শীত কালে গলা ব্যথা হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু ঠান্ডা লাগলেই গলা ব্যাথা বা টনসিলের ব্যাথা? যার হয় এর কষ্ট আসলে সেই বোঝে! কিন্তু তাই বলে এই রোগকে হেলা ফেলা করার কোন কারন নেই কারন একটু অসাবধানতাই সর্বনাশ ডেকে আনতে যথেষ্ট। আজ জেনে নিন গলা ব্যাথা হলে কি কি করনীয়।
- যদি কয়েকদিন যাবত এমন গলার ব্যাথায় আক্রান্ত হতে থাকেন তাহলে ভালো করে কিছু পরীক্ষা করিয়ে নিন। রক্তের হিমোগ্লোবিন, টিসি, ডিসি, ইএসআর ও প্রয়োজনে এসও টাইটার পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। আর যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকলে এসবের সঙ্গে ব্লাড সুগার টেস্টটা না হয় করিয়ে নিন।
* কষ্ট কি খুব বেশি হচ্ছে? মনে হচ্ছে গলার কাছে কিছু আটকে আছে? সঙ্গে কি শ্বাসকষ্ট হচ্ছে? তাহলে গলার আলট্রাসোনোগ্রাফি করে নিন। দেখুন টনসিলের পিছনে বা অন্য কোনও জায়গায় পুঁজ জমেছে কি না। তালুর নরম অংশকে বলা হয় সফট প্যালেট। সেখানে পানি জমে কোনো সমস্যা হলেও এই পরীক্ষা থেকে তা সহজে বোঝা যায়।
*২-৩ সপ্তাহের পুরোনো সমস্যা হলে হতে হবে আরো বেশি সচেতন। গলায় টিবি হলে ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়ার সঙ্গে কাশি থাকতে পারে। কখনও কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে, হতে পারে গলা ব্যথা। গলার স্বর ভেঙে যাওয়া, খাবারে অনীহা, শরীর খারাপ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গও পাশাপাশি থাকতে পারে। টিবি সন্দেহ হলে বুকের এক্সরে, রক্তের টিবি পিসিআর ও কফ কালচার ফর এএফবি করা হয়। এসব করাতে ভুলবেন না মোটেও।
* টিউমার বা ক্যান্সারের সূত্রপাত হলে খাবার আটকে যাওয়ার সমস্যা ছাড়া আর তেমন কিছু থাকে না। সেই সন্দেহ হলে আপার জিআই এন্ডোস্কোপি ও ফাইবার অপটিক ল্যারিঙ্গোস্কোপি করে দেখে নিন। প্রয়োজনে টিউমার থেকে টিস্যু তুলে তার বায়োপ্সি করে রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন।
টুকটাক গলাব্যাথা ছোট রোগ, তাই বলে সেটা নিয়ে দীর্ঘদিন বসে থাকবেন না। তাহলে আখেরে আপনাকেই ভুগতে হবে সবচেয়ে বেশি।
এই তো গেলো করনীয়, এখন দেখে নিন গলা ব্যাথা হলে তা সারাতে কিছু ঘরোয়া টোটকা
গার্গলঃ গবেষণায় পরিলক্ষিত যে, কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবন মিশিয়ে গার্গল করা, শুধুমাত্র গলার জীবাণুকেই ধ্বংস করে না, প্রদাহ ও ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। তাই এক কাপ হালকা গরম পানিতে আধা চা চামচ লবন মিশিয়ে দিনে দুই তিন বার গার্গল করা প্রয়োজন।
তরল খাবারঃ হাঁচি, কাশি ও গলার ভিতর প্রচুর তরন নিঃসরণের জন্য শরীর অনেকটাই পানিশুন্য হয়ে পরে। তাই প্রচুর পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। তবে অবশ্যই ঠাণ্ডা পানি বর্জন করা প্রয়োজন। গলা ব্যাথায় ধোঁয়া উঠা গরম সূপ দারুণ কাজে দেয়।
লজেন্সঃ মেনথল, ইউক্যালিপটাস বা ফেনলসমৃদ্ধ কিছু লজেন্স আছে, যা চুষার ফলে গলা ব্যাথা ও প্রদাহ কমে যায়। এগুলো মূলত ক্লোরোসেপটিক অর্থাৎ গলায় একটা আরামদায়ক অনুভূতি এনে দেওয়ার পাশাপাশি জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করে৷
চাঃ গলা ব্যাথায় দিনে দুই তিনবার গরম চা আমাদের অনেকটাই আরাম দিতে পারে। সেক্ষেত্রে গ্রিন টি বা হারবাল চা অনেক বেশী কার্যকর। চাইলে চায়ের মধ্যে লেবুর রস বা লবঙ্গজাতীয় জিনিস যোগ করুন, যা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে৷
বিশ্রামঃ যেকোনো অসুখে প্রজাপ্ত বিশ্রাম গ্রহন করলেই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠা যায়। তাই কাজ থেকে ছুটি নিন, অবকাশ যাপন করুন, দেখবেন খুব দ্রুত আপনার গলা ব্যাথা সেরে যাবে।
ওষুধঃ গলা ব্যাথায় প্যারাসিটামল বা বেদনানাশক ওষুধই যথেষ্ট। তবে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে গলায় স্ট্রেপটোকক্কাস সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লাগতে পারে৷ তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷