আপনি আছেন » প্রচ্ছদ » খবর

সমস্যা যখন চুল পড়া

টাক হওয়ার চিন্তায় নাকি টাক হয়। টাক হওয়ার আরো অনেক কারণ রয়েছে। তবে কারণ যেটাই হোক না কেন, অতিরিক্ত চুলপড়া কিন্তু আসলেই একটি বড় সমস্যা। মাথার চুল পড়া নিয়ে সঠিক জ্ঞানের অভাবে অনেকেই প্রতারণার শিকার হন। চুল পড়া নিয়ে আপনাদের জ্ঞানের পরিধিকে আরো একটু বাড়ানোর প্রয়াস চালানো হয়েছে আজকের লেখায়।

চুলপড়ার স্বাভাবিক ধরন
আপনার আয়ুষ্কাল কত বিধাতা তা নির্দিষ্ট করে না দিলেও মাথার চুলের আয়ুষ্কাল কিন্তু নির্দিষ্ট। স্বাভাবিক পরিবেশে মাথার চুল তিন বছর পর্যন্ত বাচে। তিন বছর আয়ুষ্কাল পূর্ণ হওয়ার পর আস্তে সে চুল ঝরে পড়ে। মাথার চুল ঝরে পড়া কিন্তু পাতা ঝরা বৃক্ষের মতো নয়। মাথার চুল প্রতিদিনই ঝরে পড়ে এবং প্রতিদিন ১০০টি চুল পড়া কিন্তু একেবারেই স্বাভাবিক। বুঝতেই পারছেন বালিশে কিংবা চিরুনির মধ্যে দু-চারটা চুল লেগে থাকলে বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই বরং এটাই স্বাভাবিক। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে শতকরা প্রায় দশ ভাগ চুল প্রতিদিন ঝরে পড়ার জন্য রেডি থাকে। যদি কোনো কারণে এ ঝরে পড়ার হার বেড়ে যায় তবেই সেটাকে চুল পড়া রোগ বলা যায়। উল্লেখ্য, প্রতিদিন যে পরিমাণ চুল ঝরে পড়ে সেটা আবার নতুন করে গজিয়ে ওঠে।

চুলপড়ার কারণ
নানা কারণে মাথার চুল পড়তে পারে। কিছু কারণে মাথার সম্পূর্ণ চুল পড়ে যায়। আবার কিছু কারণে শুধু মাথার নির্দিষ্ট অংশের চুল পড়ে।
. বংশগত কারণে অনেকের মাথার চুল পড়ে যায়। সোজা কথায় বংশে কারো টাক থাকলে আপনারও টাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে সাধারণত ২০ বছর বয়স থেকে আস্তে আস্তে চুল পড়া শুরু হয়। মহিলাদেরও বংশগত কারণে চুল পড়তে পারে। তবে তাদের তো আর টাক হয় না। পুরো মাথার প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ চুল পড়ে যায়। আশার কথা হলো মহিলাদের ক্ষেত্রে এ চুল পড়া ৪০-৪৫ বছর বয়সে পিরিয়ড সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হওয়ার পর শুরু হয়।
. তীব্র জ্বরের আক্রমণের পর মাথার চুল পড়ে যেতে পারে। অনেকের মধ্যে অবশ্য একটা ধারণা বদ্ধমূল আছে যে, টাইফয়েড জ্বরের পর চুল পড়ে যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক এবং খুব অল্প দিনের মধ্যে চুলের পরিমাণ আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
. গর্ভাবস্থায় অনেকের চুল পড়ে যেতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। স্বল্প সময়ে আবার নতুন চুল গজিয়ে ওঠে। আশার কথা হলো প্রথম প্রেগনেন্সিতে এমন সমস্যা দেখা দিলেও পরবর্তী প্রেগনেন্সিতে সাধারণত এমন হয় না।
. হঠাৎ করে অনেক ওজন কমে যাওয়া চুলপড়ার অন্যতম কারণ। বিশেষ করে যারা একদম ক্র্যাশ প্রোগ্রাম করে ডায়েটিং করেন এবং দ্রুত ওজন কমান, তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। অবশ্য এ ক্ষেত্রেও পরে আবার নতুন করে চুল গজিয়ে ওঠে।
. ক্যানসারের চিকিৎসা বিশেষ করে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির পর মাথাসহ সারা দেহের চুল পড়তে পারে। চিকিৎসা শেষে আবার নতুন চুল গজিয়ে ওঠে।
. থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি কারণেও মাথার চুল পড়তে পারে।
. কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলোতে পুরো মাথার চুল না পড়ে নির্দিষ্ট অংশের চুল পড়ে যায়। যেমন- অটোইমিউন রোগ, অতিরিক্ত টেনশন, ফাংগাল ইনফেকশন ইত্যাদি কারণে মাথার চুল পড়তে পারে।

চুল পড়া রোগে কার কাছে যাবেন
রাস্তাঘাটের সাইনবোর্ড কিংবা পত্রিকার লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট না হয়ে চুলপড়ার সমাধান পেতে একজন স্কিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তিনি রোগের ইতিহাস, রক্ত, চুল ইত্যাদির কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ঠিক করবেন আপনার চিকিৎসার সর্বোত্তম পন্থা কি? প্রয়োজনে তিনি অন্য কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে রোগীকে রেফার্ড করবেন।

চিকিৎসা
চিকিৎসা করার আগে অবশ্যই কারণ নির্ণয় করতে হবে। অনেক সময় কোনো কারণ খুজে পাওয়া যায় না। তবে নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। যদি ফাংগাসের কারণে হয়ে থাকে তবে অ্যান্টিফাংগাল দিতে হবে। যদি অটো ইমিউন রোগে হয়ে থাকে তবে স্টেরয়েড ইনজেকশন দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ২% মিনোক্সিডিল (MINOXIDIL) Bswjk]
ব্যবহার করেও আপনি আপনার টাক সমস্যা সমাধান করতে পারেন। এ ওষুধটি শুধু চুল পড়া বন্ধ করে না বরং কিছু নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ওষুধ দিনে দুবার ব্যবহার করতে হয়। তবে এর প্রধান সমস্যা হলো মাথার সামনের অংশে এটা তুলনামূলক কম কাজ করে। যদিও এ স্থানের টাক পুরুষদের বেশি বিব্রত করে। বর্তমানে এ ওষুধটি বেশি শক্তিসম্পন্ন ৫% হিসেবেও বাজারজাত হচ্ছে। বাজারে ফিনেসটেরাইড (FINASTERIDE) নামে আরো একটি ওষুধ পাওয়া যায়, যেটা মূলত চুল পড়া প্রতিরোধ করে। তাই যার মাথায় এখনো যথেষ্ট চুল আছে তার জন্য এটা ভালো ওষুধ হতে পারে। বয়স্ক মহিলারা এ ওষুধটি ব্যবহার করতে পারলেও গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটা নিরাপদ নয়।
বর্তমানে অত্যন্ত সফলভাবে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মাথার পেছন থেকে চুল নিয়ে সামনে বসিয়ে দেয়া হয়। অপারেশনের মাধ্যমে টাক অংশের চামড়া ফেলে দিয়ে চুলযুক্ত অংশ জোড়া লাগানোর ঘটনাও এখন বিরল নয়। হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের পর রোগীকে ফিনেসটেরাইড খেতে দেয়া হয় যাতে নতুন লাগানো চুল ঝরে না পড়ে। কৃত্রিম চুল কিংবা অন্য লোকের চুল টাক মাথায় বপন করেও বর্তমানে টাক সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে।

চুল পড়া বন্ধে বিউটি পার্লারে চিকিৎসা নেয়ার চেয়ে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার বেশি কার্যকর। কেননা পার্লারে নেয়া চিকিৎসা পদ্ধতি দ্বারা চুল পড়া সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে নিচে দেয়া সহজলভ্য কিছু পরামর্শের মাধ্যমে ঘরে বসে চুল পড়া রোধ করা যায়।

১. হালকা গরম তেল ব্যবহার। যে কোন প্রাকৃতিক তেল যেমন-জলপাই, নারিকেল তেল, কেনোলা তেল (বীজ জাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরি) হালকা গরম করে নিন। এরপর তেলের সঙ্গে হালকা পানি মিশিয়ে তালুতে ধীরে ধীরে মেসেজ করুন। একঘণ্টা মাথায় রেখে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

২. প্রাকৃতিক রস ব্যবহার। চুল পড়া রোধে রসুনের রস, পেয়াজ বা আদার রস মাথার তালুতে মাখুন। রাত্রে তা মাথায় দিয়ে ঘুমিয়ে থাকুন। সকালে ভালভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন।

৩. মাথা মেসেজ করা। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ মিনিট মাথার তালু মেসেজ করলে তা চুলের ফলিকল সক্রিয় রাখে। এর সঙ্গে ল্যাভেন্ডার বা বাদাম জাতীয় তেল মেখে মাথায় দিলে তালুর ফলিকলের সক্রিয়তা বাড়ে।

৪. এন্টিঅক্সিডেন্টের ব্যবহার। মাথার তালুতে হালকা সবুজ চা প্রয়োগ করে একঘণ্টা পর্যন্ত রাখুন। তারপর পানি দিয়ে চুল কিছুক্ষণ কচলান। সবুজ চাতে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।