দীর্ঘ ২২ বছর পরে বলিউড অভিনেত্রী ১৯ বছর বয়সী দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর নতুন রহস্য উন্মোচিত হল ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল- অসমাপ্ত এক অধ্যায়ের কালরাত। এ রাতের কথা মনে হলে আতঁকে উঠেন অনেক দিব্যা ভক্ত। এ রাতে পাঁচতলা এপার্টমেন্ট থেকে পড়ে মারা যান অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী। অনেকে বলেছেন এটা আত্মহত্যা, আবার অনেকে বলেছেন খুন। নান জল্পনা-কল্পনা শেষে রহস্যের কোন কুল কিনারা না পেয়ে ১৯৯৮ সালে এই হত্যামামলার ফাইল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সম্প্রতি উন্মোচিত হয়েছে এর রহস্য বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম ইবলিউড।
মনে করা হয় দিব্যার খুনের জন্য দায়ি তার স্বামী সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা। অনেকে আবার বলেন, মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্যের জের ধরেই আত্মহত্যা করেছেন নায়িকা।
এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তকারী আধিকারিক ছিলেন ভারসোভা পুলিশ স্টেশনের ইন্সপেক্টর জে জি যাদব এবং কুপার হাসপাতালে তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট সই করেন সেখানকার চিফ মেডিকাল অফিসার ডা. ত্রিপাঠি। এই কজন ছাড়া সেই রাতে ঠিক কী হয়েছিল সেটা কেউই জানেন না! কিন্তু তা বলে তো আর হাত গুটিয়ে থাকা যায় না! তাই যোগাযোগ করলাম এমন কয়েকজনের সঙ্গে যাঁরা এই কেসের তদন্তের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জন কথাও বলতে রাজি হলেন। কিন্তু ওই, নাম নেওয়া যাবে না!! তাই সই… সেই সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতেই ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিলের রাতের একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করলাম।
মৃত্যুর দিনই চেন্নাই থেকে ফিরেছিলেন এবং ওই রাতেই আবার একটি ছবির শ্যুটিংয়ের জন্যে হায়দরাবাদ যাওয়ার কথা ছিল দিব্যার। কিন্তু মা-বাবার জন্যে একটি ফ্ল্যাটের ডিল ফাইনাল করবেন বলে সেদিন যাওয়া বাতিল করেন তিনি। প্রযোজকদের তিনি জানান যে পায়ে চোট লাগার ফলে একদিন পর হায়দরাবাদ যাবেন। এমনকি সেই দিন সবাই তাঁর পায়ে ব্যান্ডেজও বাঁধা দেখেন। মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেই একজন ব্রোকারের সঙ্গে পশ্চিম বান্দ্রার নেপচুন অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলেন দিব্যা। চার বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট এতটাই পছন্দ হয়ে যায় যে আউটরাইট কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই মতো ডিল ফাইনাল করে নিজের ফ্ল্যাটে ফেরেন। এই খবর তাঁর ভাইকেও জানান। তবে তাঁর ভাই এর পরে আর সঙ্গে ছিলেন না। নেপচুন অ্যাপার্টমেন্টে থাকাকালীনই একটি ফোন পান দিব্যা… তাঁকে জানানো হয় যে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ফ্যাশন ডিজাইনার নীতা লুল্লা ও তাঁর স্বামী আসবেন। আসলে হায়দরাবাদ থেকে ফিরেই একটি লম্বা আউটডোর শ্যুটে মরিশাসে যাওয়ার কথা ছিল দিব্যার। সেখানে তাঁর স্বামী সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার পরবর্তী ছবি আন্দোলনের শ্যুটিং হওয়ার কথা ছিল। এবং সেই ছবিতেই তাঁর কস্টিউম ডিজাইন করার দায়িত্ব পড়েছিল নীতার উপরে। সেই ব্যাপারেই কথা বলতে এসেছিলেন তিনি সেদিন। সেদিন একটু বেশিই খুশি ছিলেন দিব্যা।
রাত দশটা নাগাদ ভারসোভার তুলসী অ্যাপার্টমেন্টে এসেছিলেন নীতা ও তাঁর স্বামী। সবাই মিলে লিভিং রুমে বসেই আড্ডা মারছিলেন। সঙ্গতে ছিল মরিশিয়ান ওয়াইন এবং ব্ল্যাক লেবেল হুইস্কি। তাঁর কাজের লোক সেই সময়ে কিচেনে ডিনার বানাতে ব্যস্ত ছিলেন! বাকীরা অ্যালকোহল নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠেন। নীতা ও তাঁর স্বামী যখন ভিডিও প্লেয়ারে ছবি দেখতে ব্যস্ত তখন দিব্যা জানলার দিকে এগিয়ে যান।
সবার চোখের আড়ালে জানলার নিচে সানসেটে গিয়ে দাঁড়ান দিব্যা। তবে সেটি এতোই সংকীর্ণ ছিল যে জানালার ফ্রেম না ধরে সেখানে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। মাতাল অবস্থায় ভালমতো দাঁড়াতে না পেরে পা পিছলে পার্কিংয়ে পড়ে যান। শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে দেখেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে দিব্যার দেহ। মুম্বাইয়ের কুপার হাসপাতালে নেয়ার সময় জীবিত থাকলেও জরুরি বিভাগে পৌঁছানোর আগেই মারা যান তিনি।
সব জায়গায় একটা কথাই পাওয়া গিয়েছে, দিব্যা নাকি তাঁর লিভিং রুমের বারান্দা দিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সত্যিটা হল, তাঁর লিভিং রুমের লাগোয়া কোনও বারান্দা ছিল না। ছিল একটা বড় খোলা জানলা। অন্য সব জানলায় গ্রিল লাগানো থাকলেও এই জানলায় কোনও গ্রিল ছিল না। জানলার ঠিক নীচেই ছিল পার্কিং স্পেস। কিন্তু সেদিন কোনও গাড়ি ছিল না পার্কিং লটে। যখন কেউ খেয়াল করছিল না তখন দিব্যা জানলা পেরিয়ে বাইরের ১২ ইঞ্চি চওড়া কার্নিশে গিয়ে দাঁড়ান! সেখানে ব্যালেন্স ঠিক রাখা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি পিছন ফেরার চেষ্টা করেন যাতে লিভিং রুমের দিকে তাঁর মুখ থাকে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর সময়েই রেলিং থেকে হাত ফসকে যায় তাঁর! এবং তিনি গিয়ে পড়েন নীচের পার্কিং লটে! পড়ার শব্দ শুনে সবাই ছুটে এসে দেখেন যে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে এবং তারই মধ্যে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছেন দিব্যা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়।
প্রথমেই যে প্রশ্নটা উঠেছিল তা হল, ঘরে উপস্থিত কেউ কি তাঁকে খেয়াল করেননি! নাকি খেয়াল করেও নজরআন্দাজ করে গিয়েছিলেন!! পুলিশের জেরায় তাঁর বন্ধুরা জানান যে এই ধরনের স্টান্ট করতে ভালোবাসতেন দিব্যা। শ্যুটিংয়ের সময়েও এমন অনেক সময়েই তিনি মৃত্যুর সঙ্গে খেলা করেছেন…
মাত্র ১৯ বছর বয়সেই মারা যান দিব্যা! বলিউডের নামী নায়িকার তকমা বাদ দিলে নেহাতই টিনএজার ছিলেন তিনি! ফলে এই বয়সের অনেক অস্থিরতাই ছিল তাঁর মধ্যে, যা খুবই স্বাভাবিক…এর থেকে বেশি স্বচ্ছ তথ্য তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে আগে পাওয়া যায়নি…
তৎকালীন সময়ে বানানো ছবি নিয়ে একটি ভিডিও