮%।
৮। দন্তক্ষয়ঃ জিরো ফিগারের অধিকাংশ মেয়েরা Nausea-vomiting এ ভুগে থাকেন। ফলে তাদের দন্তক্ষয় দেখা যায়।
৯। পেটের সমস্যাঃ জিরো ফিগারের মেয়েরা পেটের নানাবিধ সমস্যায় ভুগে থাকেন। কারণ বাউয়েল মুভমেন্ট কমে যায় ফলে তারা কোস্টকাঠিন্য ও তলপেটের ব্যাথায় ভুগে থাকেন। এছাড়া ঘন ঘন অ্যাসিডইক রিফ্লাক্স,গাস্ট্রিক ইরসন ইত্যাদি সমস্যাতেও ভুগে থাকেন।
১০। রক্তশূন্যতাঃ জিরো ফিগারের মেয়েরা প্রোটিন ও আয়রনের অভাবে ভুগেন। ফলে তাদের অধিকাংশের মাঝে রক্তশূন্যতা দেখা যায়।
১১। হতাশাঃ জিরো ফিগারের অধিকাংশ মেয়েরা হতাশায় ভুগেন কারণ তাদের থাকে anorexia.এছাড়া তারা অনেকটা খিটখিটে মেজাজের হয়ে যান।
১২। চুল ও ত্বকের সমস্যাঃ জিরো ফিগারের মেয়েদের চুল ডাল ও পাতলা হয়ে যায় স্কেলেরো প্রটিনের অভাবে। তাছাড়া ত্বক রুক্ষ, খসখসে ও শুস্ক হয়ে যায় ভিটামিন-এ এর অভাবে।
১৩। জিরো ফিগারের মেয়েদের শরীরে ফ্লুয়িড ও ইলেকট্রলাইটের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। ফলে শরীরের ভাইটাল অরগান (ব্রেন, কিডনি, হার্ট ইত্যাদি) সুমহের কাজ বিঘ্নিত হয়।
১৪। অবাঞ্চিত লোমের আধিক্যতাঃ জিরো ফিগারের মেয়েদের পিঠে, বাহুতে ও মুখে অবাঞ্চিত লোমের আধিক্যতা দেখা যায়। এর কারাণ হল শরীরে হরমোনাল ইমবালান্স এবং শরীরের ফ্যাটের পরিমাণ কমে যাওয়ায় অবাঞ্চিত লোমেকে বডি ইন্সুলেটরের কাজে লাগানো।
১৫। জিরো ফিগারের মেয়েরা অনেক সময় হাতে ও পায়ে বল পায় না।
লেখা:
মোঃ নাহিদ নেওয়াজ জোয়ার্দার;
বি.এস সি (অনার্স) শেষ বর্ষ,
পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর।