কোরবানি ঈদ মানেই গরু ও খাসীর মাংস আর সেই মাংস দিয়ে তৈরি মজার মজার খাবার। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী আর গরীবদের মাঝে মাংস বিতরনের পরও অনেক মাংস থেকে যায়। আর এই মাংস যদি সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করা না যায় তাহলে খুব দ্রুতই তা নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই সঠিক উপায়ে মাংস সংরক্ষণের পদ্ধতি জানা থাকাটা খুব দরকার। আপনাদেরই সুবিধার জন্য আজ রইলো কোরবানির মাংস সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করার কিছু সহজ পদ্ধতি।
ফ্রিজে রেখে মাংস সংরক্ষণ–
ফ্রিজে রেখে মাংস সংরক্ষণ করাটাই সব থেকে সহজ পদ্ধতি। কিন্তু ফ্রিজে রেখে মাংস সংরক্ষণ করতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।
– মাংস সংরক্ষণ করার আগে প্রথম ধাপ হলো আপনার ফ্রিজ পরিষ্কার করা। ঈদের সকালে কিংবা আগেই ফ্রিজ বন্ধ করে নিয়ে ফ্রিজের ভেতরের সব মাছ, মাংস বের করে ফ্রিজের ভেতরটা ভালমতো পরিষ্কার করে নিন। মাছ, মাংস রাখতে রাখতে ফ্রিজের ভেতরে একটা বাজে গন্ধ হয়ে যায়। তাই ঈদের আগে ফ্রিজ পরিষ্কার করে না নিইয়ে মাংস সংরক্ষণ করলে সেই মাংসে বাজে গন্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
– এবার আসি মাংস সংরক্ষণের কথায়। মাংস পানি দিয়ে ধুয়ে রক্ত পরিষ্কার করে নিন। এবার বড় চালনিতে করে মাংসের পানি ঝরিয়ে ফ্যানের নিচে রেখে মাংস শুকাতে দিন। সব পানি ঝরে গেলে পলিথিনের প্যাকেটে ভরে মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।
– মাংস যদি ধুতে না চান তাহলে পরিষ্কার শুকনা কাপড় দিয়ে মাংসের গায়ে লেগে থাকা রক্ত ভালমতো মুছে নিন। এবার পলিথিনে করে ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ করুন।
– ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ করার জন্য যে পলিথিন ব্যবহার করবেন তা একটু মোটা হওয়াই ভালো। তাহলে ফ্রিজ থেকে মাংস বের করার সময় প্যাকেট ছিঁড়ে যাবে না।
– মাঝে মাঝে ফ্রিজে রাখা প্যাকেট গুলো একটু নাড়াচাড়া করুন। এতে করে প্যাকেট একটার সাথে অন্যটা লেগে যাবে না।
– মাংস প্যাকেট করে ফ্রিজের ভেতর রাখার সময় দুই প্যাকেটের মাঝে মোটা কাগজ বা পাতলা কাঠের টুকরা দিতে পারেন, এতে করে মাংসের প্যাকেট একটার গায়ের সাথে অপরটা এঁটে যাবার চিন্তা থাকবে না।
– মাংস সংরক্ষণ করার জন্য অবশ্যই পরিষ্কার পলিথিন ব্যবহার করুন। আগে ব্যবহার করা হয়েছে এমন পলিথিন না নেয়াই ভাল, কারন এতে মাংসে গন্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
– ফ্রিজে মাংস রাখার পর ফ্রিজের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিন। তাহলে মাংস দ্রুত শক্ত হবে।
জ্বাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণ–
জ্বাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণ করতে হলে মাংসে চর্বির পরিমান একটু বেশি থাকাই ভাল। কারন এতে মাংস দীর্ঘদিন ভাল থাকে। প্রথমে মাংস ভাল করে ধুয়ে বড় একটা হাঁড়িতে নিন। এবার হলুদ ও লবন মিশিয়ে পরিমান মতো পানি দিয়ে মাংস জ্বাল দিন। এই মাংস দিনে কমপক্ষে ২ বার নিয়ম করে জ্বাল দিতে হবে।
রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণ–
ফ্রিজে ও জ্বাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণ করা ছাড়াও রোদে শুকিয়েও মাংস সংরক্ষণ করা যায় । এই উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করলে তা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
– রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণ করতে হলে চর্বি ছাড়া মাংস নিতে হবে। মাংস পরিষ্কার করে ধুয়ে ছোট টুকরা করে নিন। এবার তারে একটার পর একটা মাংস গেঁথে নিন।
– এবার তারে গাঁথা মাংস ছাদে বা বারান্দায় কাপড় শুকানোর মতো করে টানিয়ে দিন। এছাড়া চুলার উপরে তার বেঁধেও আগুনের তাপে মাংস শুকানো যায়। এই উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করলে মাংসের সমস্ত পানি টেনে মাংস একদম শুকিয়ে যায়, ফলে দীর্ঘদিন তা ভালো থাকে।
– ছাদে মাংস শুকাতে হলে পাতলা কাপড় বা নেট দিয়ে মাংস ঢেকে দিন। এতে করে ধুলোবালি পড়ে মাংস নোংরা হবে না।
– পর পর ৫-৬ দিন মাংস রোদে দিন। মাংস শুকিয়ে একদম শক্ত হলে মুখ বন্ধ করা পাত্রে বা টিনের কৌটায় মাংস ভরে ভালমতো মুখ বন্ধ করে রাখুন। মাঝে মাঝে কৌটা ধরে মাংস রোদে দিন। তাহলে পোকার আক্রমন হবে না।
– রোদে শুকানো মাংস রান্না করার আগে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা হালকা গরম পানিতে মাংস ভিজিয়ে রাখুন , এতে মাংস নরম হবে।