ইসলাম বিষয়ক টেলিভিশন অনুষ্ঠান করে পরিচিতি পাওয়া জাকির নায়েকের সংগঠন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ)-এর ওয়েবসাইটটি বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই বুধবার রাতেই জানিয়েছিল ইন্টারনেটে মি. নায়েকের কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আবেদন জানিয়েছে ভারতের সন্ত্রাস দমন তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ।
গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন একজন আইএস জঙ্গী ঐ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ স্কলারশিপ হিসাবে পেয়েছিল, তারও প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে এনআইএ।
তবে ইউটিউব এবং ফেসবুকে মি. নায়েকের ভাষণ এবং অন্যান্য বক্তব্য এখনও দেখতে পেয়েছে বিবিসি।
আইআরএফের আইনজীবী মুবিন সোলকার বিবিসি বাংলাকে অবশ্য জানিয়েছেন, ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
তবে কেন্দ্রীয় সরকার আইআরএফকে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে যেভাবে নিষিদ্ধ করেছে, তা অযৌক্তিক এবং কখনই কাম্য নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আইআরএফ কখনই সন্ত্রাসবাদের স্বপক্ষে প্রচার চালায় না। ড. জাকির নায়েক স্পষ্টভাবে আইএস-কে ইসলাম বিরোধী সংগঠন বলে মন্তব্য করেছেন। তাহলে সেরকম একটা সংগঠনকে কেন আইআরএফ বা ড. নায়েক মদদ দেবেন? বলছিলেন মি. সোলকার।
এদিকে মি. নায়েকের ভাষণ নিয়মিত শোনেন এরকম বেশ কয়েকজন বিবিসি-কে বলেছেন, তারা মনে করেন কেন্দ্রীয় সরকার তাদের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা রূপায়ন করতেই জাকির নায়েকের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে।
আর আইআরএফের আইনজীবী মি. সোলকারের কথায়, আমরা অভিযোগপত্রের কপি এখনও পাই নি। সেটা পেলে কোনও আইনি প্রতিকার চাওয়া যায় কীনা, সেটা ভেবে দেখব।
ওদিকে এনআইএ বলছে, গত কয়েকদিনে আইআরএফের ২০টি ভবনে তল্লাশি চালিয়ে জাকির নায়েকের ভাষণের ডিভিডি-ভিডিও টেপ, সম্পত্তি আর লগ্নি সংক্রান্ত নথি, আর্থিক লেনদেনের খতিয়ান আর দেশ-বিদেশ থেকে আসা অনুদানের নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তল্লাশি চালিয়ে ১২ লক্ষ টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে ।
বুধবার রাতে জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তদন্তকারী এজেন্সিটি জানিয়েছে তারা প্রমাণ পেয়েছে যে এবছরের গোড়ায় গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গি আবু আনাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা স্কলারশিপ পেয়েছিল গতবছর অক্টোবর মাসে। ওই একই সময়ে সে সিরিয়ায় গিয়ে আই এস-এর হয়ে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। রাজস্থানের টঙ্কের বাসিন্দা আবু আনাসকে জানুয়ারি মাসে গ্রেপ্তার করে এনআইএ।
সন্দেহভাজন আই এস জঙ্গিকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে আইআরএফের আইনজীবী মুবিন সোলকারের বক্তব্য, প্রতি মাসে কয়েকশো এরকম আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়, আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ছাত্র-ছাত্রীরা যে প্রতিষ্ঠানে পড়তে যাচ্ছেন, তাদের নামে সরাসরি চেক পাঠানো হয়। কয়েকজনকে অবশ্য ভর্তি ফি তারা নিজেরা জমা দিয়ে দেওয়ার পরেও তথ্য যাচাই করে সেই টাকা রিইম্বার্সমেন্ট হিসাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।
এখন আবু আনাস নামের ওই ব্যক্তিকে সত্যিই আইআরএফ অনুদান দিয়েছিল কী না, সেটা আমরা যাচাই করতে পারছি না কারণ সব নথিপত্র এনআইএ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গেছে।
ভারতের মন্ত্রীসভা কিছুদিন আগে ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রস্তাব অনুমোদন করে। সেই মর্মে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গেজেট নোটিফিকেশনও জারি করেছিল।
তারপরেই এনআইএ সন্ত্রাস দমন আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে।
মুম্বাইতে দায়ের হওয়া ঐ মামলার অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছিল কেরালার কয়েকজন যুবককে জিহাদি মতবাদে দীক্ষিত করে তাদের ইসলামিক স্টেট নামে কথিত সন্ত্রাসী সংগঠনটিতে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল আইআরএফের কয়েকজন সদস্য।