আপনি আছেন » প্রচ্ছদ » খবর

ভ্যালেন্টাইনো তেড়েসকোপা

নোমানের প্রেম প্রায় এক বছরের; তবে এক তরফা! যাকে সে ভালোবাসে, তাকে ভয়ে মনের কথা বলতে পারেনি। ফেসবুকে মেসেজ পাঠিয়েছে; ‘সিন’ বা ‘আনসিন’ কিছুই হয়নি! ইনবক্সে থমথমে অবস্থা। নোমান ঠিক করল, ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’-তে মেয়েটিকে মনের কথা বলবেই। কিন্তু তার ভ্যালেন্টাইন যেমন মেজাজী, তাতে প্রোপোজ করামাত্র তেড়ে এসে কোপাকুপির ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলতে পারে! এমন মেজাজের কারণে নোমান তার একটি নামও রেখেছে, ‘ভ্যালেন্টাইনো তেড়েসকোপা’! তেড়েসকোপার মন নাকি সিমেন্টের তৈরি! গবেষণায় জানা গেছে, তিন শতাংশ মেয়ে রাস্তায় অস্ত্র সঙ্গে নিয়ে ঘোরে।

নোমান নিশ্চিত, এই মেয়ে সেই দলের একজন! অনেক সাধনায় তেড়েসকোপার মোবাইল নম্বর জোগাড় করে নোমান একদিন কল দিয়েছিল। ওপাশ থেকে থমথমে ‘হ্যালো’ শুনে কাঁপতে কাঁপতে নোমান নিজেই বলেছিল, ‘সরি, রং নাম্বার!’ ইনবক্সে অন্যপক্ষের কোনো সাড়া না পাওয়ায় নোমানের ভ্যালেন্টাইন ডে পড়ল ঝুঁকির মধ্যে। সাহস করে আরও একদিন কল করে বসল সে। কী আশ্চর্য, পরিচয় পেয়ে তেড়েসকোপা তেড়ে কোপাতে এল না! নোমান তারই সহপাঠী; ক্লাসের ফার্স্ট বয়! আগে কখনো কথা হয়নি। তেড়েসকোপা বলল, ‘তুমি পড়াশোনা না করে কথা বলে সময় নষ্ট করছ কেন?’ নোমান থতমত খেয়ে গেল। মেয়েটি এবার তেড়ে এল, ‘এটা ভাইভা পরীক্ষার প্রশ্ন না; ঘাবড়ানোর কী আছে? উত্তর দাও।’

ছবিঃ নাজমুস সাকিব, মডেলঃ আসিফ ও দৃষ্টি

নোমান উত্তর দিল, ‘স্যার বলেছেন, মন দিয়ে পড়তে। পড়তে তো বসিই; কিন্তু মন দেওয়া বাকি। আজ পর্যন্ত কাউকেই মন দিতে পারলাম না!’ এমন উত্তরে তেড়েসকোপা কুপিয়ে হাসবে না ফুঁপিয়ে কাঁদবে, বুঝতে পারল না! অষ্টম আশ্চর্য হলেও সত্যি, নোমান মেয়েটির সঙ্গে প্রথমবারের মতো রেস্টুরেন্টে দেখা করার ভিসা পেয়ে গেল! কিন্তু নির্ধারিত দিনে পথিমধ্যে ঘটল বিপত্তি! এলাকার ‘পিস ভাই’ সাঙ্গপাঙ্গসহ নোমানের পথ আগলে দাঁড়ালেন। ‘পিস ভাই’ নাকি কোনো কিছুই আস্ত পছন্দ করেন না; পিস-পিস করে ফেলেন! তিনি নোমানকে বললেন, ‘শুনলাম, তুই নাকি আমার পাখির দিকে হাত বাড়াইছিস? কী জানি নাম? নোম্যান? একেবারে দুই টুকরা কইরা এক টুকরার নাম দিমু “নো”, আরেক টুকরার নাম দিমু “ম্যান”। নো ম্যান, গো হোম ম্যান!’ নোমান ভালো ছেলে। থিওরিটিক্যাল নলেজে বাপরে বাপ; কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞানে পুরাই গাব!

ছবিঃ নাজমুস সাকিব, মডেলঃ আসিফ ও দৃষ্টি

‘জি আচ্ছা’ বলে সে রেস্টুরেন্টের দিকেই পা বাড়াল! ফলে যা ঘটার, তা-ই ঘটল। নোমান পিস-পিস হলো না ঠিক; কিন্তু মাইর একটাও মিস হলো না। বেচারার নাকে শর্ট সার্কিট হয়ে রক্ত পড়তে লাগল। ঘটনার দুদিন পর তেড়েসকোপা হাসপাতালে হাজির। নোমানকে দেখে প্রথমে তার আফসোসই হলো; বেকুব ছেলেটা বাসায় ফিরে গিয়ে পরেও দেখা করতে পারত! সেদিন দেখা করার জন্য অস্থির হওয়ায় এই অবস্থা। তবে সামনাসামনি কিছুক্ষণ কথা বলার পর নোমানকে তেড়েসকোপার আর বেকুব মনে হলো না! কেন যেন নোমানেরও তেড়েসকোপাকে মহিলা হিটলার মনে হলো না! অতঃপর... ভ্যালেন্টাইন ডে নোমানের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনেনি; সুখই বয়ে এনেছে!

- আসিফ মেহ্‌দী