পালং শাক তো অনেক খেয়েছেন। কিন্তু টক পালং এর স্বাদ কি কখনো পেয়েছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে বেশ পরিচিত এই টক পালং। তাহলে দেখে নিন টক পালং সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য ও রান্না করার রেসিপি
টক পালং রেসিপি
১) প্রথমে পালং শাক ভালো করে ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিন।
২) একটা কড়াইয়ে সামান্য তেল দিয়ে তার উপর পালংশাক ঢেলে দিন।
৩) এর পর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। কিছুক্ষণ পর দেখবেন পালং শাক গলে গিয়েছে, তার পর পরিমান মত লবন এবং হলুদ দিয়ে ঢেকা দিন।
8)পালং গলে গেলে আগে থেকে ভেজে রাখা চিংড়ি মাছ ছেড়ে দিন। পালং শাক এ পানি কমে এলে উঠিয়ে রাখুন। এর পর কড়াইয়ে আবার সামান্য তেল দিয়ে সরিষা ফোঁড়ন দিয়ে পালংশাক ঢেলে দিন। অল্প আঁচে রান্না করুন ২-৩ মিনিট। একদম শুঁকিয়ে গেলে পাত্রে ঢেলে পরিবেশন করুন।
টক পালং শাকের উপকারিতা
টক পালং শাক খেলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি রোগ-ব্যাধি সারাতেও এই শাক বেশ উপকারি। যেমন-
১. টক পালং শাক শরীরের অন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে। অন্ত্রের ভেতরে জমে থাকা মল সহজে বের করে দেয়।
২. ডায়াবেটিস রোগীরা এই শাক পরিমাণমতো খেলে উপকার পাবেন।
৩. এর বীজের ঘন তেল কৃমি ও মূত্রের রোগ সারাতে সহযোগীত করে।
৪. টক পালং শাকের কঁচি পাতা ফুসফুস, কন্ঠনালীর সমস্যা, শরীর জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করে থাকে।
৫. টক পালং শাক শরীর ঠান্ডা রাখে। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই শাক খুবই উপকারি।
এছাড়াও এই শাক রক্ত পরিষ্কারক করে। রক্ত বৃদ্ধিও করে। এবং পোড়া ঘায়ে, ক্ষতস্থানে, ব্রনে বা কোথাও কালশিরা পড়লে টাটকা পালং পাতার রসের প্রলেপ লাগালে ভালোই উপকার পাওয়া যায়।
এ শাকের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত হচ্ছে। পুষা জয়ন্তী, কপি পালং, গ্রিন, সবুজ বাংলা ও টকপালং ইত্যাদি।
মাটি
আমাদের দেশে প্রায় সব ধরনের মাটিতে টক পালং শাকের চাষ করা যায়। তবে এঁটেল, বেলে দো-আঁশ মাটিতে এই শাক ভাল জন্মে।
জমি চাষ
ভাল করে ২-৩ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে।
সার ও পরিমাণ
গোবর- ৪০ কেজি
ইউরিয়া- ১ কেজি
টিএসপি- ৫০০ গ্রাম
এমপি- ৫০০ গ্রাম
প্রতি শতকে পালং শাকের জমিতে নিয়ম অনুযায়ী এই সকল সার প্রয়োগ করতে হবে।
সময়
টক পালং শাকের বীজ বপনের উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর- জানুয়ারি মাস। এই বীজ সারিতে ও ছিটিয়ে বপন করা যায়। বপনের পূর্বে বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজ বপনের পর অঙ্কুরোদগমে প্রায় ৭-৮ দিন সময় লাগতে পারে।
পরিচর্যা
ভাল ফলন পেতে হলে নিয়মিত টক পালং শাকের জমি পরিচর্যা করতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলেই তা তুলে ফেলতে হবে। এ শাকের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই সারের উপরিপ্রয়োগের আগে মাটির ‘জো´ অবস্থা বুঝে সেচ দিতে হবে। চারা রোপনের পর হালকা সেচ দেওয়া প্রয়োজন। গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য মাটিতে বেশি দিন রস ধরে রাখা এবং মাটিতে যাতে সহজে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেজন্য প্রতিবার পানি সেচের পর জমির উপরের মাটি আলগা করে দিতে হবে। বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পর প্রতি মাদায় ২টি করে চারা রেখে অতিরিক্ত চারা উঠিয়ে ফাঁকা জায়গায় রোপন করতে হয়।
পোকামাকড়
টক পালং শাকেমাঝে মাঝে পিঁপড়া, উরচুঙ্গা, উইপোকা এবং পাতা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আক্রমণ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে।
রোগ-বালাই
পালং শাকের প্রধান রোগের মধ্যে রয়েছে- গোড়াপচা রোগ, পাতার দাগ রোগ, পাতা ধ্বসা রোগ ইত্যাদি।
ফসল সংগ্রহ
বীজ বপনের এক মাস পর থেকে পালং শাক সংগ্রহ করা যায় এবং গাছে ফুল না আসা পর্যন্ত যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়।