আমাদের দেশে সাধারনতঃ বিয়ের আগে মেয়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয় না। কিন্তু উন্নত বিশ্বে সব ধরনের পরীক্ষা বিয়ের আগে করিয়ে নেয়া হয়।
বিয়ের আগে, টিকা, জরায়ু ক্যান্সার, মাসিক, সাদাস্রাব, রক্তক্ষরণ, vaccinated of girls
নারীরা কিছু রোগের কথা আপনজনকেও জানাতে চান না। এমন একটি রোগ জরায়ু মুখের ক্যান্সার। এই রোগ পুষে রাখে। আড়াল রাখে। নারী বলে না, বলতে চায় না। অথচ নিজেকে নিরবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
কি বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?
বাংলাদেশে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রকোপ এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপ অনুযায়ী, ‘ বাংলাদেশে প্রতিবছর সাড়ে ১৭ হাজারেরও বেশি (১৭ হাজার ৬৮৬ জন) নারী নতুন করে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন নারীর মৃত্যুর কারণ জরায়ুমুখ ক্যান্সার।’ এই ঘাতক ব্যাধি থেকে বাঁচতে হলে আমাদের দেশে প্রতিটি মেয়ে বা নারীকে সচেতন হতে হবে। একই সাথে পরিবারের সদস্যদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। যাতে এ ঘাতকের হাত থেকে তার প্রিয়জনকে রক্ষা করতে পারেন।
কখন বুঝবেন_
– সহবাসের পর রক্ত ফোঁটা দেখতে পাওয়া ঝুকিপূর্ণ নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
–সাদা/ দুরগন্ধজুক্ত/ লাল পানির মত স্রাব ক্ষরণ হলে এই রোগের আরেকটি পজেটিভ সংকেত ।
মাসিক শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবার মাসিক period দেখা দেয়া (মাসে ২-৩ বার মাসিক হওয়া) / মাসিকের সময় অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ। দিন যত যেতে থাকে উপসর্গের মাত্রা ততই বাড়তে থাকে। যেমন তলপেটে এবং কোমরে ব্যথা। প্রসাব-পায়খানা করতে অসুবিধা হওয়া। এ ছাড়াও জ্বর, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা Physical weakness দেখা দিতে পারে।
জরায়ুমুখ ক্যানসার_
এটি যৌন বাহিত সংক্রমণ রোগ। এর কারণ হচ্ছে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)। সার্ভিক্যাল ক্যানসার বা জরায়ুমুখের ক্যানসার Cancer uterus প্রধান কারণ এইচপিভি। এইচপিভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে মাথা ও ঘাড় ক্যানসারও হতে পারে। এছাড়া ফুসফুস ক্যানসারের সূত্রপাত হবার ক্ষেত্রে এই ভাইরাস দায়ী। এই ভাইরাসের বাহক প্রধানত পুরুষ। পুরুষের মাধ্যমেই এইচপিভি প্রবেশ করে মেয়েদের শরীরে।
চিহ্নিত করণ_
জননক্ষম মেয়েদের-(১৫-৪৫) বা যাদের কোনো রকম সন্দেহ হচ্ছে- যে ক্যান্সার টেস্ট করা দরকার বছরে ১ বার বা নেগেটিভ ক্ষেত্রে ৩ বছর পর পর এই টেস্ট করতে হবে।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে_
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা এইচপিভি টিকা। ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের সব মেয়ে বা নারী জরায়ু-মুখ ক্যান্সার Cancer uterus প্রতিরোধ টিকা নিতে পারেন। এ টিকার তিনটি ডোজ নিতে হয়।বিয়ের আগেই সম্পন্ন করতে হয়।
টিকা নেবার নিয়ম কানুন_
প্রথম ডোজ নিন যে কোন তারিখে। প্রথম নেওয়ার এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ। এই টিকা হাতের মাংসপেশিতে দিতে হয়।
কোথায় পাওয়া যাবে এই টিকাদান সেবা_
গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই টিকা গ্রহণ করা যেতে পারে। এই টিকা সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিক, মেরিস্টোপস ক্লিনিক, বড় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও পাওয়া যায়।
বিয়ের পর ঝুঁকি এড়াতে করণীয়_
ঘন ঘন সন্তান ধারণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
দীর্ঘদিন একটানা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি (১২ বছরের অধিক সময়)সেবন করা যাবে না।
তামাক ও তামাক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার যেমন ধূমপান, পানের সঙ্গে জর্দা, তামাক পাতা সেবন ও তামাকের গুঁড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
আজ যে কিশোরী আগামী দিন সেই হবে মা। তাই মা হবার আগে তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা ব্যক্তি, পরিবার তথা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর রাষ্ট্রীয় দায়িত্বেই কিশোরীদের দেয়া হয় টিটি টিকা।
টিটেনাস টিকা কেন নিতে হয়?
হবু মায়েদের টিটি টিকা নিতে হবে যেন বাচ্চার ধনুষ্টঙ্কার না হয়। যদি আগে কোণ টিকা নেওয়া না থাকে, তবে সবগুলোই দিতে হবে। টিটেনাস টক্স্যয়েডের টিকা দেওয়া হলে শুধু মা হবার পরও সুরক্ষা দেবে ধনুষ্টঙ্কার হবার আশঙ্কা থেকে।
এই টিকা দেবার নিয়ম :
এই টিকাটির মোট ৫টি ডোজ নিতে হয়। এর মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের সময় টিটেনাস (Tetanus) প্রতিরোধ করে জীবন রক্ষা করা যায়।
১ম ডোজটি দিতে হয় ১৫বছর বয়সে।
২য় ডোজ দিতে হয় ১ম ডোজের ৪মাস পর।
৩য় ডোজ দিতে হয়ে ২য় ডোজের ৬মাস পর।
৪র্থ ডোজ দিতে হয় ৩য় ডোজের ১বছর পর।
৫ম ডোজ দিতে হয় ৪র্থ ডোজের ১বছর পর।
সময় লাগবে কতদিন?
টিকা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন কার্ড করতে হয়। টিটি টিকার ডোজ পূরণ হতে সময় লাগে দুই বছর সাত মাস। দীর্ঘ ডোজের সময় ভূল এড়ানোর জন্য রেজিস্ট্রেশন কার্ড করতে হয়।
সময় মত টিকা দিতে না পারলে :
কেউ যদি ১৫বছর বয়সে টিটেনাস টিকা না নিয়ে থাকেন, তবে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ(Doctor’s advice) অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে টিকা নিতে পারেন।
টিকা কোথায় পাওয়া যায়?
এই টিকা সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিক, মেরিস্টোপস ক্লিনিক, বড় হাসপাতাল, সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও পাওয়া যায়। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতি রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে করণীয় :
ইনজেকশন দেওয়া স্থানে লালচে গোটা হয়ে ফুলে যেতে পারে। ব্যথা থাকে, জ্বলে। অনেকেরই জ্বর চলে আসে। জ্বর দুই তিন দিন স্থায়ী হতে পারে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই। টিকা দেওয়ার পর বাহুর পেশিতে হাত দিয়ে ম্যাসাজ করতে থাকুন বরফ ঘসে লাগান ৩০-৪০মিনিট।
বিঃ দ্রঃ চার থেকে ১০দিনের মধ্যে ব্যথা ভালো না হলে, গরম ও লালচে হয়ে ফুলে গেলে, দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হোন। কারন এটি অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
সূত্র - বাংলাফ্রেম