এ বছরের জানুয়ারীতে পাঠানকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার সময়ে ওই চ্যানেলটির প্রতিবেদনে কৌশলগত ও স্পর্শকাতর কিছু তথ্য পরিবেশন করার দায়ে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে ওই ঘটনার সময়ে তাদের চ্যানেলে সম্প্রচারিত প্রতিবেদনগুলি নিশ্চিতভাবেই ব্যালান্সড ছিল।
পাঠানকোটের ওই হামলায় সাতজন ভারতীয় সেনাসদস্য ও ছয়জন জঙ্গি নিহত হয়েছিলেন।
ভারত দাবী করে যে পাকিস্তান ভিত্তিক সংগঠন জয়েশ-এ-মুহাম্মদ ওই ঘটনার জন্য দায়ী ছিল। ঘটনার পর পাকিস্তান থেকে একটি দলও তদন্ত করতে পাঠানকোটে এসেছিল।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আগেই অভিযোগ তুলেছিল যে ওই হামলা চলাকালীন-ই পাঠানকোট বিমান ঘাঁটির কোথায় অস্ত্রভান্ডার আছে, যুদ্ধবিমানগুলি কোথায় রাখা আছে - এধরণের কৌশলগত তথ্য তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছিল এনডিটিভি-র হিন্দি চ্যানেলটি।
চ্যানেলের কাছে নোটিশও পাঠানো হয় এবং তারপরে একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটির কাছে এনডিটিভি ইন্ডিয়া তাদের বক্তব্যও পেশ করে।
কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ৯ই নভেম্বর মাঝরাত থেকে ২৪ ঘন্টার জন্য এনডিটিভি ইন্ডিয়ার সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এনডিটিভি এক বিবৃতি জারী করে বলেছে তারা এই অভূতপূর্ব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখছে।
অন্যদিকে একটি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তে ভারতে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।
অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন সত্তরের দশকে ইন্দিরা গান্ধী যে ভাবে জরুরী অবস্থার সময়ে গণমাধ্যমগুলির ওপরে নিয়ন্ত্রণ জারী করেছিলেন, সেই সময়ের কথা।
এনডিটিভি-রই প্রাক্তন কর্মকর্তা ও টেলিভিশন সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাই টুইট করে বলেছেন, "এনডিটিভি ভারতের সংযমী ও দায়িত্বশীল চ্যানেলগুলির মধ্যে অন্যতম। আজ এনডিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, কাল কার পালা?"
আরেক সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ লিখেছেন, "স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপরে সরকারের এটা হতবাক করে দেওয়ার মতো শক্তি প্রদর্শন। গণমাধ্যমকে হত্যা করবেন না।"
অনেক সাধারণ মানুষও ফেসবুক-টুইটারে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বেশীরভাগই যেমন গণমাধ্যমের ওপরে সরকারের এই হস্তক্ষেপের বিরোধীতা করেছেন, অনেকে আবার এই ঘোষণাকে স্বাগতও জানিয়েছেন।
তেজিন্দার পাল বগ্গা লিখেছেন, "এনডিটিভি-তে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো জঙ্গিদের হাতেও চলে যেতে পারত, যার ফলে আরও প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনা ছিল।"
রাহুল সিঙ্গলা আবার প্রশ্ন করেছেন, "কেন এনডিটিভি-র শাস্তি ৩০ দিন থেকে কমিয়ে মাত্র একদিন করে দেওয়া হল? এই চ্যানেলটা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া উচিত, ওটার প্রয়োজন নেই আমাদের।"