শিশুর উচ্চতা নিয়ে চিন্তিত? অপুষ্টি, শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকা, জিনগত ইত্যাদি কারণে সাধারণত মানুষের উচ্চতা কম হয়। একেবারে শিশু বয়স থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত বয়সে মানুষের উচ্চতা সাধারণত বৃদ্ধি পায়। এই সময়টিতে কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে শিশুর উচ্চতা বাড়ানো যায়। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে প্রাকৃতিকভাবে উচ্চতা বাড়ানোর কিছু পরামর্শ।
বংশগতির পাশাপাশি উচ্চতা ডায়েটের উপরও নির্ভর করে থাকে অনেকখানি। কিছু খাবার আছে যা আপনার সন্তানের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলো রাখুন।
১। ডিম - প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আপনার সন্তানকে লম্বা করতে। প্রতিদিন একটি ডিম খাদ্যতালিকায় রাখুন। তা সিদ্ধ হতে পারে আবার ওমলেট করেও খাওয়াতে পারেন।
২। দুধ - প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, মিনারেলসহ অনেকগুলো ভিটামিন পাওয়া যায় এক গ্লাস দুধে। ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করে তোলে। আপনার শিশুটি যদি ২ বছরের নিচে হয় তবে ফুল ক্রিম দুধ খাওয়াবেন। দুধে থাকা ফ্যাট তার শরীর এবং মস্তিষ্কের জন্য বেশ উপকারী। টকদই এবং পনির দুধের পরিবর্তে খাওয়াতে পারেন।
৩। সয়াবিন - সয়াবিন আপনার শিশুর হাড় এবং পেশি মজবুত করে তোলে। এর সাথে এটি উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে থাকে। সয়াবিন সবজির মত করে রান্না করে আপনার শিশুকে খাওয়াতে পারবেন।
৪। মুরগির মাংস - মুরগির মাংস প্রায় সব শিশুর অনেক পছন্দ। খাবারের তালিকায় এই খাবারটি রাখুন। প্রোটিন সমৃদ্ধ এই খাবারটি তাদের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। তবে প্রতিদিন মুরগির মাংস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি না করাই ভাল।
৫। পালং শাক - পালং শাককে সুপার সবজি বলা হয়ে থাকে। এটি আপনার শিশুর হাড় মজবুত করার পাশাপাশি আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে। আয়রন এবং ক্যালসিয়াম শিশুকে লম্বা করতে সাহায্য করে থাকে।
৬। গাজর - ভিটামিন এ সমৃদ্ধ এই সবজিটি প্রোটিন সমন্বয? করতে সাহায্য করে। গাজর রান্না করে খাওয়ার চেয়ে কাঁচা খাওয়া বেশ উপকারী। কাঁচা গাজর সালাদ অথবা রস করে আপনার শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
৭। ফল - ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সবাই জ্ঞাত। ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ ফল যেমন মিষ্টি আলু, আম, পেঁপে, টমেটো, কলা, পিচ ফল ইত্যাদি উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। এই ফলগুলো নিয়মিত আপনার শিশুর খাদ্যতালিকায় রাখুন।
ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যগ্রহণ - শিশুদের ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যগ্রহণ তাদের উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুধ, দুধ থেকে তৈরি খাবার, তাজা জুস, সবজি রাখা জরুরি। দুধ কেবল সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকে দেখভাল করবে না, এর মধ্যে থাকা প্রয়োজনীয় মিনারেলস, যেমন ক্যালসিয়াম-এগুলো হাড়ের বৃদ্ধিকে ভালো রাখবে। তাই দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পনির, দই ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাবার রাখতে পারেন।
পানি- ক্যাফেইন, কার্বোনেট জাতীয় খাবার থেকে শিশুকে দূরে রাখুন। প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি পান করান। পানি পান শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরের বিপাক ক্ষমতা বাড়ায় এবং হাড়ের বৃদ্ধিতে কাজ করে।
ঘুমানো - এটা প্রমাণিত যে ঘুমন্ত অবস্থায় শরীরের বৃদ্ধি হয় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম টিস্যুকে সতেজ করে। তাই বাড়ন্ত শরীরে ঘুম খুব জরুরি। অন্তত আট থেকে ১১ ঘণ্টা গভীর ঘুম শরীরের উচ্চতা বাড়াতে প্রয়োজন।
সহজ ব্যায়াম- শিশুকে সারাদিন পড়ার টেবিলে বসিয়ে না রেখে ব্যায়াম এবং খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করুন। ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল, ভলিবল, টেনিস, সাঁতার শেখাতে পারেন। এ ছাড়া কিছু স্ট্রেচিং (stretching) ব্যায়াম করাতে পারেন। যেমন: হ্যাঙ্গিং বারস, স্কিপিং রোপস- এগুলো শরীরকে সক্রিয় করতে কাজ করবে।
ইয়োগা বা যোগব্যায়াম - সঠিক শ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ দূর করে এই ব্যায়াম শরীরের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এ ধরনের শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম শিশুকে শেখান। এ ছাড়া কিছু ইয়োগা রয়েছে যা শরীরকে সঠিকভাবে বাড়তে সাহায্য করে। তাই ফিটনেস প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে উচ্চতা বাড়বে এমন ইয়োগা প্রশিক্ষণ শিশুকে করাতে পারেন।