ঈদ মানে আনন্দ ঈদ মানে খুশি। তাই ঈদ নিয়ে আমাদের সবারই মাঝে আগ্রহ এবং প্রস্তুতির যেন শেষ নেই।
কোরবানি ঈদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলতে আমরা জানি পশু কোরবানি করা। তাই আমরা আমাদের স্বাধ্য মোতাবেক পশু কোরবানি করি। কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা পশু জবাই করার আগে ও পরে অনেক গুলো ভুল কাজ করে থাকি। সেই জন্য আজকে কোরবানির পশু জবাই করার আগে ও পরে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য এই পোস্ট দেওয়া হলো।
কোরবানির আগে:
১. পশু কেনার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, আগে থেকেই গরুর চামড়ায় কোনো গভীর ক্ষত চিহ্ন বা দাগ যেন না থাকে৷
২. ঈদের দিন সকাল থেকেই পশুকে শক্ত খাবার (খড়, ভুসি, কাঁচা ঘাস প্রভৃতি) দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পশুকে বেশি করে পরিষ্কার পানি, ভাতের মাড় ইত্যাদি তরল খাবার খাওয়াতে পারেন। এতে কোরবানির পর পশুর চামড়া ছাড়ানো অনেক সহজ হবে।
৩. পশু কোরবানির জন্য দক্ষ লোক নিয়োগ করতে হবে। নইলে অর্ধেক জবাইকৃত গরু মহিষ ঝাড়া দৌড় দিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। যার বাস্তব দৃশ্য ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই হয়ত দেখতে পেয়েছেন।
৪. কোরবানির জন্য শোয়ানো অবস্থায় পশুটিকে যেন টানাহেঁচড়া করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৫. কোরবানির পশু জবাই করার কাজে বড় এবং চামড়া ছাড়ানোর কাজে ধারালো মাথা ভোঁতা ছুরি ব্যবহার করতে হবে।
কোরবানির পরে:
১. প্রাণীর ধমনী যাতে পুরোপুরি কাটা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রাণী জবাইয়ের পর পুরোপুরি ব্লিডিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে পশু জবাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাংস কাটা শুরু করা করলে মাংসের ভেতর রক্ত থেকে যাবে। এ ধরনের মাংস মোটেওই স্বাস্থ্য সম্মত নয়, কারণ রক্তে অনেক ধরনের জীবাণু থাকতে পারে।
২. সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে চামড়ার ক্ষতি ও গুণগত মান নষ্ট হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে পশুর চামড়াকে রক্ষা করতে বর্তমান বিশ্বে সাধারণত ড্রাই ট্রিটমেন্ট, সল্ট ট্রিটমেন্ট ও ফ্রিজিং করে চামড়া সংরক্ষণ করা হয়।
৩. কোনো এলাকার লোকজন বিচ্ছিন্ন স্থানে কোরবানি না দিয়ে বেশ কয়েকজন মিলে একস্থানে কোরবানি করা ভালো।
৪. কোরবানির জায়গাটি যেন খোলামেলা হয়। আর জায়গাটি রাস্তার কাছাকাছি হলে বর্জ্যের গাড়ি পৌঁছানো সহজ হবে।
৫. কোরবানির পর পশুর রক্ত ও তরল বর্জ্য খোলা স্থানে রাখা যাবে না। এগুলো গর্তের ভেতরে পুঁতে মাটিচাপা দিতে হবে। কারণ রক্ত আর নাড়িভুঁড়ি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর যদি রক্ত মাটি থেকে সরানো সম্ভব না হয়, তা হলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৬. কোরবানির বর্জ্য পলিথিনে করে রেখে দিতে হবে, যাতে ময়লা পরিবহন দ্রুততার সঙ্গে করা যায়। যারা পলিথিন পাবেন না, তারা এ রকম পলিথিন কিনে ময়লা রাখতে পারেন।
৭. যে সব এলাকায় গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব নয় বা দেরি হবে, সেসব স্থানে বর্জ্য পলিথিনের ব্যাগে ভরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। পশুর হাড়সহ শক্ত বর্জ্যগুলোও পলিথিনে দিয়ে দেয়া ভালো।
৮. নাড়িভুঁড়ি বা এ জাতীয় বর্জ্য কোনোভাবেই পয়ঃনিষ্কাশন নালায় ফেলা যাবে না।
৯. যারা চামড়া কিনবেন, তারা কোনো বদ্ধ পরিবেশে চামড়া পরিষ্কার না করে এমন খোলামেলা স্থানে করতে পারেন, যেখানে ময়লা জমে দুর্গন্ধ হবে না। আর চামড়ার বর্জ্য অপসারণের জন্য জমিয়ে রাখতে হবে।
১০. সর্বশেষে কোরবানির পশুর বর্জ্য নিজের উদ্যোগে পরিষ্কার করাই ভালো।
ফলে সারাদিন পর যখন বিকালে কিংবা সন্ধ্যার পর বেড়াতে বের হবেন, দেখবেন দুর্গন্ধহীন কত ফুরফুরে আমেজ চারদিকে। আমাদের সচেতনতাই পারে কোরবানির পরে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে। আমরা যেন শুধু পশু কোরবানির মাধ্যমেই ত্যাগ শব্দটি সীমাবদ্ধ না রাখি। এই দিনের শিক্ষা যেন আমরা সারাজীবন ধরে রাখতে পারি।
বাংলানিউজলাইভ/শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত