সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট মেয়েটির এক্স-রে প্লেট দেখে চমকে উঠেছেন ডাক্তারেরা। বুক থেকে তলপেটে বিঁধে রয়েছে সাতটি ইঞ্চি চারেকের সুচ! কিডনি, লিভার, খাদ্যনালীতে ফুটো! ভাঙা দু’টি হাতও। যদিও বাচ্চাটির মা মুখ না খোলায় কেন পুরুলিয়ার নাবালিকার এই দশা, তা শনিবারেও স্পষ্ট হয়নি জেলা পুলিশের কাছে। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, ‘‘শিশুটির লিভারে বিঁধে থাকা সুচ বার করতে গেলে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই ওকে এসএসকেএম-এ পাঠানো হয়।’’
বিকেলে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইন্টেসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) ওই শিশুকে ভর্তি করানো হয়। এসএসকেএম সূত্রে খবর, অস্ত্রোপচারের ধকল এড়িয়ে সুচগুলি বার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী জানান, মনে করা হচ্ছে, শিশুটির মা ‘ট্রমা’য় রয়েছেন। তাঁরও চিকিৎসা করতে বলা হয়েছে এসএসকেএম-কে। রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘শিশুটির মা কেন চুপ করে রয়েছেন, তা দেখা হচ্ছে।’’
মঙ্গলবার জ্বরের উপসর্গ নিয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ওই শিশুকে ভর্তি করানো হয়। তার শরীরে অসংখ্য ক্ষত দেখে খটকা লাগে ডাক্তারদের। জেলা চাইল্ডলাইনও খোঁজখবর শুরু করে। চাইল্ডলাইনের কর্মীদের কাছে মেয়েটির মা অভিযোগ করেন, পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামে যে বাড়িতে থেকে তিনি পরিচারিকার কাজ করতেন, সেই গৃহকর্তাই তাঁর মেয়ের উপরে অত্যাচার করেছে। শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করাতেও সে পুরুলিয়ায় এসেছিল। হইচই হতেই বেপাত্তা হয়। শুক্রবার ওই গৃহকর্তা সনাতন গোস্বামীর (ঠাকুর) বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের হয়। শুক্রবার বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো হয় শিশুটিকে।
কিন্তু কেন এমন অত্যাচার করা হয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। শনিবার ওই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, বছর বাষট্টির সনাতন অবসরের পর থেকে ‘ঝাঁড়ফুক, বশীকরণ’ করত। জেলা চাইল্ডলাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘তন্ত্রমন্ত্রের নামে শিশুটির শরীরে সুচ ফোঁটানো হয়ে থাকতে পারে। আবার বিকৃত মানসিকতা থেকেও লোকটি এমনটা করে থাকতে পারে।’’ যদিও এ দিন শিশুটির মা দাবি করেছেন, ‘‘কবে মেয়েকে সুচ ফোটানো হয়েছে জানি না। বৈশাখ মাস থেকে মেয়ের পেটে যন্ত্রণা হচ্ছিল। বাড়ির মালিক বলেছিল, ভেড়ার দুধ খাওয়ালে ঠিক হয়ে যাবে। সেই ভরসাতেই ছিলাম।’’ পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ চলছে অভিযুক্তের। ধরা পড়লেই অত্যাচারের কারণ বোঝা যাবে।’’