গরমে আমরা অনেকেই বাইরে বেশিক্ষণ থাকতে পছন্দ করি না। এর প্রধান কারণ হলো ঘামের দুর্গন্ধ যা আমাদের সবার কাছেই বিরক্তি ও অস্বস্তির কারণ। গরমে আমাদের শরীর অতিরিক্ত মাত্রায় ঘামে ফলে শরীরে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয় যা দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। ঘামের দুর্গন্ধ থেকে বাচঁতে আমরা অনেকেই ডিওডারান্ট ব্যবহার করে থাকি। ডিওডরান্ট সাময়িকভাবে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে সাহায্য করলেও এরূপ বিরুপ প্রতিক্রিয়া সুদূর প্রসারী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী ডিওডরান্ট মানব শরীরে ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে। এ কারণে অনেকেই এখন আর ডিওডরান্ট ব্যবহার করেন না। কিন্তু কিছু ঘরোয়া নিয়ম মেনে চললেই আপনি পারেন আপনার শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে।
জেনে নিন এই গরমে কিভাবে আপনার শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখবেনঃ
আমাদের শরীরে সাধারণত বগল থেকে সবচেয়ে বেশি ঘামে ও দূর্গন্ধ নির্গমন করে। এর কারণ হলো বগলে জন্মানো দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া। আ্যলকোহল, ভিনিগার বা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বগলে ব্যবহার করলে বগল থেকে দুর্গন্ধ নির্গমন প্রতিরোধ করা সম্ভব। ভিনিগার আমাদের সবার কাছেই খুবই পরিচিত ও সহজলভ্য। আমরা বিভিন্ন সময় রান্নায় ভিনিগার ব্যবহার করে থাকি। তবে এই ভিনিগারের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও আছে। আমাদের দেশে সাধারণত সাদা ভিনিগার বেশি ব্যবহার করা হয়। ১ টেবিল চামচ সাদা ভিনিগারে ০.৯ গ্রাম শর্করা, ০.৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। আ্যলকোহল, ভিনিগার বা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বগলে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়া জমতে না দিয়ে বগলকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে সহায়ক।
আমরা অনেকউ বেকিং সোডা অহরহ ব্যবহার করি। বেকিং সোডা, যেটা খাবার সোডা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেটির অজানা অনেক উপকারিতা বিদ্যমান। বেকিং সোডার রাসায়নিক নাম sodium bicarbonate অথবা অনেক সময় bicarbonate of soda ও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সম্ভবত এটি বিপনন হয় খাবার সোডা হিসেবে। গরমে শরীরকে ঘামের দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে বেকিং সোডা হতে পারে একটি সহজ অথচ অসাধারণ একটি উপায়। বেকিং সোরা শরীর থেকে ঘাম শোষন করে। এর ফলে ত্বকের উপরিভাগ ঘামমুক্ত ও শুষ্ক থাকে এবং ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে না। গোসলের পর পরই বগলে বেকিং সোডা ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক থাকবে শুষ্ক, প্রনবন্ত ও দুর্গন্ধমুক্ত।
সাধারণত দেখা যায় যে আমাদের শরীরের যে সকল অংশে বেশি পরিমাণ লোম হয়েছে সেসব অংশ শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় একটু বেশিই ঘামে। এর কারণ হলো লোমকূপে আটকে থাকা ঘামের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়া। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিয়মিত শেভ করা হতে পারে আপনার জন্য একটি সহজ সমাধান। শেভকৃত স্থানে সহজে ঘাম জমতে পারে না যার ফলে শরীর থেকে অপেক্ষাকৃত কম দুর্গন্ধ বের হয়।
শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে সাহায্য করে এমন আর এটি সহজলব্য বস্তু হলো টি ট্রি অয়েল। টি ট্রি অয়েল একধরনের এসেনশিয়াল অয়েল, যা ত্বকের ব্রণের ও ঘামের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করে, খুশকি দূর করে ও সংক্রমণ জাতীয় সমস্যারও সমাধান করে। তবে এই তেল কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন কালো রঙের কাচের বোতলে থাকে। এতে এর কার্যমতা বহাল থাকবে। ত্বকে জালাপোড়া না করলে বগলে ও স্তনের নীচে টি ট্রি অয়েল ব্যবহারে শরীর একদিকে যেমন দুর্গন্ধমুক্ত থাকে অন্য দিকে টি ট্রি অয়েলের সুগন্ধ আপনাকে রাখবে সতেজ ও প্রাণবন্ত।
লেবু ঘাম ও দুর্গন্ধ প্রতিরোধে প্রাকৃতিক ডিওডরেন্ট হিসেবে কাজ করে। গোসলের ২০-৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানিতে পরিমানমত লেবুর রস মিশিয়ে তারপর গোসল করলে শরীর দুর্গন্ধমুক্ত থাকে। তাছাড়া লেবুর রস ও বেকিং সোডার পেস্ট তৈরী করে বগলে ব্যবহার করলে ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত থাকা যায়। তবে সূর্যের আলো বা রোদে বের হওয়ার পূর্বে ত্বকে লেবু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।