এবার মালয়েশিয়ার শীর্ষ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালায়া ইউনিভার্সিটির ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ঝিনাইদহের মো. মাহফুজুর রহমান। মালয়েশিয়ার এক নম্বরে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ায় ২৭তম এবং বিশ্বে অবস্থান ১৪৬। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে মালয়েশিয়ার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতেও (এমএসইউ) কাজ করছেন মাহফুজুর। মালয়েশিয়াতেই উচ্চশিক্ষা নেওয়া মাহফুজুর পড়াশোনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর।
২০০৬ সালে মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে (আইআইইউএম) বিবিএ বিভাগে ভর্তি হন মাহফুজুর রহমান। ২০১০ সালে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন তিনি। ভালো ফলাফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র ওভারঅল, সেরা ছাত্র একাডেমিক (ফেকাল্টি অব ইকোনোমিকস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, আইআইইউএম) এবং সেরা ছাত্র বিবিএ বিভাগ সহ তিনটি পুরস্কার পান মাহফুজুর।
এ ছাড়া পুরস্কার হিসেবে মালয়েশিয়ার শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট পান তিনি। বিবিএ পড়ার সময় সবগুলো সেমিস্টারে ডিন (ভালো রেজাল্টের জন্য) তালিকাভুক্ত ছিলেন তিনি। তিনি ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড (উপাচার্যের পুরস্কার) পান।
ইন্টার স্টুডেন্টস রেসিডেন্ট কলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১০ এ আইআইইউএমের সেরা ৫ বক্তার একজন হন মাহফুজুর রহমান। তিনি ২০০৭-০৮ ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে বিবিএর ছাত্র থাকাকালে স্টুডেন্ট রেসিডেন্ট কলেজ ৫ (মাহাললা আলী)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এরপর ২০০৯-১০ সালে বিবিএ অ্যাসোসিয়েশনের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি।
এ ছাড়া তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে ২০০৮-০৯ সালে স্টুডেন্ট সারকেল ১ ও ২ এবং কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিটির স্টুডেন্ট ফ্যাসিলেটর ছিলেন। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত স্টুডেন্ট লার্নিং অ্যান্ড ইনহ্যান্সিং ইউনিটে শিক্ষকতা ও স্টুডেন্ট ফ্যাসিলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাহফুজুর রহমান পড়ালেখার পাশাপাশি মোটিভেশনাল স্পিকার, রিসার্চ অ্যাসিসটেন্ট, টিচিং অ্যাসিসটেন্টসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক কাজে জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালের ১০ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ তিনি ইংলিশ ক্যাম্পে স্টুডেন্ট ফ্যাসিলেটর হিসেবে থাইল্যান্ড যান।
বিবিএ শেষে মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে এনডাউমেন্ট ফান্ড (বৃত্তি) পান মাহফুজুর রহমান। বিবিএতে প্রথম বিভাগ থাকায় মাস্টার্স ছাড়াই মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্সে পিএইচডি করার সুযোগ হয় তাঁর। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রাইট স্পার্ক স্কলারশিপ পেয়ে পিএইচডি শুরু করেন মাহফুজ। ২০১৫ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
পিএইচডি করার সময় শিক্ষা গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১৪ সালে মালায়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সেন্টার (আইএসসি) একাডেমিক এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড পান মাহফুজুর রহমান। বাংলাদেশ স্টুডেন্ট নাইট (বিএসএন) ২০১৫-এ তিনি ‘বিএসএন একাডেমিক এ্যাওয়ার্ড ফর দা ক্যাটাগরি অব ডকটোরাল’ স্টুডেন্ট পান। একই সঙ্গে তিনি ম্যাক্সিস এবং হটলিংক ‘উইন টু মার্কেট’ আইডিয়া চ্যালেঞ্জ জেতেন।
মাহফুজুর রহমানের অনেক নিবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাঁর গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন। বর্তমানে তিনি বিয়েভিরিয়াল ফাইন্যান্স নিয়ে কাজ করছেন।
মাহফুজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নেপা ইউনিয়নের বাগাডাঙ্গা গ্রামে। তাঁর বাবা মো. আজিজুর রহমান (মুকুল) পেশায় একজন কৃষক এবং মা. দাউলাতুন্নেছা বেগম একজন গৃহিণী। দুই ভাই (মাসুম) ও এক বোনের (সীমা) মধ্যে তিনি সবার ছোট।
মাহফুজুর রহমান বলেন, একজন ব্যক্তি সঠিক মনোভাব, একাগ্রতা, সততা এবং এই বিশ্বাস নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করলে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। পারিবারিক অবস্থা, বাবা-মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা, জন্মস্থান যাই হোক না কেন তিনি সফল হবেনই।
মাহফুজুর রহমান আরো বলেন, ‘আমার মতো একজন সাধারণ গ্রামের ছেলে যদি মালয়েশিয়ার প্রথম সারির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের প্রতিটি ছাত্র, ছাত্রী এর চেয়ে ভালো কিছু করতে পারে।’