খরচের তুলনায় লাভ দ্বিগুন, তাই অন্যান্য ফসলের তুলনায় চাষীরা ঝুকছেন পেয়ারা চাষের দিকে। বিভিন্ন জেলায় চাহিদা বেশী থাকায় লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় এবার পেয়ারার আবাদ হয়েছে ৫০৬ হেক্টর জমিতে, এর মধ্যে কোটচাদপুর উপজেলাতেই আবাদ হয়েছে ২৫০ হেক্টর।
এছাড়া প্রতি বছরই বাড়ছে পেয়ারার আবাদী জমির পরিমাণ। সাধারনত, পেয়ারা গাছে গুটি আসার সময় পোকামাকড় বা রোগাক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে। তাই রোগ ও পোকার হাত থেকে রক্ষা এবং ফলকে রসালো করতে গাছে গুটি আসার পর সেগুলোতে ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ব্যাগিং পদ্ধতিতে প্রতিটি পেয়ারা গুটি পলি ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।
এভাবে বেশ কয়েকদিন রাখার পর ফল খাওয়ার উপোগী হয়। ক্ষেতে পেয়ারা গাছের চারা রোপনের ১৪ মাস পর থেকেই ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রথম বছর প্রতি বিঘা জমিতে পেয়ারা আবাদে খরচ ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা, পরবর্তি বছর থেকে খরচ কমে দাড়ায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ফলন ভাল হলে বছরে বিঘা প্রতি পেয়ারা হয় অন্তত ৫ শ’ মন। ভাল করে পরিচর্যা করা গেলে একটি গাছ থেকে একটানা ৭/৮ বছর পেয়ারা সংগ্রহ করা যায়।
ঝিনাইদহের কোটচাদপুরের নওদাগ্রামের সফল পেয়ারা চাষী আব্দুস সালাম জানান, ৩ বছর আগে ১ বিঘা জমি দিয়ে পেয়ারা চাষ প্রথম শুরু করেছিলেন তিনি। এখন পেয়ারা বাগান রয়েছে ১১ বিঘা জমিতে। বছরের শীত ও বর্ষা এই দুই মৌসুমে ক্ষেতের পেয়ারা বিক্রি করা হয়। আমার ক্ষেত থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭০ টাকা কেজি দরে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকার পেয়ারা বিক্রি করা হয়। এতে খরচ-খরচা বাদ দিয়ে লাভ থাকে অন্তত ৩ লক্ষ টাকা।
পেয়ারা চাষী আব্দুস সালাম আরো জানান, প্রথম যখন পেয়ারা চাষ শুরু করি তখন অনেকেই আমাকে পাগল বলতো। কিন্তু কারো কথায় আমি পিছপা না হয়ে এগিয়ে যেতে থাকি। এখন আমি পেয়ারা চাষ করে সফল। আমার লক্ষ প্রতি বছর ১ বিঘা জমি থেকে অন্তত ৩ লক্ষ টাকা লাভ করা। তবে আমার দেখাদেখি এলাকার অনেক মানুষই এগিয়ে আসছেন পেয়ারা চাষের দিকে।
অন্যান্য পেয়ারা চাষীরা জানান, এলাকায় পেয়ারা আবাদে অনেক চাষীই এগিয়ে আসছে। মোটামুটি সবাই সফল। কেননা পেয়ারা আবাদে অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশী লাভ হয়। পেয়ারা ব্যবসায়ীরা জানান, কোটচাদপুরের বাগান থেকে পেয়ারা কিনে সেগুলো ঝাকায় ভরে সরবরাহ করা হয় ঢাকা, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া সহ দেশের বিভিন্ন জেলার মোকামে। এতে প্রতি কেজি পেয়ারাতে খরচ বাদে নীট লাভ থাকে প্রায় ১০ টাকা।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল আহসান জানান, ঝিনাইদহের মাটি অত্যন্ত উর্বর, যা পেয়ারা চাষের জন্য উপযোগী। তাই জেলায় গেল ৪ বছরে পেয়ারার আবাদ বেড়েছে ব্যাপক হারে। এখানে থাই জাতের পেয়ারার চাষ বেশী হয়। এই পেয়ারা গুলা আকারে বড় হয়, ১ থেকে ২ পিসে এক কেজি ওজন হয়। যার দরুন চাষীরা পেয়ারা বিক্রি করে ভাল লাভ পেয়ে থাকে।
তিনি আরো জানান, যেহেতু এটা লাভবান ফসল, সে জন্য চাষীদেরকে উদ্বুদ্ধ করা অনেক সুবিধা হচ্ছে। এ জেলার পেয়ারার স্বাদ ভাল, তাই বিভিন্ন জেলায় এর চাহিদা রয়েছে অনেক। আগামীতে চাষীরা যাতে করে পেয়ারা আবাদে আরো বেশী আগ্রহী হয় সে জন্য তাদেরকে বালাইনাশক, সুষম সার ব্যবহার, ব্যাগিং পদ্ধতি সহ পেয়ারা উৎপাদনের বিভিন্ন কৌশল সম্বন্ধে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।