ডায়েট করলেই ওজন কমে একেবারে ছিপছিপে হয়ে যাবেন, তাই মনে করেন বেশীরভাগ মানুষ। কিন্তু আসলেই কী ওজন কমানো এতোই সোজা? “ওজন কমানো” কথাটার মোটামুটি সমার্থক হিসেবে আরেকটা শব্দ আমাদের মাথায় চলে আসে, আর তা হলো “ডায়েট”।
শুধু ডায়েট করলেই হয়ে যাবে? না, ডায়েট করতে হবে নিয়ম মেনে। আর সেই সাথে আপনার জীবন থেকেও অস্বাস্থ্যকর কিছু অভ্যাস ছেঁটে বাদ দিতে হবে।
অনেক দিন ধরেই ডায়েট করে ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, বিভিন্ন রকমের ডায়েট রুটিন অনুসরণ করছেন অক্ষরে অক্ষরে অথচ আপনার ওজন কমছে না, বরং বাড়ছে মাঝসাঝেই। আসলে দেখা যায়, জীবনযাত্রায় আমাদের কিছু কিছু অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়।
এসব অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো আমাদের ডায়েট করার ইচ্ছাকে ফাঁকি দিয়ে ওজন বাড়ায়। এসব অভ্যাস থাকতে পারে আপনারও। তবে সুখবর হচ্ছে, এসব অভ্যাস দূর করতে পারলে ডায়েটের সুফল পেতে পারেন আপনি।
১) ঘুম কম হওয়া
ঘুম কম হলে শুধু ক্লান্তিই লাগবে না, বরং ক্ষুধাও লাগবে অতিরিক্ত। গবেষণাতেই দেখা গেছে ঘুমের অভাবে শরীরে ক্ষুধার জন্য দায়ী হরমোন বাড়ে। আপনি যতই সচেতন থাকুন না কেন, আপনি তখন কেবল মজার খাবার খেতেই ব্যস্ত থাকেন, এর পেছনে আপনার কতোটা ক্যালোরি গ্রহণ হচ্ছে তার দিকে খেয়াল থাকে না।
তবে ভালো খবর হলো, আপনার ঘুম ঠিকমতো হলে ওজন কমে, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়। প্রতি রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোটা জরুরী। তবে এটা প্রত্যেকের জন্য আলাদা হয় বটে।
২) অতিরিক্ত টিভি দেখা
মধ্যবয়সী নারীদের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, দৈনিক প্রতি ২ ঘন্টা অতিরিক্ত টিভি দেখার সাথে সাথে ওবেসিটির ঝুঁকি বেড়ে যেতে থাকে ২৩ শতাংশ। গবেষকেরা মনে করেন, টিভি দেখলে রুচি বেড়ে যায় এবং বেশি ক্যালোরির খাবার খাওয়ার ইচ্ছে বাড়ে।
এছাড়াও খেতে খেতে টিভি দেখার সময়ে আমরা অন্যমনস্ক থাকি বলে বেশি খাওয়া হয়ে যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে দৈনিক দুই ঘণ্টার বেশি টিভি না দেখাই ভালো।
৩) খাওয়ার সময়ে অন্য দিকে মনোযোগ থাকা
খাওয়ার সময়ে কতো কিছুই না আমরা করি। টিভি দেখি, টেক্সট করি, কথা বলি, ফেসবুক ব্যবহার করি অথবা অফিসের কাজ করি। এসব কাজ করতে গিয়ে আমাদের আসলে খাওয়া বেশি হয়ে গেলেও আমরা সেদিকে খেয়াল করি না মোটেই।
American Journal of Clinical Nutrition এর এক গবেষণায় দেখা যায়, খাওয়ার সময়ে কম্পিউটারে কার্ড গেম খেলতে খেলতে লাঞ্চ করলে তারা অন্যদের চাইতে ১০০ ক্যালোরি পর্যন্ত বেশি খেয়ে থাকে নিজের অজান্তেই। এ কারণে খেতে বসুন আয়োজন করে আর খাওয়ার দিকেই পুরো মনোযোগটা দিন।
৪) সপ্তাহে একবারের বেশি বাইরে খাওয়া
বাইরে খেতে গেলে আমরা সাধারণত ২০০ ক্যালোরি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। খাবারের পরিমাণ বেশি হওয়া, ফ্যাট বেশি হওয়া এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়ার ফলে এমন বেশি ক্যালোরি গ্রহণ হয়ে যায়। এর চাইতে বাড়িতে খাওয়া হলে অনেক কম ক্যালোরি খাওয়া হয় এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া হয়।
৫) ব্রেকফাস্ট বাদ দেওয়া
ব্রেকফাস্ট বাদ দেওয়াটা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার একটি বড় লক্ষণ। যারা সকালে ব্রেকফাস্ট বাদ দেন তারা সাধারণত ধূমপান করেন, মদ্যপান করে থাকতে পারেন এবং কম ব্যায়াম করেন। এছাড়াও আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা বেশ ভারী একটি নাশতা করে থাকেন সকালে, তারা অন্যদের চাইতে বেশি ওজন কমাতে সক্ষম হন।
৬) জুস ক্লেনজ ডায়েট
অনেকেই দুম করে অনেকটা ওজন কমানোর শর্টকাট হসেবে বেছে নেন এই ডায়েট। এমনকি অনেক সেলিব্রিটিও এই ডায়েট অনুসরণ করেন। আপনি যদি চিরতরে ওজন কমাতে চান তাহলে এই ডায়েট অনুসরণ না করাই ভালো।
কারণ এতে ওজন কিছু সময়ের জন্য কমে গেলেও আবার ফিরে আসতে পারে। আবার এই ডায়েট করার সময়ে আপনার মেজাজের ওপর পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। এছাড়া আপনি যদি বেশি প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ স্মুদি পান করেন তাহলে আসলে উপকার তেমন হবে না।
৭) ডায়েট কোলা ড্রিঙ্কগুলো পান করা
বিভিন্ন ধরণের ডায়েট কোলা আপনার জন্য মোটেই ভালো নয় এবং এগুলো পান করলে আপনার ডায়েটের উপকার না হয়ে বরং অপকার হবার সম্ভাবনাই বেশি। ডায়েট সোডা জাতীয় পানীয় পান করলে ওজন বাড়া, টাইপ টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানা যায় পার্দু ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায়।