কার্লি ফ্যাশানের যুগ চললেও এখনও অনেকেই স্ট্রেইট চুলের ভক্ত আছেন যারা এখনও রিবনডিং করার জন্য পার্লারে ছুটে যাচ্ছেন বা স্ত্রেইটনার দিয়ে চুল সোজা করছেন। এক ঘেয়েমি কোঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো স্টাইল আপনার লুকটাকে বোরিং করে তুলছে, তাই যদি এমনটি হয় কোন রকম কেমিকেল বা হিট ছাড়াই আপনি পেয়ে যাচ্ছেন আপনার মনের মত হেয়ার স্টাইল তাহলে কেমন হয় বলুন তো? সহজলভ্য ঘরোয়া উপাদান যা আপনার হাতের কাছেই আছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে আজ দেখাবো কিভাবে আপনি আপনার চুলকে সাজিয়ে তুলবেন আপনার আকাঙ্ক্ষিত স্টাইলে!!
স্টেপ ০১ গোসল করে নিন।
স্টেপ ০২ যখন আপনার চুল ভেজা থাকবে – নিচু করে এবং টাইট করে একটি পনিটেইল করুন।
স্টেপ ০৩ ববি পিন ব্যবহার করুন যদি প্রয়োজন হয় – যদি আপনার চুল লেয়ার করা থাকে বা ব্যাংস করা থাকে তাহলে সবগুলো চুল ওই রাবার ব্যান্ডে আঁটবে না। তখন ববি পিন দিয়ে শক্ত করে চুলগুলো আটকে নিন।
স্টেপ ০৪ চিরুনি দিয়ে পনিটেইলে থাকা চুলগুলো ভালো ভাবে আঁচড়ে নিন যেন কোন জট না থাকে। আপনি লক্ষ্য করবেন চুল গুলো এখনি কেমন সোজা হয়ে আসছে। কিন্তু এটাই শেষ ধাপ নয়।
স্টেপ ০৫ প্রথম ব্যান্ডের আশে পাশে আরেকটি লুপ তৈরি করুন – প্রথম যে ব্যান্ডটা দিয়ে পনিটেইল করা হয়েছে তার থেকে ৩ ইঞ্চি নিচে আরেকটি ব্যান্ড দিয়ে আটকে দিন। আপনার চুলের দৈর্ঘের ওপর ব্যান্ডের সংখ্যা নির্ভর করবে। এভাবে পনিটেইলের শেষ পর্যন্ত রাবার ব্যান্ড দিয়ে চুল বাঁধতে থাকুন।
স্টেপ ০৬ এবার চুল টিকে শুকোতে দিন বা আপনার যদি তাড়া থাকে সেক্ষেত্রে হেয়ার ড্রাই ব্যবহার করুন।
স্টেপ ০৭ যদি আপনার মনে হয় চুল শুকিয়ে এসেছে তাহলে ব্যান্ডগুলো খুলে ফেলুন আর চুলগুলো ভালো ভাবে আঁচড়ে ছেড়ে দিয়ে রাখুন সম্পূর্ণ ভাবে শুকানোর জন্য।
দেখলেন তো কত সহজে আপনি পেয়ে গেলেন আপনার বহু আকাঙ্খিত সোজা চুল। যার জন্য না জানি কত টাকাই না খরচ করেছেন। এভাবে প্রত্যেকদিন গোসলের পর এটি করতে থাকুন আস্তে আস্তে দেখবেন আপনি পেয়ে যাচ্ছেন সোজা চুল।
এবার আসুন জানা যাক কিচেন ক্যাবিনেটে লুকিয়ে থাকা উপকরণ গুলোর মাধ্যমে আপনি কিভাবে পাবেন স্ট্রেইট চুল।
০১. নারকেল এবং লেবুঃ
তাজা নারকেলের দুধের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটিকে কয়েক ঘণ্টার জন্য ফ্রিজে সংরক্ষন করুন। একটি ঘন ক্রিমি লেয়ার দেখা যাবে পাত্রের উপরে। এই লেয়ারটাই দরকার চুল সোজা করার জন্য। পুরো চুলে এটি লাগিয়ে নিন এমনকি স্কাল্পেও লাগাবেন। ১৫-২০ মিনিট ধরে চুল টিকে স্টিম করুন। সব শেষে ধুয়ে ফেলুন সমস্ত চুল। এভাবে নিয়মিত করতে থাকলে আপনি ধীরে ধীরে দেখবেন আপনার চুল সোজা হতে শুরু করেছে।
০২. সেলেরিঃ
কয়েকটি ফ্রেশ সেলেরি পাতা ক্রাশ করে নিন এবং পানিতে মিশিয়ে দিন। এরপর পানির ভেতর হাত দিয়ে পাতাগুলো আরও ভালো ভাবে কঁচলে নিন যেন পাতার নির্যাস পানিতে মিশে যায়। তারপর মিশ্রণটি বোতলে সংরক্ষণ করে রাখুন ১দিন। এতে করে পাতার ভেতর চুল সোজা করার যে যে উপাদান আছে সব ভালো ভাবে ডেভেলপ করে। প্রতিদিন গোসলের আগে স্কাল্পে এই সলিউশন লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন তারপর শাম্পু করে ফেলুন। যারা বিদেশে থাকেন তাদের জন্য এই উপাদানটি খুঁজে পাওয়া কোন ব্যাপার না। কিন্তু আমার বাংলাদেশের সাজগোজ পাঠকদের হয়ত একটু সমস্যা হতে পারে। তাই আপনাদের অনুরোধ করবো আপনারা অন্য টিপস গুলো অনুসরন করুন।
০৩. দুধের পুষ্টিঃ
আমরা সবাই জানি দুধ ময়েশরাইজারের কাজ করে আর এটিই চুল সোজা করার জন্য সহায়ক। ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নেয়া দুধ নিন আধা কাপ এবং আধা কাপ পানি দুধের সাথে মিশিয়ে নিন। এবার একটা স্প্রে বোতলে মিশ্রণটি ভরে সমস্ত চুলে স্প্রে করুন। তারপর আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
০৪. ক্যাস্টর অয়েলঃ
ক্যাস্টর অয়েলে আছে চুলের গ্রোথ আর চুল সোজা করার গুনাগুণ। এই তেল চুলের স্কাল্পে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করুন, তারপর চিরুনি দিয়ে চুল বরাবর আঁচড়াতে থাকুন। যখন চুল আঁচড়াবেন তখন ব্লো ড্রাই করুন হাই হিটে। ব্লো ড্রাই করার পর চুলে যেন তেলতেলে ভাব না থাকে, চুল হতে হবে শুষ্ক। তারপর একটি ভেজা তোয়ালে দিয়ে চুল জড়িয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা ধরে। এটা চুলকে অতিরিক্ত হিট থেকে soothe করবে আর স্ট্রেইটনেস বজায় থাকবে।
০৫. মধু এবং দুধঃ
এই কম্বিশন শুধু ত্বকের জন্য নয় চুলের জন্য-ও ম্যাজিকের মত কাজ করে। এক চামচ মধুর সাথে এক কাপ দুধ মেশান। সঙ্গে কয়েকটি স্ত্রাবেরও ক্রাশ করে দিন। এই পেস্ট ২- ৩ ঘণ্টা চুলে লাগিয়ে রাখুন, তারপর ভালো মানের শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে সপ্তাহে ২-৩ দিন করুন সিল্কি , স্টেইট চুলের জন্য।
০৬. ফুলারস আর্থঃ
ফুলারস আর্থ বা মুলতানি মাটি তো আমরা সবাই চিনি। কিন্তু এতো দিন জানতাম এটি ত্বকের ডীপ ক্লিনজিং এর জন্য ব্যবহার করা হয় কিন্তু এটি চুলের যত্নেও অনন্য। এক কাপ মুলতানি মাটির সাথে একটি ডিমের সাদা অংশ, দুই চামচ চালের গুঁড়ো আর পানি মেশান। মিশ্রণটি অনেক পাতলা হতে হবে যাতে সমস্ত চুল কোট করা যায়। চুলে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রাখুন আর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে থাকুন। সপ্তাহে ২-৩বার এটি করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার কোঁকড়া চুল কেমন সোজা হয়ে আসছে।
০৭. সয়াবিন তেলঃ
অয়েল ট্রিটমেন্ট চুলের যেকোনো সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে ভালো উপায়। এক চা চামচ সয়াবিন তেলের সাথে দুই চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে নিন তারপর হাল্কা গরম করে স্কাল্পে দিন। এভাবে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। ভালো ফলাফল পাবেন।
০৮. বানানা হেয়ার প্যাকঃ
• দুটি ম্যাসড কলার সাথে দুই টেবিল চামচ মধু, দই এবং অলিভ অয়েল আর ১টি ডিমের সাদা অংশ মেশান। এই প্যাক পুরো চুলে লাগিয়ে মাথায় একটি শাওয়ার ক্যাপ পরে ফেলুন। তারপর ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবেও আপনার চুল অনেকটা সোজা দেখাবে।
• ৩ তেলের সংমিশ্রণ – উষ্ণ গরম অলিভ অয়েল, নারকেল তেল আর ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে আধা কাপ মিশ্রণ তৈরি করুন। এর সাথে আধা কাপ এলোভেরা জেল মেশান, তারপর ৬ ফোঁটা এসেন্সিয়াল অয়েল মেশান। চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ১-২ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।
অনেকদিন যাবত চুল সোজা করার জন্য আমাদের দেশের নারীরা কেমিক্যাল বা হিটের সাহায্য নিয়ে আসছেন। উপরে দেয়া টিপসগুলো ফলো করুন অবশ্যই উপকার পাবেন সঙ্গে বোনাস হিসেবে থাকবে আপনার চুলের নিরাপত্তার গ্যারানটি। তবে যথেষ্ট ধৈয্য ধরতে হবে।