কেন এই অবাঞ্ছিত লোমঃ
হরমোনের ভারসাম্যহীনতাই মূলত এর জন্য দায়ী। প্রত্যেক নারী ও পুরুষের শরীরে টেসটোসটেরন( testosteron) নামক এক ধরনের হরমোন রয়েছে। এই টেসটোসটেরন হরমোনকে পুরুষ হরমোন নামে অভিহিত করা হয়। পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদের শরীরেও এই টেসটোসটেরন হরমোন সামান্য পরিমাণ থাকে। কিন্তু মেয়েদের শরীরে এই হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকলে অথবা হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে মেয়েদের শরীরেও পুরুষের মত অধিক লোম গজাতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মেয়েদের এই শারীরিক সমস্যাটিকে হারসুটিজম (hirsutism) বলা হয়।
আরও কারণ গুলোর মধ্যে হেয়ার ফলিকলের এন্ড্রোজেন এর প্রতি সেনসিটিভিটি অন্যতম কারণ। এছাড়া ইনসুলিন রেজিসটেন্স ( insulin resistance) এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ( polycystic ovarian syndrome ) এর কারণেও হতে পারে। মানুষের শরীরে অনেক গ্রন্থি থাকলেও এর জন্য মূলত দু’টি গ্রন্থিকেই দায়ী করা হয়। তার একটি হলো অ্যাডরেনাল গ্রন্থি, যা কিডনির উপরিভাগে অবস্থিত। আর একটি হলো নারীর দেহের ডিম্বাশয় বা ওভারি। এই দু’টি গ্রন্থির কোনো রোগের কারণেই সাধারণত এ রকম অতিরিক্ত লোম গজিয়ে থাকে। অ্যাডরেনাল গ্রন্থি এবং ওভারির টিউমার অথবা ক্যান্সার হলে বা অ্যাডরেনাল হাইপারপ্লাসিয়া হলেও অবাঞ্ছিত লোম হতে পারে।
– যদি হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেয়া হয়, সেক্ষেত্রে ও হারসুটিজম হতে পারে।
– অনেক সময় জেনেটিক কারণেও হারসুটিজম হতে পারে।
রিস্ক ফ্যাক্টরঃ
– সাধারণত মেনোপজ হয়ে গিয়েছে বা হচ্ছে এই সময়টা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। মেনোপজ হল যখন মাসিক একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে হরমোন পরিবর্তন হয়ে যায়, তাই ঝুঁকি বেশি। তবে যে কোন বয়সেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
– অবিবাহিত মহিলাদের মাসিকের অনিয়মিত অবস্থাও এর সাথে বিদ্যমান থাকতে দেখতে হবে।
– বিবাহিত হলে অনিয়মিত মাসিকের সাথে সন্তান হওয়া বা না হওয়ার সম্পর্ক জড়িত থাকে। সেক্ষেত্রে ও রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিতে হবে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবেঃ
১) লোম খুব দ্রুত হারে বাড়তে থাকলে।
২) আরও কিছু পুরুষদের লক্ষণ বিদ্যমান থাকলে, যেমন-কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, ব্রণ হওয়া, পেশি বেড়ে যাওয়া, ব্রেস্ট ছোট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
৩) সাথে যদি পিরিয়ডের সমস্যা থাকে।
রোগ নির্ণয়ঃ
ব্লাড টেস্ট করে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। কিছু হরমোন লেভেল দেখতে হয়। যেমন –
– Testosterone
– Dihydroepiandrosterone sulfate (DHEA-S)
– Luteinizing hormone (LH)
– Follicle stimulating hormone (FSH)
– Prolactin
– 17-hydroxyprogesterone
চিকিৎসাঃ
১) বাড়িতে বসে চিকিৎসাঃ
এটি একটি দীর্ঘদিনের রোগ। চিকিৎসাও অনেক ধৈর্য নিয়ে করতে হয়। যদি বাড়তি ওজন থাকে, নিয়মিত ব্যায়াম করে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে। কম ক্যালরি যুক্ত খাবার খেতে হবে।
অবাঞ্ছিত লোম দূরীকরণঃ
– ব্লিচ করার মাধ্যমে লোম হালকা করা যায়, যাতে চোখে না পড়ে।
– শেভিং করা যেতে পারে, যদিও এতে লোমের গোঁড়া মোটা হয়ে যায়।
– ওয়াক্সিং করে লোম দূর করা যায়।
– হেয়ার রিমুভাল ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
– প্লাকিং করেও লোম তোলা যেতে পারে।
– থ্রেডিং করেও লোম থেকে সাময়িক ভাবে মুক্তি পাওয়া যায়।
০২) লেজার চিকিৎসাঃ
উপরের সব গুলো পদ্ধতি থেকে এই পদ্ধতি তুলনামূলক ভাবে স্থায়ী এবং কার্যকরী। তবে এক্ষেত্রে কয়েকবার চিকিৎসা নিতে হয়। এ পদ্ধতিতে লোমের গোঁড়ায় রশ্মি ফেলা হয় যাতে গোঁড়াটা নষ্ট হয়ে যায় এবং নতুন ভাবে গজাতে না পারে। এটি কিছুটা ব্যয়বহুল এবং দক্ষ চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়।
ইলেক্ট্রোলাইসিসঃ
এর মাধ্যমেও লোম স্থায়ীভাবে নির্মূল করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ইলেকট্রিক মেশিনের সাহায্যে হেয়ার ফলিকল নষ্ট করা হয়।
০৩) ম্যাডিকেশনঃ
জন্ম বিরতিকরণ পিল
এন্টি এন্ড্রোজেন ম্যাডিকেশন-যেমন স্পাইরোনোল্যাকটোন(spironolactone)। এই চিকিৎসাগুলো সময়সাপেক্ষ।
এভাবেই ঘরোয়া যত্ন, ওজন কমানো, খাদ্যাভ্যাস, লোম অপসারণ এবং চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে আপনি সহজেই মুখের অবাঞ্ছিত লোম থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- সাজগোজ