সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন,বজ্রপাত যেহেতু সাধারণত উঁচু কোন কিছুতে আঘাত করে, সেজন্য উঁচু গাছ হিসেবে তালগাছকেই তারা বেছে নিয়েছেন বজ্রপাত ঠেকানোর জন্য। তাদের ভাষায় বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকানোর জন্য এটাই সবচেয়ে কার্যকর স্থানীয় প্রযুক্তি। এর পাশাপাশি হাওর অঞ্চলে টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনাও সরকার নিয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এনিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশে বজ্রপাতে প্রায় দুশো মানুষ মারা যায়। বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে হাওর অঞ্চলের নয়টি জেলায়। বজ্রপাতে প্রচুর গবাদি পশুরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। হাওর জেলা সুনামগঞ্জের স্বরষতিপুর গ্রাম থেকে কৃষক এনামুল হক বলছিলেন,তাদের একটি মসজিদে সন্ধ্যায় নামাজের সময় বজ্রপাতে একসাথে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল ২০১১ সালে। সেই থেকে গ্রামটিতে বজ্রপাত নিয়ে আতংক তৈরি হয়েছে। বজ্রপাত ঠেকাতে উঁচু তালগাছকে খুবই কার্যকর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে
কিন্তু তাদের এলাকায় প্রতিবছর বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
বজ্রপাতে মানুষ এবং গবাদি পশুর মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বজ্রপাতের প্রবণতাও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার প্রশ্নে সরকারের ওপরও তাগিদ বাড়ছিল। এখন এসে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছে। আর তাতে মুল পদক্ষেপ হিসেবে দেশের ৬৪টি জেলায় তালগাছ লাগানো হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলছিলেন,বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে উঁচু গাছ হিসেবে তালগাছকে বেছে নেয়া হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন,থাইল্যান্ডে তাল গাছ লাগিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। সেখানকার বিশেষজ্ঞের পরামর্শও বাংলাদেশ নিয়েছে। দেশের একজন বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আসাদুল হক মনে করেন, বজ্রপাত যেহেতু উঁচু জায়গায় আঘাত করে, সে হিসেবে তাল গাছ মৃত্যু কমাতে সহায়ক হবে।
কিন্তু বজ্রপাতের আঘাত পাওয়া গাছটি নষ্ট হয়ে যাবে। সেখানে হাওর এলাকায় টাওয়ার নির্মাণ করা হলে স্থায়ী ব্যবস্থা হতো বলে তিনি মনে করেন।
সচিব শাহ কামাল অবশ্য জানিয়েছেন, ভিয়েতনামে টাওয়ার দিয়ে মৃত্যুর হার কমানো হয়েছে। বাংলাদেশ হাওর এলাকায় তালগাছের পাশাপাশি টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য ভিয়েতনামের বিশেষজ্ঞদের আলোচনা করা হচ্ছে।