আপনি আছেন » প্রচ্ছদ » খবর

১ ম্যাচ নিষিদ্ধ রবীন্দ্র যাদেজা

কলম্বোর মাঠে চতুর্থ দিনে নতুন কোনও নাটক উপহার দিতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। গত কাল কুশল মেন্ডিসের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের পরেও তাই ইনিংস ও ৫৩ রানে জিতে চা-পানের আগেই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলল ভারত। এখন দেখার এটাই যে, শেষ টেস্টেও জিতে বিদেশে হোয়াইটওয়াশের কৃতিত্ব অর্জন করতে পারেন কি না বিরাটরা। 

পরিসংখ্যানের দিক থেকে, নতুন মাইলস্টোন যদিও রবিবারেই এসে গিয়েছে। এই প্রথম শ্রীলঙ্কার মাটিতে ইনিংসে জিতল কোনও ভারতীয় দল। এ দেশে ভারত খেলতে এলেই সনৎ জয়সূর্য-রা এক সময় রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে রেকর্ডের পর রেকর্ড করতেন। এখন তার বদলা নেওয়ার সময়। আরও একটি বিরল রেকর্ডের দিকে এগোচ্ছেন কোহালি-রা। এই নিয়ে টানা আটটি টেস্ট সিরিজ তাঁরা জিতলেন। আর একটি সিরিজ জিততে পারলেই বিশ্ব রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন। এর পর এই শ্রীলঙ্কাই আবার ভারতে টেস্ট খেলতে আসছে অক্টোবরে। মানে রেকর্ড হচ্ছেই।  

মাঠে চতুর্থ দিনে নাটক না হলেও মাঠের বাইরে থ্রিলার চলল। আর সেটা চলল ম্যাচের সেরা রবীন্দ্র জাডেজাকে নিয়ে। ব্যাট হাতে ৭০ নট আউট এবং ম্যাচ থেকে সাত উইকেট নিয়ে ভারতকে জেতানোর প্রধান নায়ক পাল্লেকেলে সিরিজের শেষ টেস্টে খেলতে পারবেন না। বিপক্ষের ব্যাটসম্যানের দিকে বল ছোড়ার জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করেছে আইসিসি।

শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৮তম ওভারে এই ঘটনাটি ঘটে। তখন ব্যাট করছিলেন নাইটওয়াচম্যান মালিন্দা পুষ্পকুমার। বাঁ হাতি স্পিনার জাডেজার একটি বল তিনি খেলার পরে রান নেওয়ার কোনও চেষ্টা করেননি। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও ফলো-থ্রুতে বলটি কুড়িয়ে নিয়ে তাঁর শরীর লক্ষ্য করে ছুড়ে মারেন জাডেজা। ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী যা বিপজ্জনক এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।

মাঠের দুই আম্পায়ার জাডেজার বিরুদ্ধেই রিপোর্ট জমা দেন। এর পর ম্যাচ রেফারি জাডেজাকে শুনানিতে ডাকলে তিনি দোষ স্বীকার করে নেন। রান নেওয়ার চেষ্টা না করা সত্ত্বেও কেন পুষ্পকুমারের দিকে বল ছুড়লেন জাডেজা— এর কোনও সদুত্তর ভারতীয় শিবির থেকে উপস্থিত প্রতিনিধিরা ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসনকে দিতে পারেননি।

পুরনো অপরাধ থাকায় জাডেজা শ্রীলঙ্কায় এসেছিলেন তিন ‘ডিমেরিট’ পয়েন্ট সঙ্গে নিয়ে। গত বছর ইনদওরে পিচের উপর দিয়ে দৌড়ে যাওয়ার জন্য এই পয়েন্টগুলো তাঁর নামের পাশে বসেছিল। এর সঙ্গে বল ছোড়ার এক পয়েন্ট যোগ হয়ে চার পয়েন্ট হওয়াতেই নির্বাসনের সাজা মিলেছে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে আইসিসি-র সিদ্ধান্ত ভারতীয় শিবির গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছিল না। ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে কথা বলা হয় যে, শাস্তির বিরুদ্ধে আবেদন করা হবে কি না। ক্রিকেটের আচরণবিধি সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ব্যক্তিরা পরামর্শ দেন, এখন শাস্তির বিরুদ্ধে আবেদন করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যদি নিজেদের যুক্তি প্রমাণ করা না যায়, মিথ্যেবাদী প্রতিপন্ন হয়ে আরও বেশি শাস্তি জুটতে পারে। রাতের দিকে যা খবর, শাস্তি সম্ভবত মেনেই নেওয়া হবে।

তবে শ্রীলঙ্কা শেষ টেস্টে ঘূর্ণি পিচ বানাতে পারে বলে জাডেজার পরিবর্ত উড়িয়ে আনা হতে পারে ভারত থেকে। দলের সঙ্গে তৃতীয় স্পিনার হিসেবে চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব আছেন। পাল্লেকেলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের রহস্যময় বোলারের খেলা নিশ্চিত। তৃতীয় স্পিনার হিসেবে লেগস্পিার যুজবেন্দ্র চহ্বাল বা অফস্পিনার জয়ন্ত যাদবের মতো কাউকে নিয়ে আসা হতে পারে।  

জাডেজার নির্বাসিত হওয়ার খবর মাঠেও জানতেন না কোহালিরা। হোটেলে ফিরে সুইমিং পুল সেশন করে যে যাঁর ঘরে চলে গিয়েছিলেন। তখনই ভারতীয় দলের ম্যানেজার দুঃসংবাদ নিয়ে উপস্থিত হন। দ্রুত নিজের ঘর থেকে নীচে নেমে আসেন কোহালি। সুইমিং পুলে তখন কোচ রবি শাস্ত্রী সাঁতার কাটছিলেন। তাঁর সঙ্গে জরুরি আলোচনা শুরু হয়ে যায়।

অতীতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অধিনায়ক থাকার সময় আইসিসি-র সাসপেনশন নিয়ে বহু বার তাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন জগমোহন ডালমিয়া। এখন আইসিসি প্রেসিডেন্টই এক জন ভারতীয়— শশাঙ্ক মনোহর। কিন্তু ক্রিকেটে সেই জয়সূর্যদের লঙ্কা যেমন নেই, ক্রিকেট প্রশাসনেও সেই জগমোহন ডালমিয়াদের ভারতও আর নেই!