খেতে বসে হেঁচকি উঠলে আমাদের মা-ঠাকুমাকে বলতে শোনা যেত, কেউ নিশ্চয়ই মনে মনে তোর নাম করছে। মা-ঠাকুমার কথা না-হয় বাদ রইল। চারপাশে হেঁচকি নিয়ে অন্ধবিশ্বাসের কমতি নেই। এমনও বলতে শোনা যায়, চুরি করে খেলে নাকি হেঁচকি ওঠে! অবশ্যই এর সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও যোগ নেই। তা হলে, হেঁচকি কেন ওঠে?
আমাদের বুকের খাঁচাকে পেট থেকে আলাদা করেছে একটি মাংসপিণ্ড। যার নাম ডায়াফ্রাম বা বক্ষচ্ছদা। শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এই ডায়াফ্রামের। এই ডায়াফ্রামের আকস্মিক সংকোচনের কারণেই হেঁচকি বা হিক্কা শুরু হয়। প্রতিবার সংকোচনের ফলে ভোকাল কর্ড সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় বলে, হিক শব্দ তৈরি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডায়াফ্রামের স্নায়ুতে ব্যাঘাত হলেই এই আকস্মিক সংকোচন দেখা দিতে পারে। স্ট্রোক, মস্তিষ্কে টিউমার ও আঘাত বা প্রদাহ হলেও হেঁচকি হয়। ডায়াবেটিস ও কিডনির অসুখ, রক্তে লবণের তারতম্য ঘটলে, অ্যানেসথেশিয়ার পর এবং নানা রকম ঘুমের ওষুধ বা স্টেরয়েড ওষুধ সেবনেও এটি হতে পারে। এখন প্রশ্ন, বিব্রতকর এই হেঁচকি বা হিক্কার হাত থেকে পরিত্রাণ পাবেন কী করে?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনা থেকে সেরা যায়। না কমলে, ঠান্ডা জলে গার্গল করুন বা কয়েক ঢোঁক ঠান্ডা জল খেয়ে নিন, স্বস্তি পাবেন। ঘাবড়ে গেলেও কারও কারও হেঁচকি উঠতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে চুইংগাম চিবোলেই সেরে যাবে। মনোযোগ সরে যাওয়াতেই হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়। মুখে একচামচ চিনি দিলেও হেঁচকি বন্ধ হয়ে যায়। ঘরোয়া এমন অজস্র টোটকা রয়েছে। একটানা হেঁচকি উঠতে থাকলে, জিভে এক চামচ ভিনিগার দিন। এর টক স্বাদ আপনার হেঁচকি বন্ধ করবে। গরম জলে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলেও হেঁচকির হাত থেকে পরিত্রাণ মেলে। অনবরত হেঁচকি হতে থাকলে, ৪টি এলাচ ৫০০ গ্রাম জলে ফুটিয়ে তা ২০০ গ্রামে পরিণত করে, সেই জল পান করুন। ম্যাজিকের মতো কাজ করবে। আদা কুঁচি করে কেটে মুখে দিলেও রেহাই পাবেন। দু আঙলে দু-কানের ছিদ্র কিছুক্ষণ চেপে ধরলেও, হেঁচকি বন্ধ হয়ে যায়। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।