আপনি আছেন » প্রচ্ছদ » খবর

বাণিজ্য মেলায় চাকরি, যেভাবে করবেন আবেদন

খণ্ডকালীন চাকরিতে যাঁরা আগ্রহী, তাঁদের কাছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাকে এককথায় পছন্দের স্থানই বলা চলে। প্রতিবছরই মেলায় প্রচুর দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, যারা মেলায় নিজেদের পণ্য বিক্রির পাশাপাশি চালায় প্রতিষ্ঠানের প্রচারও। আর তাই মেলা চলাকালে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিয়ে নিজেদের পণ্য বিক্রয় ও সঠিকভাবে উপস্থাপন করার জন্য বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই তাদের নিয়মিত কর্মীর পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক চুক্তিভিত্তিক খণ্ডকালীন কর্মী নিয়োগ করে থাকে।

প্রতিবারের মতো আগামী বছরের প্রথম দিন থেকেই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। গত বছর এই মেলায় ছয় শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল, যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। মেলা উপলক্ষে তাই প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই শুরু করেছে তাদের কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া।

খোঁজ নিয়ে সেসব প্রতিষ্ঠানে মেলা চলাকালীন খণ্ডকালীন কর্মী হিসেবে যোগ দিতে পারেন আপনিও।

শিক্ষাগত যোগ্যতা
বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে যাঁরা খণ্ডকালীন ভিত্তিতে কাজ করে থাকেন, তাঁদের একটি বড় অংশই আসে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে। এ ব্যাপারে হাতিল ফার্নিচারের হেড অব অপারেশনস মো. সামুয়েল মল্লিক বলেন, ‘বাণিজ্য মেলায় খণ্ডকালীন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার্থীদেরই বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। বিশেষ করে সদ্য স্নাতক অথবা বর্তমানে যাঁরা স্নাতক সম্পন্ন করছেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।’ তবে এইচএসসি পাস করা প্রার্থীদেরও নিয়োগের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

বাড়তি যোগ্যতা
বাণিজ্য মেলায় কাজ করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি প্রয়োজন হয় বাড়তি কিছু যোগ্যতারও। এ ব্যাপারে আরএফএল গ্রুপের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. আফসার উদ্দিন বলেন, মেলায় কাজ করতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি যোগাযোগের দক্ষতা, উপস্থাপনার কৌশল, স্মার্টনেস, উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি বিষয়ও খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া একজন প্রার্থী কতটা দক্ষ, সে বিষয়েই আমরা মূলত জোর দিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কি না, তা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, নিয়োগ দেওয়ার আগে আমরা প্রত্যেক কর্মীকেই বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে থাকি। তবে এ ক্ষেত্রে কারও কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে নিয়োগের সময় তাঁদের কিছুটা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।’ তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকরি পাওয়াদের তালিকাটাও বেশ বড়। পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই গত বছরের বাণিজ্য মেলায় কাজ করেছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী দীপান্বিতা দাস। তিনি জানান, গত বছরের মেলায় কাজ করার আগে এই খাতে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, কিন্তু খুব ভালোভাবেই একটি প্রতিষ্ঠানে সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি।

কোথায় পাবেন খোঁজ
বাণিজ্য মেলায় ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমেই বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে মেলায় যেসব প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে মেলায় কাজ পাওয়া সহজ হয়। সে জন্য মেলা শুরুর দু-এক মাস আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ছাড়া মেলায় যেসব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান কর্মী সরবরাহ করে, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন।

আরএফএল গ্রুপের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. আফসার উদ্দিন আরও বলেন, ‘বাণিজ্যমেলায় নিয়োগের জন্য আমরা বিভিন্ন জব পোর্টাল এবং পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে যাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন, তাঁদের মধ্য থেকেও আমরা লোকবল নিয়োগ দিয়ে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্য মেলায় নিয়োগের জন্য আমরা বিভিন্ন জব পোর্টালে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটের “ক্যারিয়ার” সেকশনের মাধ্যমেও লোকবল নিয়োগ করে থাকি।’

তবে এ ব্যাপারে ইগলু আইসক্রিমের এক্সিকিউটিভ, ব্র্যান্ড অ্যান্ড ইভেন্ট কাজী রাশিদুল মোবারক বলেন, ‘ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছাড়াও আমরা ফেসবুকে বিভিন্ন চাকরি প্রদানকারী এবং চাকরিপ্রত্যাশীদের গ্রুপগুলোর মাধ্যমে লোকবল সংগ্রহ করে থাকি। এর বাইরেও আমাদের কোম্পানির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ইনবক্সে অনেকেই তাঁদের সিভি পাঠান, সেখান থেকেও আমরা প্রতিবছর লোকবল নিয়োগ দিয়ে থাকি।’

সুযোগ-সুবিধা
বাণিজ্য মেলায় এক মাস খণ্ডকালীন চাকরির জন্য কর্মীরা প্রতিষ্ঠানভেদে ১৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এ ছাড়া সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার, বিকেলের নাশতা, রাতের খাবার, ক্ষেত্রভেদে মোবাইল খরচ এবং যাতায়াত খরচও দেওয়া হয়। মেলার কাজ করার সময় কর্মীদের মেলার জন্য প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট পোশাক দেওয়া হয়। এর বাইরে কেউ চাইলে এক মাসের কাজের অভিজ্ঞতা সনদও দেওয়া হয়, যা পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বা অন্য কোথাও চাকরির ক্ষেত্রে আবেদনপত্রে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখানো যায়।

এ ব্যাপারে হাতিল ফার্নিচারের হেড অব অপারেশনস মো. সামুয়েল মল্লিক আরও বলেন, ‘মেলায় কাজ শুরু করার আগেই আমরা আমাদের প্রত্যেক কর্মীকে গ্রাহকের কাছে পণ্যটি কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে, কীভাবে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে হবে ইত্যাদি নানাবিধ বিষয়ে প্রায় দুই সপ্তাহের ট্রেনিং দিয়ে থাকি, যা পরে তাঁদের কর্মজীবনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।’

সুত্রঃ প্রথম আলো