হঠাত্ই ধরা পড়ল ডায়াবেটিস। সামনে রোজা। ভাবছেন, তাহলে কি রোজা রাখা যাবে না? সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে ডায়াবেটিসের রোগীরা এ সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলবেন। পবিত্র রমজানে স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তিত হবে ওষুধ বা ইনসুলিনের সময়সূচি ও মাত্রা।
ডায়াবেটিস রোগীরা কি রোজা রাখবেন?
এ সময় ক্যালরি এবং ওষুধের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দিতে পারে।তাই রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাত্ কমে বা বেড়ে যেতে পারে। এ জন্য রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য ডায়াবেটিসের রোগীদের দরকার প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ। এ সময় খাদ্য গ্রহণ, ব্যায়াম ও ওষুধের পরিবর্তন বিষয়ে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন ও আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেক রোগী তাঁর রক্তে শর্করার পরিমাণ, ডায়াবেটিসজনিত জটিলতার মাত্রা ইত্যাদি বিবেচনা করে নতুন নিয়মসূচির জন্য আগে থেকেই পরামর্শ করে নেবেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
রোজায় ডায়াবেটিসের রোগীরা কী করবেন প্রথম প্রস্তুতি হিসেবে জেনে নেওয়া উচিত যে আপনার শরীর রোজা রাখার জন্য উপযুক্ত কি না। যদি শর্করার মাত্রা খুবই অনিয়ন্ত্রিত থাকে, অর্থাত্ গত তিন মাসের মধ্যে মারাত্মক শর্করাস্বল্পতা বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া, শর্করার মারাত্মক আধিক্য বা কিটোঅ্যাসিডোসিস, হাইপার অসমোলার কোমা হওয়ার ইতিহাস থাকে, কিংবা শর্করাস্বল্পতার উপসর্গ সহজে টের পান না, তাহলে রোজা রাখা ঠিক নয়। ডায়াবেটিস ছাড়াও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন হূদেরাগ, কিডনি ও যকৃতের সমস্যা, সংক্রমণ ইত্যাদিতে আক্রান্ত হন, তবে আপনার রোজা না রাখাই উচিত। এই তালিকায় টাইপ ১ ডায়াবেটিস, গর্ভবতী ডায়াবেটিস রোগী ও যাঁরা ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন, তাঁরাও পড়বেন। অন্যদের মধ্যে যাঁরা কেবল খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমেই শর্করা নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন বা মেটফরমিন, ডিপিপি ৪ ইনহিবিটর বা গ্লিটাজন শ্রেণীর ওষুধ খান, তাঁরা বেশ নিরাপদ। আর যাঁরা ইনসুলিন বা সালফোনিলইউরিয়া ওষুধ ব্যবহার করেন, তাঁদের কিছুটা ঝুঁকি আছে। তাঁদের অবশ্যই নতুন করে ওষুধের মাত্রা ও সময় জেনে নিতে হবে।
‘ডায়াবেটিস দুই ধরনের নয়, বাস্তবে পাঁচ ধরনের রোগ !!
খাবার ও ব্যায়াম
রমজান মাসে আপনার ক্যালরির চাহিদা আগের মতোই থাকবে। কেবল খাদ্য উপাদান ও সময় পরিবর্তিত হতে পারে। এ সময় পানিশূন্যতার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত পানি, লেবুপানি, ডাবের পানি ও অন্যান্য চিনিবিহীন পানীয় গ্রহণ করে দৈনিক পানির চাহিদা পূরণ করতে হবে। ইফতারে একসঙ্গে অনেক না খেয়ে ধাপে ধাপে ভাগ করে খাবার খান। এতে হঠাত্ রক্তে শর্করা বাড়ার প্রবণতা কম হবে। সহজ শর্করা যেমন শরবত, মিষ্টি, জিলাপি ইত্যাদির পরিবর্তে জটিল শর্করা যেমন গম, চাল, ভুট্টা ও ডালের তৈরি খাবার বেছে নিন। প্রচুর তেল ও চর্বিযুক্ত ভাজা-পোড়া খাবার যেমন সমুচা, শিঙাড়া, কাবাব ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। এর পরিবর্তে আঁশযুক্ত খাবার যেমন কাঁচা ছোলা, কম তেল দিয়ে ছোলা ভাজা বা ছোলা, মটর বা ডাবরি তৈরি খাবার, চটপটি, চিড়া-দই, মুড়ি ও সালাদ খেতে পারেন। ইফতারে বা তার পর একটি বা দুটি ফল খেতে পারেন। সেহির অবশ্যই খেতে হবে এবং তা যথাসম্ভব দেরি করে খাবেন। সেহিরতে জটিল শর্করা বেশি রাখবেন। রোজা রেখে দিনের বেলায় ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি না করাই ভালো।
এই নিয়মগুলি মানলে ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে, দূরে থাকবে ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগ
রোজায় ওষুধ ও ইনসুলিন
রোজায় খাবারের সময়সূচি পরিবর্তনের সঙ্গে ওষুধ এবং ইনসুলিনের সময় ও মাত্রা অবশ্যই পরিবর্তিত হবে। সহজভাবে সকালের ওষুধ বা ইনসুলিন পূর্ণ মাত্রায় সন্ধ্যাবেলা ও রাতের ওষুধ বা ইনসুলিন অর্ধেক মাত্রায় শেষ রাতে ব্যবহার করা হয়। তবে এটি রক্তে শর্করার পরিমাণের ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। তাই নিজে নিজে পরিবর্তন না করে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো। রক্তে শর্করাস্বল্পতার আশঙ্কা থাকলে দীর্ঘমেয়াদি সালফোনিল ইউরিয়ার পরিবর্তে স্বল্পমাত্রার অন্য ওষুধ ও সাধারণ ইনসুলিনের পরিবর্তে আধুনিক অ্যানালগ ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যা আবিষ্কার করল জিন বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীর !
বিপদকে চিনে নিন
গবেষণায় দেখা গেছে, রমজান মাসে টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তে শর্করাস্বল্পতার ঝুঁকি প্রায় ৪ দশমিক ৭ ও ৭ দশমিক ৫ গুণ এবং শর্করার আধিক্যের ঝুঁকি ৩ ও ৫ গুণ বেড়ে যায়। রমজান মাসে গ্লুকোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে রক্তে শর্করা মাপলে রোজা ভাঙে না, তা ইসলামি চিন্তাবিদেরা আগেই রায় দিয়েছেন। তাই বিপদ এড়াতে দিনের বিভিন্ন সময় রক্তে শর্করা মাপুন। যদি দুপুর ১২টার আগেই বা দিনের যেকোনো সময় রক্তে শর্করা ৪ মিলিমোলের নিচে বা ১৬ দশমিক ৭ মিলিমোলের ওপরে থাকে, তবে বিপদ হতে পারে। তখন রোজা না রাখাই ভালো।