সুন্দর এক জোড়া হাত সবাই চায়। আর আমার কাছে সুন্দরের সংজ্ঞা হলো – পরিচ্ছন্নতা। এই ধুলোবালি ঢাকা পরিবেশে আপনি বাইরে যান কিংবা সারাদিন বাসার ভিতরে বসে থাকেন, হাত দুটোতে কিন্তু শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো ময়লা জমবেই। হাত দুটো পরিষ্কার, উজ্জ্বল আর মসৃন না থাকলে হাতে মেহেদি দিলেও সুন্দর করে ফুটে ওঠে না, চুড়ি বা পছন্দের ব্রেসলেট-টি পরলেও হাত দুটো মলিন দেখায়। আর আন্ডারআর্ম তো নিয়মিত এক্সফলিয়েট না করলে কালচে হয় যায়, দুর্গন্ধ বাড়ে, ইচিং হয়। তাই মুখের এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরমত হাতের, কনুইয়ের আর আন্ডারআর্মেরও কিন্তু ডীপ ক্লিনজিং আর স্ক্রাবিং জরুরি। স্ক্রাবিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা ত্বকের মৃত কোষ (dead cells) দূর করে ত্বককে সজীব রাখে।
সপ্তাহে কমপক্ষে দুই থেকে তিনদিন স্ক্রাবিং করলে হাত এবং আন্ডারআর্মের মৃত কোষগুলো (dead cells) দূর হবে, রোদে পোড়া কালচে ভাব কমবে, কোমলতা বজায় থাকবে। খুবই কম খরচে সহজেই বাসায় বসে আপনি হাত এবং বাহুমূলে (underarms) ব্যবহারের উপযোগী স্ক্রাব তৈরি করে নিতে পারেন।
নারিকেল তেল, লেবু আর চিনির স্ক্রাব (রেসিপি -১)
২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল, ৩ চা চামচ লেবুর রস মিক্স করে নিন। এবার এতে দেড় টেবিল চামচ চিনি দিয়ে সাথে সাথে দুই হাতে বাহু, কনুই, আন্ডারআর্ম-সহ ভালো করে লাগিয়ে নিন। এবং সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করতে থাকুন। প্রতিটা আঙ্গুলের ভাঁজে-ভাঁজে, কনুইতে, আন্ডারআর্মে ভালোভাবে স্ক্রাব করুন। ১০ মিনিট পর কুসুম গরম পানিতে অল্প বডিওয়াশ বা যেকোন মাইল্ড সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
উপাদানের কার্যকারিতা
চিনি হলো সবচেয়ে সহজলভ্য একটি এক্সফলিয়েটর, ডেডসেলস দূর করতে এর জুড়ি নেই। নারিকেল তেল এবং লেবুতেও ন্যাচারাল ব্লিচিং এজেন্ট আছে যা হাত আর আন্ডারআর্মের কালচে ভাব কমাবে, ত্বককে মসৃন করে তুলবে এবং উজ্জ্বলতা বাড়াবে।
চালের গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো আর অলিভ অয়েলের স্ক্রাব (রেসিপি – ২)
২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো, আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়ো আর ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে দুই হাতে, বাহুতে, কনুইয়ে এবং আন্ডারআর্মে ভালোভাবে লাগিয়ে ধীরে ধীরে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করতে থাকুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানিতে অল্প বডিওয়াশ বা যেকোন মাইল্ড সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
উপাদানের কার্যকারিতা
চালের গুঁড়ো খুব ভালো একটা স্কিন এক্সফলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। হলুদের গুঁড়ো তে আছে ন্যাচারাল অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, সেই সাথে এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং রোদে পোড়া ভাব ও দূর করে। আর অলিভ অয়েলে রয়েছে ভিটামিন এ, ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে সতেজ রাখে।
বেকিং সোডা, বেসন, আমন্ড অয়েল আর মধুর স্ক্রাব (রেসিপি – ৩)
একটি পাত্রে ২ চা চামচ বেকিং সোডা, ২ টেবিল চামচ বেসন, ২ টেবিল চামচ আমন্ড অয়েল আর ১ টেবিল চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার দুই হাতে বাহু, কনুই, আন্ডারআর্ম-সহ ভালো করে লাগিয়ে নিন। এবং সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করতে থাকুন। ক্লকওয়াইজ এবং অ্যান্টিক্লকওয়াইজ ভালোভাবে স্কিনকে এক্সফলিয়েট করুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানিতে অল্প বডিওয়াশ বা যেকোন মাইল্ড সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
উপাদানের কার্যকারিতা
আমন্ড অয়েলে আছে ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং এসেনশিয়াল ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড। তাই এই তেল ত্বকের সুস্থতা এবং উজ্জ্বলতায় বেশি কার্যকরী। মধুতে আছে ন্যাচারাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর বেকিং সোডা এবং বেসন দুটোতেই আছে ন্যাচারাল ব্লিচিং প্রোপার্টি এবং সেই সাথে দুটোই খুব ভালো স্কিন এক্সফলিয়েটর হিসেবে কাজ করে।
উপরে যে স্ক্রাব গুলোর কথা বললাম এগুলোতে যে উপাদানগুলো আমি ব্যবহার করেছি তার অধিকাংশই কিন্তু কমবেশি আমাদের সবার রান্নাঘরেই থাকে, যেমন – চালের গুঁড়ো, বেসন, হলুদ গুঁড়ো, বেকিং সোডা, চিনি, মধু, লেবু। এগুলো যেকোন বাজারের বড় দোকান বা সুপারশপেই কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া ময়েশ্চারাইজার হিসেবে আমি স্কিন ক্যাফের এক্সট্রা ভার্জিন অর্গানিক কোকোনাট অয়েল, অলিভ অয়েল আর আমন্ড অয়েল ব্যবহার করি। এ আপনারা যমুনা ফিউচার পার্ক আর সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত স্যাফায়ার এ গেলেই অরিজিনাল প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন, অথবা অনলাইনে ও ঘরে বসে অর্ডার করতে পারেন।
তো আর দেরি না করে বানিয়ে ফেলুন আপনার হাতের কাছের সহজলভ্য উপাদানগুলো দিয়ে তৈরি হ্যান্ড অ্যান্ড আন্ডারআর্ম স্ক্রাব আর নিয়মিত ব্যবহার করেই দেখুন হাত দুটো আগের চেয়ে কত সুন্দর, উজ্জ্বল, পরিষ্কার আর মসৃন দেখাচ্ছে।